রংপুর যুবলীগের নেতাসহ সড়কে ঝরল সাত প্রাণ

0
291
Print Friendly, PDF & Email

রংপুর যুবলীগের আহ্বায়ক এইচ এম রাশেদুন্নবী জুয়েল টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। টাঙ্গাইল সদরে ট্রাকের চাপায় মারা গেছে স্কুলের এক ছাত্রী। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় পিষ্ট হয়ে মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে রূপগঞ্জে সড়ক অবরোধ ও ভাংচুর করা হয়েছে। গোপালগঞ্জে আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত এবং ৫৮ জন আহত হয়েছে। শরীয়তপুরে ট্রাকের ধাক্কায় মারা গেছেন এক নারী। এ ব্যাপারে আমাদের আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :রংপুর ও ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) : রংপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এইচ এম রাশেদুন্নবী জুয়েল (৪২) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে টাঙ্গাইলে তাকে বহনকারী জিপের সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন আরো দুজন। ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের ভূঞাপুর-ময়মনসিংহ লিংক রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। যুবলীগ নেতা জুয়েল রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়ার মোয়াজ্জেম হোসেন বাবলুর ছেলে। তিনি রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ছিলেন। আহতরা হলেন রংপুর নগরীর মেডিক্যাল পূর্ব গেট এলাকার বিপ্লব (৪৫) এবং শাহীপাড়া এলাকার সঞ্জিত দত্ত।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানান, যুবলীগ নেতা জুয়েল তাঁর এক সহযোগী ও গাড়ির চালককে নিয়ে নিজ বাড়ি রংপুর থেকে পাজেরো জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৩৫১১) নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে তাঁদের বহনকারী গাড়িটি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের লিংক রোডে পৌঁছলে উত্তরবঙ্গগামী সিমেন্টভর্তি একটি ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো ট-১৬-৩৯৯২) সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে জুয়েলসহ তাঁর সহযোগী ও গাড়ির চালক আহত হন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জুয়েলকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে ট্রাকে যারা ছিল তারা পালিয়ে যায়। গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় রংপুর কেরামতিয়া মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে মুন্সিপাড়া কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : কাভার্ড ভ্যানের চাপায় পিষ্ট হয়ে মোটরসাইকেল আরোহী মিলন মিয়ার (৩০) মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ জনতা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে নির্বিচারে ৩০ থেকে ৪০টি যানবাহন ভাংচুর করেছে। অবরোধের কারণে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা। ঘণ্টাব্যাপী অবরোধের ফলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয় দিকে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার এলাকায় যানজট দেখা দেয়। মিলন মিয়া উপজেলার মাহমুদাবাদ টঙ্গীরঘাট এলাকার আজগর ফকিরের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল ৯টার দিকে মাহমুদাবাদ টঙ্গীরঘাট এলাকার নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে বন্ধু আব্দুল হাইকে নিয়ে তেল কেনার জন্য ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে ফিলিং স্টেশনে যান মিলন মিয়া। তেল কিনে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে একটি দ্রুতগামী কাভার্ড ভ্যান মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এ সময় ওই কাভার্ড ভ্যানের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মিলন মিয়া। এ সময় মিলন মিয়ার বন্ধু আব্দুল হাই গুরুতর আহত হন। আহত আব্দুল হাইকে স্থানীয় ইউএস-বাংলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিলন মিয়ার স্বজনসহ উত্তেজিত জনতা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে থেমে থাকা ৩০ থেকে ৪০টি যানবাহন ভাংচুর করে তারা। খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে। এ সময় উত্তেজিত জনতা কাভার্ড ভ্যানের চালক মহিউদ্দিনকে আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। রূপগঞ্জ থানার এসআই সেকান্দর আলী বলেন, ঘাতক কাভার্ড ভ্যানসহ চালককে কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ট্রাকের চাপায় স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে। এর প্রতিবাদে স্থানীয় জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় ওই ট্রাকসহ বাজারের কয়েকটি দোকান ভাংচুর করা হয়। জানা যায়, করটিয়ার আবিদা খানম উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মাহফিজা আক্তার (১৪) কোচিং শেষে বাড়ি ফিরছিল। বিকেল ৪টার দিকে সে করটিয়া বাজার সড়কে এলে ইটবোঝাই একটি ট্রাক তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই সে নিহত হয়। মাহফিজার বাড়ি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাশিল গ্রামে। চালক ও তার সহকারী ঘটনার পরপরই পালিয়ে গেছে।

শরীয়তপুর : মাদারীপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক বাইপাস মহাসড়কে ট্রাকের ধাক্কায় সুমী আক্তার (২৪) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে শরীয়তপুরের কাশাভোগ এলাকার তালুকদারবাড়ির ঘাট চৌরাস্তায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সুমী আক্তার শরীয়তপুর পৌরসভার ধানুকা গ্রামের আনোয়ার বেপারীর স্ত্রী।

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় এক গৃহবধূসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছে ৫৮ জন। গতকাল সকালে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাটিকামারী এবং সদর উপজেলার ভোজেরগাতিতে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের দিগনগর ইউনিয়নের বিশ্বম্ভরদী গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৫০), বাগেরহাটের হাসেম আলীর ছেলে বাসের হেলপার সাইফুল ইসলাম(১৮) এবং গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার মোকসেদ আলীর ছেলে সবেদ আলী (৫৫)।

মুকসুদপুর থানার ওসি মোস্তফা কামাল পাশা জানান, সকালে যাত্রীবাহী একটি বাস মুকসুদপুর উপজেলার চাওচা এলাকার শিশুতলা মোড়ে পৌঁছলে একটি অটোভ্যানকে সাইড দিতে গিয়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি গাছের সঙ্গে সাজোরে ধাক্কা মারে। এতে বাসটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে সড়কের খাদে পড়ে যায়। এতে ৩১ জন আহত হয়। পরে মনোয়ারা বেগম নামের এক গৃহবধূ মারা যান। এদিকে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া সড়কের ভোজেরগাতি নামক স্থানে কোটালীপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ আসার পথে একটি যাত্রীবাহী লোকাল বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার খাদে পড়ে যায়। এতে ওই বাসের কমপক্ষে ৩০ যাত্রী আহত হয়। পরে আহত বাসের হেলপার সাইফুল ও যাত্রী সবেদ আলী মারা যান।

শেয়ার করুন