সুনামগঞ্জ জেলার পশ্চাৎপদ কয়েকটি উপজেলার গুরুপূর্ণ সড়ক যোগাযোগের মধ্য জামালগঞ্জের সাচনাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা হয়েছে। এর কারণে যাত্রীরা চলাচলের ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ রয়েছেন।
সাচনাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কে প্রতিদিন হাওর পাড়ের ধর্মপাশা, তাহিরপুর, মধ্যনগর ও জামালগঞ্জ উপজেলার লাখ-লাখ লোক সিলেট-সুনামগঞ্জ-ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করেন। সাচনাবাজার থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত মাত্র কয়েক কিলোমিটার রাস্তা সড়ক ও জনপথ বিভাগের অবহেলায় বেহাল দশা হয়ে পড়ে আছে।
এই সড়কের সংস্কার করার দাবিতে প্রায়ই যাত্রীবাহী লেগুনা-সিএনজি, মোটর সাইকেল, অটো রিক্সাসহ যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানান চালকরা। এতে যাত্রীদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। এই সড়কের কিছু অংশ সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ-তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) নির্বাচনী এলাকার এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন’র নির্বাচনী এলাকা।
অপর অংশ জাতীয় পার্টিও এমপি এড: পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ’র নির্বাচনী এলাকা। সরকারি ও বিরোধী দলের দুই এমপি থাকা সত্তেও সাচনাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে বলে জানান এই সড়কের চলাচলকারী যাত্রীর। এ কারণেই হাওর পাড়ের লাখা-লাখ মানুষ চলাচলের ক্ষেত্রে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
জামালগঞ্জ-সাচনাবাজার দিয়ে জেলা শহর সুনামগঞ্জ ও বিভাগীয় সদর সিলেট যেতে হয়। এই সড়ক চলাচলে উপযোগী হলে সাচনাবাজর-জামালগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে পৌঁছতে মাত্র ২০-২৫ মিনিট সময় লাগবে।
সম্প্রতি কিছু অংশ সংস্কার করা হলেও ইচ্ছার চড় থেকে টুকের বাজার পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তার খানাখন্দের কারণে চালকরা আতঙ্কিত। রাস্তার মাঝে-মাঝে গর্ত ও চারপাশে মাঠি না থাকায় প্রতিদিন ঘটছে অসংখ্য ছোট বড় দুর্ঘটনা।
এই সড়কের নেয়ামতপুর ও ইচ্ছারচড় গ্রামের মাঝখানে একটি ব্রীজ নির্মাণের তিন বছর যেতে না যেতেই ব্রীজটি দেবে গেছে। ফলে যেকোন মুহুর্তেই চরম দুর্ঘটনার আশংকা করছেন যাত্রী ও চালকরা। এই সড়কে মাঝে মধ্যে কিছু সংস্কার করতে দেখা গেলেও গুণগত মান তেমন না হওয়ার কারণে একদিকে সংস্কার করার কয়েক দিন পরই খানাখন্দ হয়ে পড়ছে।
চলাচলের পথে সিএনজি যাত্রী মারুফ আহম্মদ জানান, দুই এমপির এই রাস্তা এমন থাকবে এটা কল্পনা করতেও খারাপ লাগছে।
পথচারী জামালগঞ্জের বাসিন্দা রাহুল মিয়া বলেন, দুঃখের সাথে বলতে হয় সরকার দলীয় এমপি থাকা সত্ত্বেও সাচনাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা দেখে মনে হয় এই সড়ক পথে না গিয়ে নদী পথে ট্রলারেই সুনামগঞ্জে যাই।
সিএনজি চালক আবুযর মিয়া বলেন, ভাই কিছু কয়ার নাই, সইয়াই যাইতেছি। গাড়ি চালাতে গিয়ে এখন বুক ব্যাথা করে, সংসার চালাতে গিয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সড়কে গাড়ি চালাই। আমরার এমপি সাহেবরা যদি এই সড়কে একদিন আইয়া রাস্তার একটা ব্যবস্থা করতো আমরা আর যাত্রীরা তারার লাইগা দুয়া করলামনে।
অপর গাড়ি চালক কয়েছ মিয়া বলেন, আমরা ড্রাইভার যারা আছি জীবিকা নির্বাহের জন্য গাড়ী চালাই। অনেকের গাড়ী চালিয়ে সংসার চলে। গাড়ী একবার সিলেট কিংবা সুনামগঞ্জ গেলেই রাস্তার এমন দশায় রিজার্ভ ভাড়ার চেয়ে মেরামত কাজে টাকা ব্যয় হয় বেশি। দিন-দিন রাস্তায় অবস্থা খারাপ হচ্ছে।
এখন কিছুটা সংষ্কারের কাজ হয়েছে কিন্ত তেমন ভালোকরে হইছেনা।
পথচারী জাবের আহম্মদ বলেন, মাঝে মধ্য দেখলাম রাস্তার মেরামতের কাজ হচ্ছে, কিন্তু এগুলো ভালোভাবে হচ্ছেনা , কোন রকম উপরে প্রলেপ দিয়ে যাচ্ছে, যান আপনারা সাংবাদিকরা দেখেনগা।
জামালগঞ্জের শিক্ষার্থী মোনায়েম হোসেন বলেন, রাস্তার মধ্যে যে বিশাল বিশাল গর্ত মনে হয় কিছু দিনের ভিতর রাস্তার বাঁকে বাঁকে পুকুর হয়ে যাবে। জনগণ ও আমরা পথ যাত্রীদের চলাচলে দেখার যেন কেই নেই। শুধু সাচনাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কই নয় ভাটি এলাকার বিভিন্ন উপজেলা থেকে যাতাযাতকারীরা এই দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়তই। এই সড়কের বেহাল দশার কারণে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে বলে জানান বশে কয়েকজন।
এব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, মু.রশিদ আহম্মদ জানান, সাচনাবাজর-সুনামগঞ্জ সড়ক চলাচলের জন্য এখন আতঙ্ক। যে কোন মুহুর্তেই দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে যে কেউ। সড়কের কিছু অংশ ভালো থাকলেও অধিকাংশ সড়কই ভাঙ্গা, খানাখন্দে ভরা। অনেক স্থানেই রাস্তার পাশের মাঠি সড়ে গিয়ে রাস্তা দুর্বল হয়ে পড়েছে। বর্যায় এই রাস্তার অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। প্রশাসন ও স্থানীয় সড়ক-জনপথ বিভাগ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে রাস্তা আরো ভাঙ্গবে। সংস্কার কিছুটা হয়েছে, তবে গুণগত মানের নয়, পুরো সড়কই সংস্কারের ব্যবস্থার জন্য তিনি সরকারের নিকট দাবি জানান।
এ ব্যাপারে সড়ক জনপথ বিভাগের সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শফিকুল ইসলাম দৈনিক নয়া দিগন্ত কে জানান, সাচনাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কে এক অংশে সংস্কার কাজ হয়েছে, বাকী অংশ টেন্ডার হয়েছে, অচিরেই কাজ শুরু হবে।