পাকিস্তানে ইমরানের চমক

0
171
Print Friendly, PDF & Email

পাকিস্তানে ইমরানের চমক

নিজেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে সব সময় এগিয়ে পাকিস্তান। কিন্তু স্বাধীন হওয়ার ৭০ বছর পেরুলেও তার ছিটেফোঁটা দেখেনি বিশ্ব। মাঝে যোগ হয়েছে জঙ্গিবাদ। যে জঙ্গিত্ব দেশটিকে কুরে খাচ্ছে। গতকাল সেই পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাধারণ ও আঞ্চলিক নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনও শেষ হয়েছে ব্যাপক সংঘাতের মধ্য দিয়ে। সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনা চলছিল। গত রাত ১টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় জাতীয় পরিষদের ১০৫টি আসনে এগিয়ে ছিল ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। তারকা ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ৬২ বছরের ইমরান খান যে এবার পাকিস্তান শাসন করবেন এটা অনেকটা নিশ্চিত। এ ছাড়া নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এন) এগিয়ে রয়েছে ৭১ আসনে। আর বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এগিয়ে আছে ৩৯টি আসনে। একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মুত্তাহিদা কাউমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) ৭টি আসন এবং মুত্তাহিদা মজলিস আমল (এমএমএ) এগিয়ে রয়েছে ৯টি আসনে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২৩টিতে এগিয়ে রয়েছেন। গ্র্যান্ড ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (জিডিএ) এগিয়ে আছে ৭টি আসনে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গতকালের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক সেনা পাহারার (আট লাখ) ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এবারের নির্বাচন অনেক বিষয়ে নতুন মাত্রা পেয়েছিল। মাত্র কদিন আগে জেলে পাঠানো হয়েছে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) প্রতিষ্ঠাতা নওয়াজ শরিফকে। আর ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খানকে নিয়ে সেনাবাহিনীর লুকোচুরি খেলা। পাকিস্তানের রাজনীতি সম্পর্কে বলা হয় রাজনীতিবিদ পুরো খেলা খেলে। কিন্তু গোল দেয় সেনাবাহিনী। অর্থাৎ পাকিস্তানের রাজনীতির প্রধান ‘খেলোয়াড়’ সেনাবাহিনী। সেই সেনাবাহিনীর সুনজর এবার পড়েছে ইমরান খানের ওপর।

পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসন ৩৪২টি। তিনটি বিভাগে দুটি পদ্ধতিতে নির্বাচিত হন তারা। এর মধ্যে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয় ২৭২টি। ৬০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত ও ১০টি আসন জাতিগত ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য। জাতীয় পরিষদের যে ২৭২টি আসনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা হচ্ছে। তার মধ্য থেকে সরকার গঠন করতে প্রয়োজন হবে ১৩৭টি আসন। তবে কোনো রাজনৈতিক দলই যদি এই পরিমাণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তবে গঠিত হবে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট। সে ক্ষেত্রে জোট সরকার আসবে পাকিস্তানে।

গতকাল কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা (বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা) থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়, চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ৮৫ হাজার ৩০৭টি ভোটকেন্দ্রে একযোগে ভোট দিয়েছেন দেশটির মানুষ। এরই মধ্যে লাহোর মডেল টাউনের একটি কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ বা পিএমএল-এনের প্রধান শেহবাজ শরিফ। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান বিলওয়াল ভুট্টো সিন্ধুর লারকানায় ভোট দেন। আর তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধান ইমরান খান ভোট দেন ইসলামাবাদে। পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে আজ (বৃহস্পতিবার) নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।

কেন্দ্রে ভোটারদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে গতকাল সরকারি ছুটি ঘোষণা করে পাকিস্তান সরকার। এবারের নির্বাচনে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটি ৬০ লাখ।

ভোট কেন্দ্রের বাইরে বিস্ফোরণ, নিহত ৩১, আইএসের দায় স্বীকার : পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কোয়েটার ইস্টার্ন বাইপাস এলাকায় একটি কেন্দ্রের বাইরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তিন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। ঘটনার পর কেন্দ্রটিতে কয়েক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। ডন, এএফপি, বিবিসি, দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

পুলিশ জানায়, আহত হয়েছে ২০ জনের বেশি মানুষ। এদের মধ্যে আটজনের অবস্থা গুরুতর। এরই মধ্যে ইসলামী জঙ্গি সংগঠন আইএস হামলার দায় স্বীকার করেছে।

কোয়েটা পুলিশের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, তামির-ই-নাউ মডেল স্কুল কেন্দ্রে ঢুকতে চাইছিলেন সেই আত্মঘাতী ব্যক্তি। কিন্তু পুলিশ বাধা দিলে সেখানেই তিনি নিজেকে উড়িয়ে দেন।

আরও সংঘাত : স্থানীয় পুলিশকে উদ্ধৃত করে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, নাওয়ান কালি এলাকায় এন-১৯ (সোয়াবি ২) ও পিকে-৪৭ (সোয়াবি ৫) আসনে সহিংসতা হয়েছে। সেখানে ভোট কেন্দ্রের বাইরে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হয় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের এক কর্মী। সিন্ধুর লারকানায় একটি ক্যাম্পের বাইরে পটকা বিস্ফোরণ হয়েছে। ওই ঘটনায় চারজন আহত হয়। তবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। বিস্ফোরণের পর লারকানার এনএ-২০০ আসন পিএস-১১ আসনে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

শেয়ার করুন