সিলেটে নির্বাচন : কেমন অবস্থা বিএনপি প্রার্থীর? – ছবি : সংগৃহীত
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চলছে গ্রেফতার অভিযান। গতকাল ভোরে দলীয় মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর আত্মীয় ও বিএনপি কর্মী জুরেজ আব্দুল্লাহ গুলজারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এর আগের দিন রাতে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাঈদ আহমদসহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ বলছে, সুনির্দিষ্ট মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, মিথ্যা মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। গত রোববার রাতে শাহপরান থানায় জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতিসহ ৩৯ জন নেতার নাম উল্লেখ করে ৯৯ জনের বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা হয়েছে। গত শনিবার মহানগর পুলিশের উপকমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ের সামনে আরিফের নেতৃত্বে দলবল নিয়ে বসে পড়ে গ্রেফতারকৃত ২ কর্মীর মুক্তির দাবিতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করায় এই মামলা করা হয়। এর বেশ কিছু দিন আগে ছাত্রদলের একটি মিছিলকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনার পর ছাত্রদলের বিপুল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেও করা হয়েছে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মাঠে তেমন সক্রিয় না হলেও বিএনপির নেতারা আরিফের পক্ষে কাজ করছেন। রোববার মামলা দায়েরের পর থেকে তারা ঘরছাড়া। উচ্চতর আদালত থেকে জামিন নেয়ার জন্য কেউ কেউ ঢাকায় অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার সকালে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত্ চৌধুরী সাদেক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন আহমদ মাসুক দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে তার বাসভবনে দেখা করেন। এ সময় বিএনপির মহাসচিব বলেন, অবৈধ সরকার সিলেট সিটি নির্বাচন নিয়ে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। ধানের শীষের নিশ্চিত বিজয়কে তারা নস্যাৎ করতে চায়। মিথ্যা মামলা দিয়ে সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হয়রানি করে সরকার ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায়। আমার বিশ্বাস সিলেটের গণতন্ত্রকামী মানুষ সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করবে। মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন নয়া দিগন্তকে বলেন, খুলনা ও গাজীপুরের মতো সিলেটেও আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার অপতৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু সিলেটের জনগণ সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করবে ইনশাআল্লাহ।
এর আগে গত সোমবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আরিফুল হক চৌধুরী অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে ভিন্ন আচরণ করছে। পুলিশ রোববার জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাঈদ আহমদ ও তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রুম্মান রাজ্জাককে ধরে নিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে প্রতিনিয়ত তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
বিএনপির ৩৯ নেতার বিরুদ্ধে মামলা : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার মুক্তাদির আহমদ, জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, আরিফুল হকের নির্বাচন কমিটির সদস্যসচিব আব্দুল রাজ্জাকসহ বিএনপির ৩৯ নেতার নাম উল্লেখ করে ৯৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। গত রোববার রাতে নগরীর শাহপরান থানায় গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক ফয়েজ আহমেদ বাদি হয়ে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন। মামলায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদানের অভিযোগ আনা হয়।
শাহপরান থানার ওসি আখতার হোসেন জানান, অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। গত ২১ জুলাই আরিফের প্রচারণার কাজে নিয়োজিত ২ কর্মীকে গ্রেফতারের পর তাদের মুক্তির জন্য মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ)-এর কার্যালয়ের সামনে দলবল নিয়ে বসে পড়েন আরিফুল হক চৌধুরী। তার দাবি ছিল, মামলা ও ওয়ারেন্ট ছাড়াই তার দুই কর্মীকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। তবে, পরবর্তীতে পুলিশ জানিয়েছে, তাদের সুনির্দিষ্ট মামলার ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর সে দিন বিকেল ৪টার দিকে অবস্থান তুলে নিয়ে আদালতের মাধ্যমে কর্মীদের ছাড়িয়ে আনবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন আরিফ। আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়ার অভিযোগে মামলাটি করা হয়।
এর আগেও গত ১২ জুলাই মধ্যরাতে নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। অভিযোগ ছিল, বন্দরবাজার এলাকায় তার নির্বাচনী পোস্টার লাগানোর সময় এক কর্মীকে মারধর করে বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে অপর মেয়রপ্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সমর্থক ছাত্রলীগ কর্মীরা। প্রায় ৪০ মিনিট অবস্থানের পর সে রাতে আটক কর্মীকে ছাড়িয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী।