‘মাইক্রোসকোপ দিয়েও কিছু পাওয়া যাচ্ছে না’

0
157
Print Friendly, PDF & Email

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালাস চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানিতে তার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বলেছেন, এ মামলার বাদি ও প্রথম সাক্ষী হারুন অর রশিদের সাক্ষ্য ছাড়া বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে আর কিছুই নেই। তার সাক্ষের ওপর ভিত্তি করে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মামলার অন্য ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য পড়েছি; প্রথম সাক্ষী ছাড়া এ মামলায় কোনো এভিন্সে নেই। সোনালী ব্যাংকের রেকর্ডে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কিছু পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ক্রিমিনাল মামলা এভিডেন্স দিয়ে প্রমাণ করতে হয়। আর এখানে মাইক্রোসকোপ দিয়েও কিছু পাওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে খালেদা জিয়ার আপিলের সপ্তম দিনের শুনানিকালে আবদুর রেজাক খান এসব কথা বলেন। শুনানিতে তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। গতকাল বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়েছে।

শুনানিতে আবদুর রেজাক খান বলেন, একমাত্র মামলার বাদি ও প্রথম সাক্ষী হারুন অর রশিদ বলেছেন, খালেদা জিয়া অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, টাকা উত্তোলন করেছেন, বণ্টন করেছেন এবং তিনি এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অথচ অন্য কোনো সাক্ষী বলেনি, বেগম খালেদা জিয়া অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, টাকা উত্তোলন করেছেন বা এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এভিডেন্সেও কিছু নেই। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ কোনো দিন ছিল না। এভিডেন্স অ্যাক্ট অনুযায়ী এ মামলায় কিছু নেই।

তিনি বলেন, মামলার ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য পড়ে দেখলাম তারা কেউ ছুটিতে গেছে কেউ চাকরি ছেড়ে গেছে। তাদের ডেকে এনে সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। তাতেও কিছু পাওয়া যায়নি।
শুনানির সময় আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বদরুদ্দোজা বাদল, রাগীব রউফ চৌধুরী, মো: ফারুক হোসেন, আনিছুর রহমান খান, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, সালমা সুলতানা সোমা প্রমুখ। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ বিচার শেষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি দেয়া রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আপিল আবেদন দাখিল করেন খালেদা জিয়া। ২২ ফেব্রুয়ারি এ আপিল গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। তবে নি¤œ আদালতের দেয়া জরিমানার রায় স্থগিত করা হয়। পরে ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। এ জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনে গত ১৬ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন। তবে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়া হয়।
এ মামলার আসামি কাজী সলিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমদের করা আপিলের ওপরও একই সাথে শুনানির আদেশ দেন আদালত। নি¤œœ আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কাজী সলিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমদকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। গতকাল আদালতে শরফুদ্দিনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসানউল্লাহ।
কুমিল্লার এক মামলায় জামিন আবেদন ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় দায়ের করা মামলায় জামিন আবেদন ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে কুমিল্লার সংশ্লিষ্ট আদালতকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও জয়নুল আবেদীন। সাথে ছিলেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, এম মাসুদ রানা, ফাইয়াজ জিবরান মঈন প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আইনজীবীরা জানান, এ মামলায় গত ১ জুলাই খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখিয়ে জামিনের আবেদনের শুনানির জন্য ৮ আগস্ট দিন ধার্য করেন কুমিল্লার আদালত। সেখানে পুনরায় জামিন আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের আংশিক মঞ্জুর করে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানো হলেও জামিন দেয়া হয়নি। মামলায় জামিন না পাওয়ায় হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল আদেশের দিন নির্ধারণ করেছিলন আদালত।

২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে বাস পোড়ানোর ঘটনায় মামলা করা হয়। ২০১৭ সালের ২ মার্চ ওই মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এই মামলা বাতিল চেয়ে গত ২৭ মে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ওই আবেদন এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

কুমিল্লার হত্যা মামলায় জামিন প্রশ্নে রুলের শুনানি ২৬ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলাসহ দুই মামলায় জামিন প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানি আগামী ২৬ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের বেঞ্চে এ দুই মামলার শুনানি হয়। গতকাল শুনানি শেষে আদালত তা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী এ মামলায় হাইকোর্টের জামিন শুনানির এখতিয়ার রয়েছে। হাইকোর্ট আইনগতভাবে তা প্রয়োগ করে জামিন দিয়েছেন এবং আপিল বিভাগ এখতিয়ার আছে কি না তা নির্ধারণ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল আপিল বিভাগে বলেছেন জজ আদালতে জামিন আবেদন পেন্ডিং নেই। সেই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের জামিন দেয়ার এখতিয়ার আছে কি না সে ব্যাপারে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন।
অন্য দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে বলেছেন, জজ আদালতে জামিন আবেদন পেন্ডিং রয়েছে, যা গত ৭ জুন নট প্রেসড হয়েছে। অতএব দুই আদালতে একসাথে জামিন আবেদনের শুনানি চলতে পারে না।

জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, জামিনের দরখাস্ত জজ কোর্টে নট প্রেসড করার জন্য আগে আবেদন করা হয়। গত ৭ জুন ওই আবেদনের ওপর আদেশ দেয়া হয়। সে ক্ষেত্রে হাইকোর্টে জামিন আবেদনের শুনানি গ্রহণে কোনো বাধা ছিল না। তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল আপিল বিভাগে বলেছেন জজ কোর্টে কোনো জামিনের আবেদন মুলতবি নেই। এখন তিনি উল্টো কথা বলছেন।
২ জুলাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় করা হত্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করে জামিন বিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। গত ২৮ মে কুমিল্লার নাশকতার দুই মামলায় হাইকোর্ট থেকে ৬ মাসের জামিন পান খালেদা জিয়া।

শেয়ার করুন