–
দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বুধবার সকাল থেকে বরগুনার বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া-নিয়ামতি নৌরুটে খেয়া ও মাছ ধরার চলাচল বন্ধ রয়েছে।পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া প্রর্যন্ত এসব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জানা গেছে, সকাল থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকায় উপজেলার নদ-নদী উত্তাল হয়ে উঠেছে, টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে এমন দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ায় জেলেদের জীবনে বেহাল দশা তৈরী হয়েছে।
বেতাগীর জেলে পল্লি থেকে অনেকে বলেন ‘আমরা গরিব এলকার লোক। জালে আগের মতো মাছ ও ওডে না।’ আবার একজন বলেন, ‘একতো অনেক আগেই সিডরে শ্যাষ হইছি, প্যাড বাঁচাইতে নদীতে নামি, আর ডাহাইতে (জলদস্যু) ধরলি ছাড়াইতে ট্যাহা লাগে, নাও জাল বানাইতে ঋণ নেতে বাধ্য হই। এই দেশে যতো লোক আছে সবাই ঋণি হেয়ার মধ্যে আবার এমন আবহাওয়া নদীতে মাছ ধরতেও নামতে পারি না।’ উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের বিষখালী তীরবর্তী মাছুয়াখালী গ্রামের মোজাম্মেল মিয়ার (৪০) খেদোক্তি এটি।
‘বিষখালী নদীর তীরের হাজারো জেলেদের জীবন যাপনের অন্যতম ভরসাস্থল বঙ্গোপসাগর হলেও’ সেখানে জেলেরা প্রাকৃতিক ও মানুষসৃষ্ট দুর্যোগে বার বার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে । ফলে যেসব জেলেরা অন্য কোন পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় তাদের জীবনে অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে। জেলেরা যদি সাগর বিমুখ হয় তাহলে দেশের প্রচুর মাছের চাহিদা কে যোগান দেবে তা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুরা জেলেদের উপর নানাভাবে হামলা অপহরণ ও খুনের শিকার হওয়ার পরেও জীবনের তাগিদে বারবার ছুটে যেতে হয় বঙ্গোপসাগরে। কাঁচা মাছের চেয়ে শুকানো মাছে অনেক বেশি দাম পাওয়া যায় বিধায় জেলেরা কাঁচা মাছের শুটকি শুকানোতেই সময় দিয়ে থাকে। তবে এ কাজ করতে অনেক সময় প্রয়োজন হলেও বেশী মুনাফার আশায় এই কাজ করতে বাধ্য হয় তারা।
বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া , মাছুয়াখালী, গাবুয়া, ডিসির হাট,ও হাজারো জেলের জীবন জীবিকার অন্যতম স্থান হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের জলদস্যুদের কাছে বার বার হার মানতে হয় জেলেদের। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি অপরদিকে মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগে প্রাণহানি থেকে শুরু করে সবকিছু ছিনিয়ে নেয় জেলেদের জীবন থেকে। বঙ্গোপসাগর ভিত্তিক চিহ্নিত জলদস্যুরা জেলেদের কাছ থেকে আহরিত মাছ ছিনিয়ে থেকে শুরু করে প্রতিনিয়ত হত্যা করছে জেলেদের।
সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বর্তমানে বরগুনা জেলায় মোট ১৯ জেলে ও ৭ টি মাছ ধরার ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে । আবার অপর দিকে মোকামিয়ার জেলে ছৈওদ মৃধা তিনি বলেন, ‘প্যাডতো চালাইতেই হইবো, আর পানিতে আগের নাহান মাছ ও পাওয়া যায় না। এতো সব কারণে ঋণ-দাদন ছাড়া উপায়ও নাই’। তার মতে, ‘ঋণে আগে উপকার হয়, শেষে ক্ষতি। জীবনেও শোধ হয় না, যদি ঋণ না দেতে পারি তাইলে জেলে যাওয়ার ভয়। আর এই কারণে কতো মানুষ দেশ ছাইড়া পালাইয়া যায়। এইটা গরিব মানুষগুলাও বুঝে, তয় বুইঝ্যাও কিছু করণের থাকে না’ ঋণ ছাড়া চলার কোন উপায় ও নাই।
বেতাগী পৌরসভার ৮ নম্বর ওর্য়াডের কাউন্সিলর মোঃ আবদুর রহিম শিকদার (৪০) বলেন, ‘মাছ না পেয়ে এমনিতেই কষ্টে থাকে এখানকার মানুষ। ঠিকমতো খাবার জোটে না, তাই এনজিও’র ঋণ ছাড়া কোনো উপায়ও নেই তাদের। এ ঋণ পরিশোধে বাধ্য হয়ে অনেক সময় ঘরের আসবাবপত্র, টিন ও চাল প্রর্যন্ত বিক্রি করতে হয়। যারা তাও পারে না, কিস্তি শোধের সময় এলে পালিয়ে যায়’।
বেতাগী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা আল রাজিব’র নিকট জেলেদের জীবনের এমন দূর্বস্থার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেতাগীর সাধারণ মানুষ নানা পেশার উপর নির্ভরশীল, তবে সরকার কতৃক বর্তমানে জেলেদের ননা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ইলিশ প্রজনন মৌশুমে চাল, অর্থভাতা, এসব দিয়ে সহযোগীতা করা হচ্ছে তাছাড়া আগামী সময়ে হয়তো বা সরকার কর্তৃক ভালো কিছু আসা করা যেতে পারে।