বাজেট বাড়ে ডিএসসিসির, বাড়ে না কাজের গতি – সংগৃহীত
রাজধানীর বাসাবো বিশ্ব রোড থেকে মাদারটেক রাস্তার দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটারের বেশি হবে না। অত্র এলাকার ৪-৫ লাখ লোকের যাতায়াতের জন্য এটাই প্রধানতম পথ। গত অক্টোবরে এই রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার পর কেটে গেছে প্রায় ৯ মাস অথচ এখনো শেষ হয়নি সংস্কার কাজ। একটু বৃষ্টি হলে রাস্তা দিয়ে হাঁটারও উপায় থাকে না। এহেন দুর্ভোগের কাছে আত্মসর্ম্পন করেই কাটছে এই এলাকার মানুষের দিনকাল।
বাসাবো-মাদারটেকের মতো ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকাই দুর্ভোগের এই চিত্র স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থার মধ্যে অনেকেই ডিএসসিসির কাজের সমালোচনা করেন। প্রতিবছর বাজেট হয়, কাজ না হলে বাজেট যায় কোথায়? সেটাও প্রশ্ন অনেকের। জবাবদিহিতাহীন ভাবে কাজের এই মন্থর গতির মধ্যেই নতুন বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য তিন হাজার ৫৯৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। এতে নিজস্ব উৎস থেকে ৯০৯ কোটি টাকা আর সরকার ও বিদেশী অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। নগরভবনের ব্যাংক ফ্লোর সভাকক্ষে বুধবার ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এ বাজেট ঘোষণা করেন।
গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) ডিএসসিসি তিন হাজার ৩৩৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল। যার সংশোধিত আকার ছিল দুই হাজার ১৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। গত বছর রাজস্ব আয় এক হাজার ৬৪ কোটি টাকা ধরা হলেও তার অর্ধেকেরও কম মাত্র ৪৫৮ কোটি টাকা আয় করতে পারে ডিএসসিসি।
এর মধ্যে বিভিন্ন কর থেকে ৫১৫ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও আয় করতে পারে মাত্র ১৮০ কোটি টাকা। এছাড়া আয়ের সবচেয়ে বড় খাত সরকার ও বিদেশী সহায়তা থেকে দুই হাজার ১২৮ কোটি টাকা ধরা হলেও সহয়তা পাওয়া গেছে মাত্র এক হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। এ কারণে বাজেট পুরো বাস্তবায়ন করতে পারেনি ডিএসসিসি। তারপরও এবছর গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় আড়াইশো কোটি টাকার বেশি বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছরও বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না বলে ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের আয়ের খাতগুলোর মধ্যে নিজস্ব উৎস থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০৯.৪২ কোটি টাকা। এরমধ্যে রেটস অ্যান্ড ট্যাক্স বাবদ ৩৩০ কোটি, বাজার সালামী ৩০৫ কোটি ও বাজার ভাড়া থেকে ৩০ কোটি টাকা। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স ফি থেকে ৮০ কোটি, বিজ্ঞাপন কর বাবদ ৫ কোটি, বাস-ট্রাক টার্মিনাল থেকে ৩.৪৭ কোটি, অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা বাবদ ৮.৫০ কোটি, রাস্তা খনন ফি বাবদ ২০ কোটি, যন্ত্রপাতি ভাড়া বাবদ ৫ কোটি, শিশু পার্ক থেকে ৫ কোটি, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া থেকে ২.৫০ কোটি, সম্পত্তি হস্তান্তর কর খাতে ১০০ কোটি, ক্ষতিপূরণ (অকট্রয়) বাবদ এক কোটি এবং পেট্রোল পাম্প বাবদ দুই কোটি টাকা আয় করার আশা করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি মঞ্জুরী (থোক) খাতে ৭০ কোটি ও সরকারি বিশেষ মঞ্জুরী (থোক) বাবদ ৪৩৯.৮৬ কোটি, সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্প খাতে ২০৪৮.৬২ কোটি টাকা সাহায্য হিসেবে পাওয়ার আশা করা হয়েছে বাজেটে।
বাজেটের উল্লেখযোগ্য ব্যয়ের খাতগুলো হল- বেতন ভাতা বাবদ ৩৪০ কোটি, সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন খাতে ৭৪২.৮৩ কোটি, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ/উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৩৯৫.২৬ কোটি, বিদ্যুৎ, জ্বালানী, পানি ও গ্যাস বাবদ ১০৯ কোটি, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২৭.৭৫ কোটি, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাবদ ২৬ কোটি, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সরবরাহ বাবদ ৭৫৬.১৬ কোটি, বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প খাতে ১৫ কোটি, অপ্রত্যাশিত উন্নয়ন খাতে ব্যয় ৫ কোটি, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণায় ৬.৫০ কোটি, ফিস বাবদ ১৪.৭০ কোটি, কবরস্থান/শশ্মানঘাট সংস্কার ও উন্নয়ন খাতে ৪২.৫০ কোটি, নাগরিক বিনোদনমূলক সুবিধাদি উন্নয়ন খাতে ১৪৩.৭৫ কোটি, পরিবেশ উন্নয়ন খাতে ১৩৮.৯৪ কোটি, প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সংস্থার চাঁদা বাবদ ২.৬০ কোটি, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন খাতে ১৭৪.২৮ কোটি, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ বাবদ ৫.৭৬ কোটি, ল্যান্ডফিল রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন বাবদ ১২১.৭২ কোটি, বাস্তবায়িত প্রকল্পের বকেয়া ম্যাচিং ফান্ড বাবদ ৪৩৯.৮৬ কোটি, নতুন বাজার নির্মাণ বাবদ ২০০ কোটি, জবাইখানা নির্মাণ বাবদ ৬৬.৫৬ কোটি, পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিবাস নির্মাণ বাবদ ৬৪.৫০ কোটি, মাতৃসদন খাতে ৫.২০ কোটি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিশেষ উদ্যোগ খাতে ১০.৭০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এবারের বাজেটে ধনী গরীব নির্বিশেষে সকল প্রকার নাগরিকদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করপোরেশনের কবরস্থানে দাফন এবং শ্মশানঘাটে শেষকৃত্যানুষ্ঠানের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এছাড়া নাগরিকদের অনেকেই শেষ বয়সে এসে পরিবার থেকে পরিত্যক্ত হয়ে অথবা পরিবার-পরিজনহীন নিঃস্ব অবস্থায় আশ্রয়স্থল হারিয়ে পথে-ঘাটে, রেলস্টেশনসহ নানাস্থানে মানবেতরভাবে জীবন-যাপন করতে বাধ্য হন। এটি খুবই হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পশী। এ বিষয়টি উপলব্ধী করে করপোরেশনের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র বৃদ্ধদের জন্য অস্থায়ীভাবে একটি বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণের পরিকল্পণা গ্রহন করা হয়েছে।
বাজেট ঘোষণাকালে মেয়র বলেন, নগর পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনয়নের লক্ষ্যে বাসরুট র্যাশনালাইজেশন ও কোম্পানীর মাধ্যমে বাস পরিচালনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে আহবায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হচ্ছে। আশা করা যায় এ কমিটির মাধ্যমে নগর পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। যারফলে যানজট আরো কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
সাঈদ খোকন বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বদলে গেছে। উন্নয়ন কাজ ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা থেকে আলোকউজ্জ্বল সড়কবাতি, খানাখন্দে ভরা সড়ক মেরামত করা, নতুন সড়ক ও ফুটপাত নির্মাণ, বেদখলে থাকা অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত হওয়া পার্ক, খেলার মাঠ দখলমুক্ত করে বিশ্বমানের আদলে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে যেসব উন্নয়ন বিগত তিন বছরে সম্পন্ন করা হয়েছে তা বিগত এক দশকেও করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এখন উন্নয়নের স্রোতধারায় বদলে যাওয়া নগরী। এ নগরী পুরোপুরি বাসযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এজন্য তিনি নগরবাসীসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা খাদেমুল করিম ইকবাল, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।