গত বৃহস্পতিবার রাতে কবি বেলাল চৌধুরীকে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। এরপর শুক্রবার অবস্থার আরও অবনতি হলে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। কবির দ্রুত আরগ্য কামনা করে তার তিনটি কবিতা প্রকাশ করা হলো।
তুমি সেই বৃক্ষ
জটিল অরণ্যে তুমিই একমাত্র বিটপী
শালের মত অটল, সেগুনের মত নমনীয় ও কোমল
ঝাউয়ের মত তোমার মর্মরিত মাধুর্যের দিকে, কাঠুরেও
তার কুড়ালের হাতলে আলতো হাত রেখে দাঁড়ায় ফিরে।
বৃষ্টি তবু তুমি, তোমার উড়ন্ত উজ্জ্বল সবুজ চুল
দূরের বাতিঘরের মতই করে প্রসারিত;
অরণ্যের বিষণ্নতার ভেতর হঠাৎ বিচ্ছুরিত
বসন্তের মঞ্জুরিত রাজফুলের মত তোমার রক্তিম অধর।
তুমি সেই বোধিদ্রুম যার প্রতি,
দিবাবসানে ক্লান্ত ক্ষধার্ত ভবঘুরেও দাঁড়ায় ফিরে
দিক নির্দেশের জন্য, তুমি সেই লক্ষভেদী
অনুকূল আগুনের প্রতি প্রলুব্ধ করে
জ্বেলে দাও লেলিহান শিখা
আলোকিত করে তোল সমগ্র পশ্চাৎপট।
তুমি সেই বৃক্ষ, আমি কুঠার হয়ে দেখেছি:
তোমার সমারোহের কাছে অবরুদ্ধ হয়ে
চিহ্নিত করি তোমাকে নিজেরই জন্য,
সহিষ্ণু, ধূর্ত ও কুশলী হাতে
তোমার দেহকে অনাবৃত করে
নিয়ে যাই তোমার হৃদয় নিজেরই গূঢ় প্রয়োজনে।
প্রতিনায়কের স্বগতোক্তি
আমার গোপন পাপগুলি এতদিন পর
বিরূপ-বৈরিতায় শস্ত্রপাণি হয়ে উঠেছে
এবার তাদের বজ্রনির্ঘোষ কন্ঠে
উচ্চারিত হলো- আমার কঠোর দণ্ডাজ্ঞা
আমার মাথার ওপর উত্তোলিত তীক্ষ্ন কৃপাণ
চোখের সামনে জ্বলন্ত লাল লৌহশলাকা
ওদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এবার ওরা অটল
আমার সর্বাঙ্গ ছেঁকে ধরেছে মাছির মতো
বিস্ফোটক দগদগে ঘা পুঁজ আর শটিত গরল
গোপন পাপের শরশয্যায় শুয়ে আমি
নিদারুণ তৃষ্ণায় ছটফট করছি- হায় রে জলধারা
কিন্তু এবার ওরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ- নিষ্কৃতি নেই আমার
নির্বাসনে মৃত্যুদণ্ড- ঠাণ্ডা চোখে দেখছি আমি
নীল কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে আমার দেহ।
খর্বকায় বামনের গান
ওরে ও, বুড়ো হাবড়া, নিতান্ত সঙিনাবস্থায়
প্রসারিত পায়ের পাতার ওপর দাঁড়িয়ে,
চেনা জগৎ সীমার ওপর ঝুঁকে গ্রন্থিল
প্যাচানো কোনাচে- যে রকম কেউ কেউ-
মনে আঁকে ছবি বা মাপে বয়স;-
খাটো বহর ওদো, অতীতচারি ওরা হাওড়ায়
নিজেদের শিকর সম্পর্কে জ্ঞাত অজ্ঞাত
বহু বহু বরকনদাজি গুল গল্প
যাকে এক কথায় বলা যায় বার ফট্টাই…