দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা ‘গায়েবের’ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চার কর্মকর্তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের ইমিগ্রেশন বিভাগে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার দুদকের উপপরিচালক শামসুল আলম স্বাক্ষরিত ওই চিঠি পাঠানো হয় বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য।
চার কর্মকর্তা হলেন বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাবিব উদ্দিন আহমেদ, জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবুল কাশেম প্রদানিয়া, জিএম আবি তাহের মো. নুরুজ্জামান চৌধুরী এবং ডিজিএম খালেদুল ইসলাম।
এর আগে সোমবার এই ঘটনা অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।
দিনাজপুর বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে তোলা এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লার কোনো হদিস মিলছে না। বর্তমান বাজার দরে ২২৭ কোটি টাকার কয়লা এখন মজুদ থাকার কথা থাকলেও পরিদর্শন করে এর কিছুই পাওয়া যায়নি। কয়লা কী হয়েছে, সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন ন।
নথিপত্রের হিসাব অনুযায়ী, খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা যেখানে স্তূপ করে রাখা হয়, সেখানে মজুদ ছিল এক লাখ ৪২ হাজার টন। অথচ সেখানে এখন এক টন কয়লাও নেই বলে জানান কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক।
প্রতি টন কয়লার বর্তমান বাজার মূল্য ১৬ হাজার টাকা। সেই হিসাবে, হদিস নেই ২২৭ কোটি টাকার কয়লার।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সদস্য আবু সাঈদ কয়লা খনি এলাকা গত সোমবার পরিদর্শনে যাওয়ার পর কয়লা গায়েব হওয়ার কথা প্রথমে ধরা পড়ে।
এই ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন মহাব্যবস্থাপককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সাথে আরও একজন মহাব্যবস্থাপক ও উপ-মহাব্যবস্থাপককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে কয়লা খনি কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কয়লা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় রবিবার রাত ১০টার দিকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম বিদ্যুৎ সংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে রংপুর বিভাগের আট জেলায়। জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডেও এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা চুরি ও বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিও কয়লা গায়েবের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বিচারের মুখোমুখি করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।