ভারত-চীন সম্পর্কে চিড়, সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা – সংগৃহীত
ভারত-চীন সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটেছে। দুদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কে দীর্ঘদিনের ধরা চিড় আরো বাড়ছেই। দোকলাম ইস্যু আবার ছড়াচ্ছে উত্তাপ। মার্কিনি এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানাচ্ছেন দোকলামে ফের ঘুঁটি সাজাচ্ছে চীনা সেনা। দোকলাম সীমান্তে দুদেশের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা ফের সংবাদ শিরোনামে উঠে আসছে।
গত কয়েক মাস আগেই দোকলাম ইস্যুতে ঐকমত্যে এসেছিল নয়াদিল্লি ও বেইজিং। আবার নতুন করে চীনের সামরিক পদক্ষেপে দুদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কে চিড় ধরতে পারে বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের। তবে ইস্যু সমাধান হলেও, দোকলামের রেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি দুই দেশ। তারই মধ্যে চীনের সেনার নিঃশব্দ অবস্থানে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
দোকলামের ওই বিতর্কিত এলাকায় ফের নিজের গতিবিধি বাড়াচ্ছে চীন। তবে এবার ভারত বা ভুটান কেউই কোনো প্রতিবাদ করেনি বা বাধা দেয়নি। মার্কিন কংগ্রেসে দাঁড়িয়ে এই তথ্যই দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়া, অ্যালিস জি ওয়েলস।
অ্যালিস জি ওয়েলস বলেছেন, এই ঘটনা দক্ষিণ চীন সাগরের কথা তুলে আনছে। চীন দাবি করেছে, পুরো চীন উপসাগর তাদের সম্পত্তি। তবে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, ব্রুনেই এবং তাইওয়ান। তবে হিমালয়ের ওপর চীনা সেনার গতিবিধিতে এখন কোনো দেশের প্রতিরোধ আসেনি। প্রতিরোধ কেন আসেনি, তা স্পষ্ট নয়। এর আগেও হিমালয়ের ওপরে একাধিকবার বিরোধে জড়িয়েছে ভারত ও চীন।
সম্প্রতি বিরোধ হয়েছিল দোকলাম নিয়ে। চীন ও ভুটানের মধ্যে অবস্থিত দোকলাম উপত্যকায় বেআইনিভাবে রাস্তা বানাচ্ছিল চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করে ভারত। তারপর শুরু হয় দোকলাম দ্বন্দ্ব। পরে দুই দেশ শান্তিপূর্ণ আলোচনায় সেই সমস্যা মেটায়।
ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত জানিয়েছিলেন, শীত শেষ হলেই ফের দোকলামে হাজির হতে পারে চীনের সেনাবাহিনী। ভারতকে যেভাবেই হোক চীনা অনুপ্রবেশ আটকাতেই হবে। না হলে, চীন পুরো দোকলাম অঞ্চলটাই নিজেদের বলে ধরে নেবে। এটুকু নিশ্চিত করতে হবে যাতে আর সীমান্তে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি না হতে হয়। দুই দেশই যেন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে। এখনো চীনা সেনা রয়েছে ডোকলামে। তবে বেশির ভাগ সেনাই সরে গিয়েছে। কিন্তু এখনো রয়েছে চীনা সেনার তাঁবু, পোস্ট, স্টোরেজ শেল্টার ইত্যাদি।
সোনার খনি নিয়ে ভারত-চীন নতুন যুদ্ধ!
২১ মে ২০১৮
দোকালাম-পরবর্তী প্রেক্ষিতে অরুণাচল নিয়ে ফের চীন-ভারত সঙ্ঘাতের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে! ইঙ্গিত অন্তত তেমনটাই। সৌজন্যে, ভারত সীমান্তে সোনার খনির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অরুণাচল সীমান্তবর্তী নিজেদের ভূখণ্ডে জোরকদমে খননকাজ শুরু করেছে বেইজিং। যেখানে সোনা, রুপোসহ অন্যান্য মূল্যবান খনিজের বিশাল সম্ভারের খোঁজ পাওয়া গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। আর এই স্বর্ণখনির সন্ধান অরুণাচলকে কেন্দ্র করে নতুন করে চীন-ভারত সঙ্ঘত উস্কে দিয়েছে।
হংকংয়ের ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ তার প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চীনের অধীনে থাকা হুনজে কাউন্টিতে এই খননকাজ শুরু হয়েছে। ভারতীয় সীমান্ত লাগোয় হল এই হুনজে প্রদেশ। অরুণাচলকে দীর্ঘ দিন ধরেই চীন দক্ষিণ তিব্বত বলে দাবি করে আসছে। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা ভারতের যেকোনো পদস্থ কর্মকর্তা সেখানে পা রাখলে তার প্রতিবাদ জানায় বেইজিং। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই স্বর্ণখনির সন্ধান ও সেখানে খননকাজ চীনের পালে হাওয়া দেবে বলে জানিয়েছে মর্নিং পোস্ট। জোরদার করবে অরুণাচলের দাবিকে।
প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক সম্পদের সম্ভার এই অঞ্চল দক্ষিণ তিব্বতের দাবিকে আরো সুদৃঢ় করবে। খনিজ উত্তোলনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সীমান্তে ব্যাপক নির্মাণকাজ অরুণাচলকে আরেকটা ‘দক্ষিণ চীন সাগরে’ পরিণত করতে পারে বলে জানিয়েছে ওই পত্রিকা।
গত এপ্রিলের শেষে ইনফর্মাল বৈঠকে যোগ দিতে চীনে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার একমাস কাটতে না কাটতেই অরুণাচল লাগোয়া প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার নিয়ে এই রিপোর্ট প্রকাশ করল মর্নিং পোস্ট। ভারত-ভুটান-চীনের ত্রিদেশীয় অঞ্চল দোকালাম অচলাবস্থা নিয়ে বেইজিং-নয়াদিল্লির সম্পর্কের যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল, তাতে প্রলেপ দিতেই ‘হার্ট টু হার্ট’ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট জি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। বেআইনি নির্মাণকে কেন্দ্র করে ৭৩ দিন চলেছিল দোকালাম অচলাবস্থা।
তিব্বত নিয়ে খেলতে গেলে জ্বলেপুড়ে মরবে ভারত : চীন
১১ জুলাই ২০১৭
সিকিম সেক্টরে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে বেইজিংয়ের উপর চাপ বাড়াতে ভারত যদি ‘তিব্বত তাস’ খেলার চেষ্টা করে, তাতে শেষ পর্যন্ত লাভ কিছুই হবে না। উলটে ভারত নিজেই জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাবে। চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম সোমবার এ ভাবেই ভারতকে হুমকি দেয়া হয়েছে। লাদাখের একটি হ্রদের তিরে তিব্বতের পতাকা ওড়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে।
লাদাখের এই হ্রদটিকেই দু-দেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বলে মনে করা হয়। চিনের গ্লোবাল টাইমস ট্যাবলয়েডের এক নিবন্ধে বলা হয়, উত্তর ভারতের তিব্বতীয় নির্বাসিত প্রশাসন এই প্রথম সেখানে পতাকা উড়িয়েছে। এর পরেই হুমকির সুরে বলা হয়, নয়াদিল্লি যদি নির্বাসিত তিব্বতীয়দের নিয়ে এ ধরনের রাজনীতি করার চেষ্টা করে, তা হলে ফল ভালো হবে না। ভারত নিজের গায়েই আগুন লাগাবে। কারণ, তিব্বত এবং সীমান্ত চীনের মূল আগ্রহের জায়গা। কোনোরকম উস্কানি বরদাস্ত করা হবে না।