: শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জনসভার ঘোষণা করেন। এর আগে সোমবার তিনি ২৭ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টন কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। : রিজভী বলেন, শনিবার বিএনপির জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, ইসি পুনর্গঠন ও নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবিতে জনসভায় ব্যাপক লোক সমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় জনসভা হবে বিএনপির। দলের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ জনসভায় অংশ নিয়ে এ সরকার পতনের বার্তা দেবে। সরকারের সব বাধা উপো করে বিএনপির জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। এরই মধ্যে জনসভায় দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীলদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূল দলের প থেকেও সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজও জনসভা সফলে বিএনপির একটি যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকার আশে পাশের জেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এদিকে জাতীয় ঐক্যের নেতাদেরও সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানা গেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী জানান, সব সময় রাজধানীতে বড় কোনো জনসভা হলে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এবারও ঢাকা মহানগর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ জেলা থেকেও ব্যাপক লোক জনসভায় যোগ দেবেন। মোটকথা, শনিবারের জনসভায় স্মরণকালের সেরা জনসমাগম হবে। : সংবাদ সম্মেলনে রিজভী জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির উদ্যোগে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার বেলা ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে জনসভা সফল করার জন্য আহবান জানানো হলো। শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি বিএনপি পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে রিজভী বলেন, আমরা আশা রাখছি জনসভার অনুমতি পাব। এই জনসভা সাফল্যমন্ডিত করার জন্য আমাদের দলের নেতা-কর্মী, অঙ্গসংগঠনগুলোর ইউনিট পুরোদমে কাজ করছে। আমরা আশা করছি, ২৯ সেপ্টেম্বরের জনসভাটি সাফল্যমন্ডিত হবে। সর্বশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা করে বিএনপি। রিজভী বলেন, অসুস্থ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। তাকে যখন অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তখন পূর্বের চিকিৎসাধীন নিয়ন্ত্রণে থাকা রোগগুলো ছাড়া অসুস্থ ছিলেন না। তাহলে এই পরিস্থিতি হলো কেন? কর্তৃপক্ষের অবহেলা, হয়রানি, অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতসেঁতে বদ্ধ পরিবেশের মধ্যে তাকে দিনযাপন করতে হচ্ছে, যা একটি চরম নির্যাতন। এই নির্যাতন সহ্য করতে গিয়ে তার পূর্বের অসুস্থতা এখন আরও গুরুতর রূপ ধারণ করেছে। কর্তৃপক্ষ তাকে সুচিকিৎসা হতে বঞ্চিত করেছে। তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালের সুবিধা ও ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দ্বারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকেও বঞ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। দল ও পরিবার থেকে বারবার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল : বোর্ড গঠনের দাবিকেও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। সরকারি দলের সমর্থক এবং আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় বিএসএমএমইউর চিকিৎসকদের দিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডও দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরে স্ববিরোধী বক্তব্য রেখেছেন। একদিকে তারা বলেছেন ‘বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা গুরুতর নয়, আবার বলেছেন, তার আর্থারাইটিসের ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার, হাত নড়াচড়া করতে পারেন না। ডৎরংঃ ঔড়রহঃ ফুলে গেছে, সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিসের জন্য কাঁধে প্রচন্ড ব্যথা, এই ব্যথা হাত পর্যন্ত রেডিয়েট করে। হিপ-জয়েন্টেও ব্যথার মাত্রা প্রচন্ড। ফলে শরীর অনেক অসুস্থ, তিনি পা তুলে ঠিক মতো হাঁটতেও পারেন না। বিএসএমএমইউ অথবা বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।’ : তিনি বলেন, সরকারি মেডিকেল বোর্ডের বক্তব্য অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর রোগে অসুস্থ নন, তাহলে তারা কেন হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিলেন? বোর্ড বিএসএমএমইউ অথবা বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে যেন এক প্যারাডক্স তৈরি করা হচ্ছে। এদিকে মেডিকেল বোর্ড তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছে, অথচ আদালতে তার অনুপস্থিতিতে বিচারিক কার্যক্রম চলছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া মামলার কার্যক্রম মূলতবি চেয়ে আবেদন করেন। বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা বিবেচনায় নিয়ে মামলার কার্যক্রম মূলতবি করার জন্য আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। উল্লিখিত অসুস্থতায় জর্জরিত দেশনেত্রীকে টানা হেঁচড়া করে একরকম জবরদস্তিমূলকভাবে আদালতে নেয়া হলে অসুস্থতার যন্ত্রণায় কাতর বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন- আমি অসুস্থ, এভাবে কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন, আপনাদের যা শাস্তি দেয়ার দেন। বেদনার্ত আক্ষেপে এই কথাগুলো বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া তো অনুপস্থিত নন, তিনি তো আদালতের অধীনে কাস্টডিতেই আছেন। যেদিন তিনি একথাগুলো বলেন সেদিন তার আইনজীবীরাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। কারণ ঐদিন কোর্ট বসানোর কথা ছিল আলিয়া মাদ্রাসায়, কিন্তু আগের দিন রাতে তড়িঘডি করে কারাগারের ভেতরে আদালত বসানো হয়। এটা ছিল সংবিধান ও আইন বিরোধী। অসুস্থ বন্দি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তার অনুপস্থিতিতে বিচারিক কার্যক্রম বেআইনি। আমি দলের পক্ষ থেকে আবারও দৃঢ়কন্ঠে বলতে চাই- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসাসহ এই মুহূর্তে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।। : বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বলেছেন- ‘খুনি, অর্থপাচারকারী এবং সুদখোররা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে, জোট বেঁধে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছে’। তিনি আরও বলেছেন- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেবে। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা হারানোর ভয়ে কান্ডজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছেন। তিনি তার সামনে, পেছনে, ডানে-বাঁয়ে যারা তাকে ঘিরে আছে তাদের দিকে তাকান না, শুধু তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের কুৎসা রটাতেই ব্যস্ত থাকছেন। ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে কিম্ভূতকিমাকার একনায়কতন্ত্র কায়েম করার জন্যই তিনি বেহুঁশ হয়ে গণতন্ত্র ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সন্ত্রাসের বেড়াজাল দিয়ে ঘিরে রাখতেই স্বৈরাচার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বিশ^জোড়া নামডাক হয়েছে। তার মুখে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদগার হাস্যকর। প্রধানমন্ত্রীর নিকট জাতি জানতে চায়- বিগত দশ বছরে ব্যাংক, বীমা লুটের টাকা গেল কোথায়? শেয়ার বাজার লুটের টাকা গেল কোথায়? ব্যাংকে আমানতকৃত টাকা চেক দিয়ে মানুষ না পেয়ে ফেরত আসে কেন? বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি করেছে কে? এখনও কেন রিজার্ভ চুরির তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি? আর্থিক খাত ধ্বংস করলো কে? কানাডাতে বেগম পল্লী ও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরি করেছে কারা? গত দশ বছরে বিদেশে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে কারা? প্রায় প্রতিদিন গড়ে ৪/৫ জন নিরীহ মানুষ বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে কার নির্দেশে? ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, হুমায়ুন কবির পারভেজ, সাইফুল ইসলাম হিরু, সুমন ও জাকিরসহ বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করেছে কে? কালো কাঁচঢাকা মাইক্রোবাসগুলো কাদের? উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন বাবুকে প্রকাশ্য দিবালোকে যারা হত্যা করেছে তাদেরকে তো আপনি নিশ্চয়ই চেনেন, কার নির্দেশে তাদের বিচার হলো না? মাফ পেয়ে গেলো? যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি নাজমুলকে ক্রসফায়ারে হত্যাসহ বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে কে? সর্বোপরি দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ থেকে বিতাড়নের নির্দেশ দিয়েছে কে? বর্তমানে দেশজুড়ে গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও লুটপাটের যে মহোৎসব চলছে, প্রধানমন্ত্রী তার অসত্য ভাষণে তা ধামাচাপা দিতে পারবেন না-জনগণ এটিকে নিরেট চাপাবাজি বলেই গণ্য করে। : তিনি আরো বলেন, আসল জারিজুরি ফাঁস হওয়ার ভয়েই শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ছেন না। সেজন্য দম্ভবলে সকলের মুখ বন্ধ রাখতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জাতীয় সংসদে পাস করেছেন- যেটিকে জনগণ সন্ত্রাসী-আইন বলেই মনে করে। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ফ্যাসিস্ট সরকারেরই ভাষা। কারণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন শুধু স্বাধীন সাংবাদিকতার পথই রুদ্ধ করেনি, জীবন-জীবিকার নিরাপত্তহীনতায় পড়েছে সাংবাদিক সমাজ। দেশব্যাপী নিরাপত্তাহীনতা ও মানুষের মনে ভীতি ক্রমবর্ধমান। : নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, নোয়াখালী জেলার আব্দুল বাতেন সাঈদ. সুবর্ণচর থানা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর ইকবাল, বিএনপি নেতা আবুল কালাম, কুষ্টিয়া জেলার সাহাজুল, সদরপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জসীম উদ্দিন, বিএনপি কর্মী জিহাদ মেম্বার, চিতলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মজিবর, আমলা ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক তালেব, মিরপুর পৌর বিএনপির ৬ নং ওয়ার্ড নেতা মোঃ মোকাদ্দেশ, আবদাল ইউনিয়ন বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন, ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মামুন, আবদালপুর ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী মোঃ তোয়াজ ফকির, ইসলামী বিশ্বঃ থানা বিএনপির কর্মী হামিদুল। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র আঃ মালেকসহ ৮২ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার । মেহেরপুর জেলা যুগ্ম সম্পাদক মোঃ রাজন, সদর উপজেলা যুবদল নেতা রাজ মাহমুদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল ঢাকাসহ দেশব্যাপী গ্রেফতার করা হয়েছে ৯৪ জন নেতাকর্মীকে, ১৩টি মামলায় ১৪০০-এর অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আমি দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। : সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ হারুন, সহ-দফতর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করীম শাহিন, সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবদুল বারী ড্যানি প্রমুখ।