মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা : যা বললেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ

0
104
Print Friendly, PDF & Email

মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা : যা বললেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ – ছবি : সংগৃহীত

বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমীন গাজী, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো: শহীদুল ইসলাম এক বিবৃতিতে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার সফরসঙ্গীসহ গতকাল কুষ্টিয়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা করে রক্তাক্ত করা এবং তার গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিক নেতারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান একই সথে এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সোমবার জাতীয় প্রেস কাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ৫০০ ধারার একটি মানহানির মামলায় জামিনের জন্য গতকাল কুষ্টিয়া আদালতে হাজির হয়েছিলেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম এম মোর্শেদ মামলার শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। একই সাথে আমার দেশ সম্পাদককে পুলিশি নিরাপত্তায় নিরাপদে ঢাকা ফেরার ব্যবস্থা করার আদেশ দেন। এ অবস্থায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ঢাকায় ফেরার প্রস্তুতি নিলে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা তার বিরুদ্ধে সেøাগান দিতে দিতে আদালত এলাকায় ঢুকে। তারা তাকে আক্রমণের অপচেষ্টা চালায়। এ পরিস্থিতিতে মাহমুদুর রহমান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম এম মোর্শেদের আদেশ নিয়ে তারই আদালতে আশ্রয় নেন। কিন্তু বিক্ষোভকারী ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা আদালত এলাকা ঘেরাও করে রাখে। কয়েক ঘণ্টা কোর্টে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকার পর কোর্ট পুলিশ তাকে ঢাকায় ফেরার কথা বলে বের করে নিয়ে এলে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা তার ওপর হামলা চালিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে সারা শরীর রক্তাক্ত করে দেয়। তার সফরসঙ্গী বিএফইউজে মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, প্রকৌশলীদের নেতা ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, কৃষিবিদ নেতা শামীমুর রহমান শামীমসহ সবাইকে মারধর করে স্থানীয় ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতাকর্মীরা।

বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিএফইউজে-ডিইউজের সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস কাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। বিজ্ঞপ্তি।

মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত : বিএনপি

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানের ওপর কুষ্টিয়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর জখম করেছে বলে এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে গতকাল বলা হয়- মাহমুদুর রহমানের ওপর রক্ত ঝরানো পৈশাচিক হামলার দ্বারা সরকার এক ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। আইনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা সমগ্র দেশটাকে রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করেছে। আগামী দিনে আওয়ামী লীগের চেহারা কী বিভৎস রূপ ধারণ করবে সেটিরই একটি মহড়া হয়ে গেল কুষ্টিয়ায় মাহমুদুর রহমানকে ক্ষত-বিক্ষত করার মধ্য দিয়ে। এই নৃশংস ঘটনায় প্রতিবাদী কলামিস্ট, বিবেকবান লেখক-বুদ্ধিজীবীদেরকে সরকার এক অশুভ বার্তা দিলো। পুলিশি পাহারায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা শুধু বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীই নন, তারা এখন টার্গেট করেছে মাহমুদুর রহমানের মতো ফ্যাসিবাদবিরোধী এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে। মাহমুদুর রহমানের ওপর নগ্ন হামলা চালিয়ে মারাত্মক আহত করা হয়েছে। এই হামলা পূর্বপরিকল্পিত এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ আশকারা দেয়া হয়েছে। সরকার গণভিত্তি হারিয়ে কোনো রকমে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সশস্ত্র ক্যাডারদেরকে লেলিয়ে দিয়ে পতনের আগে মারণকামড় দিচ্ছে। মাহমুদুর রহমানের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এই কাপুরুষোচিত হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে হামলাকারি দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। আমি জনাব মাহমুদুর রহমানের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। একই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মোজাফফর আহমেদের শয্যাপাশে ফখরুল
রাজধানীতে এ্যাপোলো হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অসুস্থ ন্যাপের সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদকে গত রাত সাড়ে ৮টায় দেখতে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি তার শয্যার পাশে কিছু সময় অবস্থান করে চিকিৎসকদের কাছ থেকে তার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের স্ত্রী আমিনা আহমেদ ও একমাত্র মেয়ে আইভি আহমেদের সাথেও কথা বলেন মির্জা ফখরুল। এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ দীর্ঘ দিন ধরে হৃদরোগ, মূত্রথলিতে ইনফেকশনসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভোগছেন। গত শুক্রবার বারিধারা পার্ক রোডের মেয়ের বাসায় ৯৬ বছর বয়সী এই বর্ষীয়ান নেতা অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একমাত্র জীবিত সদস্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ উপমহাদেশে বাম রাজনীতির অন্যতম পুরোধা। ২০১৫ সালে সরকার তাকে স্বাধীনতার পদক প্রদান করলে তিনি তা গ্রহণ করেননি।

অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদকে দেখার পর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব। এ সময় বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহসহ সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কুষ্টিয়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় তিনি গুরুতর আহত হলে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা লজ্জাজনক : ইউট্যাব

কুষ্টিয়ার অদালতে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনাকে লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।

রোববার সংগঠনের এক বিবৃতিতে বলা হয়- একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে জামিন প্রাপ্ত হওয়ার পরও সরকার সমর্থিত ছাত্রলীগ-যুবলীগের দ্বারা দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ থেকে আদালত চত্বরেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীদের নির্মম হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান। মিডিয়া জগতের একজন সিনিয়র ও খ্যাতিমান সম্পাদকের ওপর এধরনের বর্বরোচিত অক্রমণ কোনো সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না। আদালত চত্বরে এই হামলা একটি জঘন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা এই ন্যাক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যত প্রজন্মকে নেতিবাচক শিক্ষা দিবে। যা কারোই কাম্য নয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের অন্যতম হলেন- ইউট্যাবের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ড. ওবায়দুল ইসলাম, ড. এম ফরিদ আহমেদ, ড. আব্দুর রশিদ, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম মজুমদার, সৈয়দ আবুল কালাম আযাদ, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ড. আল মোজাদ্দেদী আলফেছানী, ড. গোলাম রব্বানী, ড. মাহফুজুল হক, ড. সিদ্দিক আহমদ চৌধুরী (চবি), ড. এম এ বারী মিয়া, অধ্যাপক খায়রুল (শাবিপ্রবি), ড. শামসুল আলম সেলিম (জাবি), ড. সাব্বির মোস্তফা খান (বুয়েট), অধ্যাপক তোজাম্মেল (ইবি), কৃষিবিদ অধ্যাপক আবদুল করিম, ডা. মো: সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

শেয়ার করুন