–
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার শুধু পরিবহণ সেক্টরেই ব্যর্থ নয় দেশের সকল সেক্টরে এ অবৈধ ভোটারবিহীন সরকার ব্যর্থ। তাই প্রথমে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের যে পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে তা গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।
‘পদত্যাগের দাবি শিক্ষার্থীদের নয় বিএনপির’ সরকারের মন্ত্রীদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, আসলে এই সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা ক্ষমতাকে মনে করে অমল ধমল। তারা ক্ষমতাকে যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখতে চায়। যে কারণেই তারা বলছে যে পদত্যাগ করবে না। কিন্তু আপনারা দেখেছেন-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত পরশুদিনও বলেছেন- শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। তারপরও গতকাল শিক্ষার্থীরা মাঠে কেনো? কারণ এই কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও এই সরকারকে বিশ্বাস করে না।
আজ শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, গতকাল বিকেলে মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনরত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর হঠাৎ করে সশস্ত্র নিষ্ঠুর হামলা চালায় পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। হামলায় বেশ কিছু শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কোমলমতি এই শিক্ষার্থীদের ওপর এই হিংস্র হামলা নৃশংস দস্যুতার নামান্তর মাত্র। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নাশকতার আশঙ্কা করে নানা কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পরপরই শুরু হয়ে গেল শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের আক্রমণ। গণমাধ্যমের বিভিন্ন সূত্রে আরো জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লাঠি হাতে কিছু যুবক ও মধ্য বয়সী লোক গাড়ি চেক করছে এবং হামলা ও ভাংচুর করেছে তারা। এসমস্ত ঘটনায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্যাবোটাজের বক্তব্য মূলতঃ সরকারি নাশকতারই ইঙ্গিতবাহী।
তিনি বলেন, অতীতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যে নাশকতাগুলো তারা করেছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সরকার কিভাবে ডাইভার্ট করেছে, কিভাবে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে তা কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও ভুলে যায়নি।
রিজভী বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যাটি জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য স্কুল-কলেজ পড়া এই সকল কিশোর-কিশোরীদের আমরা অভিনন্দন জানাই। শিক্ষার্থীরা অপশাসন, দুঃশাসন ও অব্যবস্থাপনার অভিঘাত অভূতপূর্ব আন্দোলনে তুলে ধরতে পেরেছে। গাড়ির বৈধ ডকুমেন্টস, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ীর ইন্সুরেন্সের মতো অতি সাধারণ বিষয়গুলোও সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। রাজপথে ট্রাফিক অব্যবস্থা, শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে যে সততা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রম ছাড়া আর কিছু লাগে না, তা এই শিশু-কিশোররা মাত্র দুদিন কাজ করে তা প্রমাণ করে দিয়েছে। এসব বালক-বালিকারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে অবৈধ সরকার কোনো কাজই করতে পারে না। আবার একই সঙ্গে আরো দেখিয়ে দিয়েছে-সুশাসন ও গণতন্ত্র কায়েম করা গেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকেও ইতিবাচক পথে পরিচালনা করা যাবে। জনমন থেকে হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন তারা পুনঃপ্রবর্তন করেছে। পরিবর্তনের অসীম আশা জাগিয়েছে দেশবাসীর মনে; এটা অনেক বড় কাজ, সে দায়িত্ব এই নিস্পাপ শিশু-কিশোররাই সম্পন্ন করেছে।
তিনি আরো বলেন, অপরদিকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিক দাবিগুলোকে অগ্রাহ্য করার জন্যই মন্ত্রীদের নির্দেশেই গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন- নিরাপত্তার জন্য পরিবহন মালিকরা বাস রাস্তায় নামাচ্ছে না। আপনারা গতকাল দেখেছেন- কোমলমতি শিক্ষার্থীরা গাড়ি চলতে বাধার সৃষ্টি করেনি, বরং তারা সুশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চলতে সহায়তা করেছে, তারা গাড়ি ও গাড়ি চালকদের লাইসেন্স আছে কী না সেটি চেক করেছে। কিন্তু আমরা কি দেখতে পেলাম মন্ত্রীর গাড়ির চালকের লাইসেন্স নেই, এমপির গাড়ির কাগজপত্র নেই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গাড়ির কাগজপত্র নেই, গাড়ির চালকেরও লাইসেন্স নেই। এসব খবর আবার দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। এটা জাতির জন্য কতবড় লজ্জার তাতে অবৈধ সরকারের টনক নড়েনি। অবিলম্বে দেশ পরিচালনায় লাইসেন্সহীন সরকারের পদত্যাগ ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু নিয়ে হাসি-তামাশা ও পরিবহন সেক্টরে অরাজকতা সৃষ্টিকারী নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ নিরাপদ সড়কের গণদাবিকে জনগণ ন্যায্য বলে মনে করে।
রিজভী বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা যখন তাদের মানববন্ধনে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে সে হামলার দৃশ্যের সংবাদ সংগ্রহের সময় মোহনা টিভির রিপোর্টার মাইনুল হোসেন এবং ক্যামেরাপারসন হাবিবুর রহমান কবিরের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। এ সময় তাদের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে। আহত দুজনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। আহতদের সুস্থতা কামনা করছি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমি আহবান জানাই- ঐতিহাসিকভাবে শিক্ষণীয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনের ওপর হামলা নির্যাতন বন্ধ হোক। শিশু-কিশোরদের রক্তঝরানোর জন্য দায়ী সরকারী গুন্ডা-পান্ডাদের শাস্তি পেতে হবে। এছাড়া তিন সিটি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, অনাচার, ভোট জালিয়াতি ও ভোট সন্ত্রাসের প্রতিবাদে গতকাল বিএনপির উদ্যোগে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালে ঝালকাঠি জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি টিপু সুলতানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি এই গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে টিপু সুলতানের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।