বিশ্ব হার্ট দিবস আজ। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এ দিনটি। এবারের প্রতিপাদ্য ‘My Heart, Your Heart’। তবে শুধু একদিনের উৎসব-আয়োজন ও জনসচেতনতা হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য যথেষ্ট নয়, চাই বছরের প্রতিটি দিনের জন্য অঙ্গীকার ও কর্মপন্থা। যার দ্বারা হৃদরোগ মোকাবিলা করে সুস্থ হৃদয় নিয়ে আমাদের জীবনযাপন অব্যাহত রাখতে পারব। হৃদরোগ চিকিৎসার পদ্ধতি ও প্রতিরোধের উপায় জানতে কার্ডিওলজিস্টদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত লিখেছেন — শামছুল হক রাসেল
হৃদরোগীদের জন্য সব খাবার তেল ভালো নয়। যে তেলগুলো স্বাস্থ্যকর সেগুলো হলো— সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, অলিভ অয়েল এবং যে তেলগুলো হৃদরোগীর জন্য ক্ষতিকর তা হলো— পামঅয়েল, নারিকেল তেল ও পাম কার্নেল।
—অধ্যাপক ডা. রাকিবুল ইসলাম লিটু
ডান পায়ের কুচকির কাছে রক্তনালি আছে যার নাম Femoral Artery, এর মাধ্যমে একটা ইনজেকশন নিডিলের যে ছিদ্র থাকে সেই ছিদ্রের মাধ্যমে Coronary Artery এর কোথায় ব্লক আছে সেটা নির্ণয় করা যায়।
— ডা. আমিরউজ্জামান খান
হার্টের রক্তনালিতে ব্লক হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তবে অন্যতম কারণগুলো হলো— ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা (LDL. Triglyceride, Total Cholesterol) বেশি অথবা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা (HDL) কম, পরিবারে হার্ট অ্যাটাক রোগের ইতিহাস। কারণগুলোর কোনোটি না থাকলে শুধু বয়স বৃদ্ধির (পুরুষের ক্ষেত্রে ৪৫ ও নারীদের ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে) কারণেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। অন্যদিকে, আমরা যদি হৃদরোগ নিয়ে সতর্ক হই তাহলে প্রাথমিক অবস্থা থেকেই এ রোগ আয়ত্তে আনা সম্ভব। হৃদরোগ নিয়ে এসব কথা জানালেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, খাবারে তেলের পরিমাণ কমাতে হবে। বাদ দিতে হবে অতিরিক্ত চর্বি। এ ছাড়া ধূমপান পরিহার করতে হবে। অন্যথায় হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়তেই থাকবে। কার্ডিওলজিস্টদের মতে, যাদের হৃদরোগ রয়েছে কোনো অবস্থাতেই তারা ধূমপান করতে পারবে না (এমনকি এক পিস সিগারেটও না)। অতএব ধূমপানকে অবশ্যই পরিহার করতে হবে। আর ডায়াবেটিক রোগীদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। ডায়াবেটিক রোগীদের অনেকের হার্ট অ্যাটাকের সময় বুকে ব্যথা নাও হতে পারে। এ রকম রোগী হঠাৎ করে ঘামতে শুরু করেন এবং রক্তচাপ কমে যায়। এ অবস্থা মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কিনা নিরূপণ করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা সুস্থ জীবনের লক্ষ্য নিয়ে আমাদের বাঁচতে হবে। এদিকে, হৃদরোগীদের জন্য সব খাবার তেল ভালো নয়। যে তেলগুলো স্বাস্থ্যকর সেগুলো হলো— সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, অলিভ অয়েল এবং যে তেলগুলো হৃদরোগীর জন্য ক্ষতিকর সেগুলো হলো— পামঅয়েল, নারিকেল তেল ও পাম কার্নেল। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের কার্ডিওলজিস্ট এবং প্যাশেন্ট ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রাকিবুল ইসলাম লিটু বলেন, ‘এবারের প্রতিপাদ্য-‘My Heart, Your Heart’। অর্থাৎ আমি নিজে যেমন হার্টের জন্য সচেতন তেমনি অন্যের হার্টের জন্যও সমদরদি হতে হবে। নিজের পাশাপাশি অন্যের হৃদরোগ নিয়েও যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোলেস্টেরল দুই রকম হয়। একটি হলো LDL বা খারাপ এবং অন্যটি HDL বা ভালো কোলেস্টেরল। রক্তে LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা ১০০ মিলি গ্রাম/DL’র নিচে রাখতে হবে। আর যাদের ধমনীতে রিং লাগানো আছে বা বাইপাস করা আছে তাদের জন্য ধূমপান সর্বনাশা। ধূমপানে বাইপাস ও রিং হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সাধারণ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার ৫-১০%। আর হঠাৎ রিং বন্ধ হয়ে মৃত্যুর হার ৪০-৪৫%।’ অন্যদিকে, অনেকের ধারণা দামি অথবা মূল্যবান স্ট্যান্ট (রিং) লাগালে রোগী তুলনামূলক বেশি দিন বাঁচেন। আসলে এ বিষয়টি উপস্থাপনায় ভুল রয়েছে। অর্থাৎ মেডিকেটেড বা মূল্যবান রিং লাগালে সেটার কার্যক্রম দীর্ঘস্থায়ী হয়। আর নন-মেডিকেটেড রিংয়ে এন্টিব্লক কোনো মেডিসিন না থাকায় তার কার্যক্রম মেডিকেটেডের তুলনায় কিছুটা কম। এ কারণে সাধারণ রোগীরা বলে থাকেন মেডিকেটেড বা দামি রিং লাগালে বেশি দিন বাঁচা সম্ভব। Angiogram বা Coronary Angiogram সম্পর্কে জানতে চাইলে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট আমিরউজ্জামান খান বলেন, Angiogram বা Coronary Angiogram হৃদপিণ্ডের Coronary Artery Disease বা Ischemic Heart Disease এক পরীক্ষা। এ পরীক্ষার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের রক্তনালি যার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের মাংসপেশি অক্সিজেন ও নিউট্রিশন পায়, যার নাম Coronary Artery। সেই Coronary Artery এর মধ্যে কয়টি ব্লক আছে, ব্লকগুলোর অবস্থান কোথায় এবং ব্লকের Percentage কত সেটা নির্ণয় করা হয়। Angiogram সাধারণত ডান পায়ের কুঁচকির কাছে একটা রক্তনালি আছে যার নাম Femoral Artery, এ Femoral Artery এর মাধ্যমে একটা ইনজেকশন নিডিলের যে ছিদ্র থাকে সেই ছিদ্রের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের Coronary Artery এর কোথায় ব্লক আছে সেটা নির্ণয় করা যায়। সুতরাং হৃদরোগ নিয়ে আরও ভাবতে হবে। বাড়াতে হবে জনসচেতনতা। তাহলে জীবন হয়ে উঠবে সুন্দর ও হৃদরোগ মুক্ত। মনে রাখতে হবে প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসা নেওয়া উত্তম। অন্যথায় একটা পর্যায়ে জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে।