দিনকাল রিপোর্ট : শিক্ষার্থীদের ওপর গতকাল সোমবারও দিনভার হামলা চালিয়েছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সাথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। পুলিশ বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা লাঠি, দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয় এবং অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এদিকে সংঘর্ষের পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য ও ইস্ট ওয়েস্ট মঙ্গল ও বুধবার বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। : শাহবাগে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মিছিলে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস, আহত ১২ : রাজধানীর শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া চার শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সোমবার বেলা তিনটার দিকে ৩-৪শ শিক্ষার্থী একটি মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে আসতে থাকে। : এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। জলকামান দিয়ে পানি ছোড়ে। পরে লাঠিপেটা শুরু করে। সকাল থেকে শাহবাগ এলাকায় পুলিশের অবস্থান ছিল। বেলা একটার দিকে ইউনিভার্সিটি কেন্দ্রীয় মসজিদ পর্যন্ত মিছিল আসলে পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেয়। বেলা তিনটার দিকে মিছিলটি শাহবাগমুখী হলে থানার সামনে এসে বাধার মুখে পড়ে। পুলিশি বাধার মুখে শিক্ষার্থীরা পিছু হটে যায়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি কলাভবন, মধুর ক্যান্টিন, কার্জনহলসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকালের দিকে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে আসতে থাকলে বাধার মুখে পড়েন তারা। রামপুরায় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলা : রাজধানীর রামপুরায় ইস্ট ওয়েস্টের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলছে। গতকাল সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে আফতাবনগর এলাকার সামনের সড়কে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা সড়কে জড়ো হয়ে মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। কিন্তু পুলিশি বাধা পেরিয়ে ছাত্ররা মিছিল করার চেষ্টা করলে তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও ছাত্রদের ওপর হামলা করে। পরে শিক্ষার্থীরা আফতাবনগর এলাকায় সরে যায়। বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। : বসুন্ধরায় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা : রাজধানীর বসুন্ধরায় অবস্থিত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিসহ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগ-শ্রমিকলীগের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। শিক্ষার্থীরা ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে ওই এলাকায় অবস্থিত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও এলাকাবাসীর সহযোগিতা চাচ্ছে। রাজধানীর আফতাব নগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীর ওপর হামলার খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসলে এই ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার সকালে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। : এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বেসরকারি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বেরিয়ে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রগতি সরণিতে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা বসন্ধুরা আবাসিক এলাকার ভেতরে অবস্থান নেন। অন্যদিকে পুলিশ বাইরের সড়কে অবস্থান নেয়। : প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই এলাকায় গাড়ি বের হলেই ছাত্রলীগ এবং শ্রমিকলীগের কর্মীরা অবস্থান নিয়েছে। গাড়ি বের হলেই তারা ভাঙচুর করছে। সংবাদকর্মীরা ছবি নিতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হচ্ছে। এদিকে পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে তারাও শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করছে। ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সহপাঠীদের সহযোগিতা চাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। : উভয়পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের আশপাশের দোকানপাটও বন্ধ হয়ে যায়। পরে দুপুর দেড়টার দিকে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়ে পুলিশকে ধাওয়া করেন। বর্তমানে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান গেটে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান করছেন। তবে থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। : আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীর ওপর পুলিশের হামলা, ১১ শিক্ষার্থী আটক : নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের হামলার প্রতিবাদে বেসরকারি আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রামপুরার দিকে অগ্রসর হতে থাকেন তারা। হাতির ঝিলে পৌঁছালে পুলিশ দুই দিক থেকে শিক্ষার্থীদের আটকে দিয়ে বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। সেখান থেকে ১১ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। বিক্ষোভকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হানা দিয়ে ১১ শিক্ষার্থী আটক করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। : দুপুর সোয়া ২টার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই কাওসার বলেন, আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশৃঙ্খলা করায় তাদের মধ্য থেকে ১১ জনকে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। : উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই কুর্মিটোলায় বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব নিহত হন। এ ছাড়া ১৩ জন আহত হন। : এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তারা নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খানের পদত্যাগ এবং ৯ দফা দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে যান। সর্বশেষ রবিবার আন্দোলনের অষ্টম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এর মধ্য দিয়ে আন্দোলন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে যায়।