লাকসাম (কুমিল্লা) : দ্রুতগতিতে ছুটে আসছে ট্রেন। লেভেল ক্রসিং ফঁাঁকা। নেই গেটম্যান, নেই যানবাহন থামানোর প্রতিবন্ধক। আর ফাঁকা পেয়ে রেললাইনের ওপর দিয়ে তৈরি রাস্তা পার হতেই ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে যানবাহন, খণ্ডবিখণ্ড হয়ে ছিটকে পড়ছে পথচারীর তাজা প্রাণ। এমনিভাবে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লার লাকসাম জংশনের আওতাধীন অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলো মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। যথাযথ তদারকির অভাব, গেটম্যান ও ব্যারিয়ার না থাকায় প্রায়ই প্রাণহানিসহ যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশনের আওতাধীন ১১৭টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৮৪টি অবৈধ। আর এসব অস্বীকৃত লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত থাকায় প্রাণহানিসহ দুর্ঘটনায় যানবাহনের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অস্বীকৃত লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে পারাপারের সর্তকবাণীর সাইনবোর্ড বছরের পর বছর ঝুললেও বিষয়টি সমাধানে সরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লার লাকসাম জংশনের নিয়ন্ত্রণাধীন ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রেলপথে ৬৮টি, চাঁদপুর রেলপথের আউটার সিগন্যাল পর্যন্ত ১টি এবং লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথে ৪৮টিসহ ১১৭টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। তার মধ্যে ৩৩টি লেভেল ক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার, গেটম্যান রক্ষিত থাকলেও বাকি ৮৪টি রয়েছে অরক্ষিত। রেলওয়ের হিসেবে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলো অস্বীকৃত বা অবৈধ, যা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও অনুমতি ছাড়াই যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে বিভিন্ন সংস্থা তৈরি করেছে। আর তাই এসব লেভেল ক্রসিংয়ে লোকবল এবং ব্যারিয়ার নির্মাণের কোনো এখতিয়ার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নেই। ফলে প্রতি বছর অস্বীকৃত ও অরক্ষিত ৮৪ লেভেল ক্রসিংয়ের মৃত্যুকূপে ঝরছে অন্তত শতাধিক তাজাপ্রাণ। লেভেল ক্রসিংকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্বীকৃত ও অস্বীকৃত বা অবৈধ হিসেবে দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে রেললাইনের ওপর দিয়ে যেসব সড়ক তৈরি করেছে এগুলো অবৈধ লেভেল ক্রসিং হিসেবে চিহ্নিত। এ ধরনের লেভেল ক্রসিংয়ে রেলওয়ের নিযুক্ত গেটম্যান, যানবাহন থামানোর প্রতিবন্ধক বা ব্যারিয়ার দেয়ার সুযোগ নেই। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ওই সব লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নিজেদের দায় সেরেছেন। এসব সাইনবোর্ডের কোনটিতে লেখা রয়েছে সাবধান! এ স্থানে রেললাইনের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। সাবধান! অবৈধ রাস্তা। নিজ দায়িত্বে পারাপার হবেন। এখানে কোনো গেটম্যান নাই। পথচারী ও সব যানবাহন নিজ দায়িত্বে পারাপার হবেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সতর্কতার পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ, যানবাহন পারাপারের দৃশ্যের দেখা মিলছে ওই সব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে। আর এভাবে নিজ দায়িত্বে ঝুঁকির পারাপারে চলন্ত ট্রেনের মুখে পড়তে হচ্ছে পথচারী এবং বিভিন্ন পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহনকে। পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, রেলওয়ের অনুমতি ছাড়া এলজিইডি, সওজ, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ জনস্বার্থের কথা বলে নিয়মনীতি না মেনে রেললাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করে যাচ্ছে। কিন্তু এ রকম রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ম রয়েছে বিষয়টি রেলওয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করে অনুমতি নেয়া এবং গেট, অবকাঠামো নির্মাণের খরচ ও গেটম্যানের আট বছরের বেতন-ভাতার অর্থ অগ্রিম প্রদান করতে হয়। বিশেষ করে রেলওয়ে ও সরকারের ওই সব বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই লেভেল ক্রসিংগুলো বৈধতার স্বীকৃতি পাচ্ছে না। আর তাই সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে সব দায় থেকে মুক্ত থাকছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।