দেশে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে রাজনীতির মাঠ। সেপ্টেম্বর থেকে আওয়ামী লীগ সারা দেশে নির্বাচনী যাত্রা শুরু করেছে। গতকাল সোমবার থেকে ঢাকা মহানগরীতে ৭ দিনব্যাপী নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেছে দলটি। কেন্দ্রীয় নেতারা ৪টি দলে ভাগ হয়ে রাজধানীর ৪টি স্পট থেকে এ গণসংযোগ কর্মসূচি শুরু করেন। কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকেও সাংগঠনিক ও নির্বাচনী সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি আসনেই আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও পুরোদমে গণসংযোগ শুরু করেছেন। প্রতিদিনই থাকছে বিভিন্ন কর্মসূচি। নির্বাচনী মাঠ এখন ক্ষমতাসীন দলের প্রচারণায় মুখর।
এদিকে দীর্ঘদিন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে খুব একটা কর্মসূচি পালন করতে দেখা না গেলেও আগামীকাল থেকে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গত রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
৩০ আগস্ট আকাশপথে ঢাকা থেকে সিলেটে যাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী যাত্রা। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর ট্রেনযোগে উত্তরাঞ্চলের জেলা নীলফামারীর পথে দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী যাত্রা হয়। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর সড়কপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের পথে ২ দিনব্যাপী যাত্রা করেন দলটির নেতারা। ২৯ সেপ্টেম্বর লঞ্চযোগে বরিশাল যাত্রার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে সেটির তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব নির্বাচনী যাত্রায় নেতৃত্ব দেন। দলের কেন্দ্রীয় বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এ যাত্রায় অংশ নেন। এ তিনটি সফরে প্রায় ২৫টি পথসভা ও সমাবেশ করেন তারা। প্রতিটি সমাবেশেই মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
গত শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে একটি কর্মিসভা থেকে তিন বিভাগে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। ৯ অক্টোবর রাজশাহী, ১০ অক্টোবর নাটোর ও ১৩ অক্টোবর খুলনায় বিভাগীয় সমাবেশের পর ঢাকায় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের ঘোষণাও দেয়া হয়।
এদিকে গতকাল থেকে রাজধানীর ৪টি স্থানে ৭ দিনের নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। ঢাকায় এ কর্মসূচি চলবে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এসব গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় এমনকি ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়েও স্থানীয় নেতাদের এ কর্মসূচি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের নেতৃত্বে ওয়ারী থানার ৩টি ওয়ার্ড, ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে গুলশান-২, জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর এবং আবদুর রহমানের নেতৃত্বে শান্তিনগর এলাকায় গণসংযোগ কর্মসূচির যাত্রা শুরু হয়। এর মধ্যে গুলশান ও শান্তিনগরের গণসংযোগে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অংশ নেন।
রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য প্রয়োজনে শয়তানের সঙ্গে জোট করবে বিএনপি দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র রায়ের এমন মন্তব্যের পাল্টা জবাবে গুলশানে ওবায়দুল কাদের বলেন, শয়তানের সঙ্গে জোট করে তারা, যারা নিজেরাই শয়তান। দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণসংযোগ কোনো প্রার্থীর নয়, গণসংযোগ হবে নৌকার। সব ওয়ার্ড মহানগর জেলা উপজেলা ইউনিয়নে শুরু হচ্ছে এই কর্মসূচি। ক্যামেরার সামনে লোক দেখানো গণসংযোগ করবেন না। বিএনপির সাত দফা সম্পর্কে তিনি বলেন, তাদের এই সাত দফা দাবি অযৌক্তিক, অবাস্তব এবং কোনো কোনোটি সংবিধানবিরোধী।
গতকালের গণসংযোগ কর্মসূচিতে আরো অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএম মোজাম্মেল হক, এ কে এম এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
এদিকে সপ্তাহব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানের নেতৃত্বে বেলা ১১টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকা, জাহাঙ্গীর কবির নানকের উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্স ও আশপাশ এলাকা, বিকেল ৪টায় মাহবুব-উল আলম হানিফের নেতৃত্বে ধানমন্ডিস্থ কলাবাগান ও ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চক্কর এলাকায় গণসংযোগ কর্মসূচি চালানো হবে।
কাল থেকে মাঠে নামবে বিএনপি : এদিকে আগামীকাল বুধবার দেশের প্রতিটি জেলায় সমাবেশ কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি ও ৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মহানগরগুলোতে সমাবেশ ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচনের পূর্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করলেও দলটির নেতারা এটিকে নির্বাচনী মাঠে নামার প্রাথমিক কর্মসূচি বলেই মনে করছেন। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে আরো কর্মসূচি আসবে বলেও সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়। নির্বাচনের আগে বিএনপির এসব কর্মসূচিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপি আওয়ামী লীগেরও আগে থেকে নির্বাচনী কর্মকান্ড শুরু করেছে। তারা রাস্তায় রাস্তায় লিফলেট বিতরণ করছে। প্রার্থী তালিকা চ‚ড়ান্ত করেছে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন কিন্তু চুপ করে বসে নেই। সবাই নির্বাচনী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে যে কর্মসূচি তারা ঘোষণা করেছে এটাও নির্বাচনে যাওয়ারই একটা অংশ। তারা নির্বাচনে আসবে।কাগজ প্রতিবেদক :