জনগণের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসকাবে ‘জনগণের হাতে ক্ষমতা চাই, জনগণের সরকার-সংবিধান-রাষ্ট্র চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। : বদরুদ্দীন উমর বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া জাতীয় সংসদ ও সরকার গঠন ছিল সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নামে জনগণের সাথে এক মস্ত বড় প্রতারণা। সম্প্রতিক চারটি সিটি নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে যেভাবে ব্যালট পেপার ছিনতাই, পোলিং এজেন্ট কেন্দ্র ঢুকতে না দেয়া, উচ্চ আদালতের আদেশ থাকা সত্ত্বে¡ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা গ্রেফতার করা হয়েছে তার দৃশ্য জনগণ দেখেছে। তাই এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণ নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রযোগ করতে পারবে না। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। : তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একবার বিদায় হলে জীবনেও আর ফিরে আসতে পারবে না। বর্তমানে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগের অবস্থা মালদ্বীপের চেয়ে কঠিন হবে। তারা আরও বেশি বিপদের মধ্যে পড়বে। : তিনি বলেন, সড়কে হত্যার প্রতিবাদে সড়কে ছাত্রছাত্রীদের এই আন্দোলন এবং সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন যেভাবে দমন করা হয়েছে তা জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, বিগত দশ বছরে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার, শেয়ার বাজার লুটপাট, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ ও স্বর্ণ চুরি, বড় পুকুরিয়ার দেয় লাখ টন কয়লা চুরি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতির রক্ষাকবচ হিসাবে জাতীয় সংসদে দায় মুক্তি আইন পাস করা প্রভৃতি ঘটনায় জনগণ চরম বিুব্ধ। : তিনি বলেন, জনগণ আজ এই ফ্যাসিবাদী শাসকের অধীনে থাকতে চায় না। তাই নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশকে সংস্কার করতে হবে। : প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, আমরা লুণ্ঠনের নৈরাজ্য বা শোষণের শৃঙ্খলা কোনটায় চাই না। আমরা চাই দেশে যে ফ্যাসিবাদী সরকার কায়েম হয়েছে তা তাড়িয়ে দিয়ে শ্রমিক কৃষক নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সংগঠন মত প্রকাশ করার এক মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে লুটেরা সন্ত্রাসী দুর্নীতিবাজ এই শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে রাজননৈতিক সংগ্রামের মাধ্যমে গ্রামে ও শহরে গরীব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। দাবি আদায়ে জনগণকে রাস্তায় নামাতে হবে। এমনভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে যেন গণআন্দোলন জনগণের গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। : সংবাদ সম্মেলনে অস্থায়ী সরকারের ফর্মুলা কী হবে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বদরুদ্দীন উমর ১৯৯০ সালের মতো সরকার গঠনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ’৯০ সালে কীভাবে হয়েছিল? সেটা কি সংবিধানে ছিল? : সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির সম্পাদক ফয়জুল হাকিম। তিনি বলেন, অবিলম্বে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং সব রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে অস্থায়ী সরকার গঠন করতে হবে। : সংগঠনটি ওই অস্থায়ী সরকারের কাছে শুধু নির্বাচন আয়োজন করাই নয়, আরও বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে সভা-সমাবেশ ও মিছিল, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। সংবাদপত্রসহ সব ধরনের গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তপে বন্ধ করতে হবে। সভা–সমাবেশে পুলিশের বাধা প্রদানের আইনগত মতা বাতিল করতে হবে। : : : দিনকাল রিপোর্ট :