পাকিস্তানে নির্বাচনে সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক

0
157
Print Friendly, PDF & Email

পাকিস্তানের নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ভোটকেন্দ্রের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক চলছে দেশটির রাজনীতিকদের মধ্যে। সিনেটে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা।

আজ রোববার সকালে পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন অনলাইনের খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে দেশটির নির্বাচন চলাকালে ভোটকেন্দ্রের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের নেতা শেরি রেহমান। সিনেটে আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে সেনাবাহিনীকে নির্বাচন কমিশনের এই ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দেশটির প্রথম নারী বিরোধীদলীয় নেতা শেরি রেহমান।

শেরি রেহমান বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে দুটি কর্তৃপক্ষের একই ক্ষমতা প্রয়োগ বিভ্রান্তি ও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

নির্বাচনে আইনভঙ্গকারী যে-কাউকে আটকের পর সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলেই বিচার করে দণ্ড দিতে পারবেন—এমন নির্দেশ জারি করে চলতি মাসে নোটিশ পাঠায় নির্বাচন কমিশন। দেশটির স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন এক বিবৃতিতে এ উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করে। কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই পদক্ষেপের সমালোচনা করছে। তারা মনে করে, সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। তবে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।

নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ৩ হাজার ৭১ জন সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এই সংখ্যা ২০১৩ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী সেনাসদস্যদের তিন গুণ।

১৯৪৭ সালে দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর কয়েকবার সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে এবং প্রায় অর্ধশতাব্দী তারা সরাসরি শাসন করেছে।

বলা হচ্ছে, এই নির্বাচনে সেনাবাহিনীর আনুকূল্য পাচ্ছে পিটিআই। দেশটিতে একটি দুর্বল সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক শুরু থেকেই এমনটা চাইছে দেশটির সেনাবাহিনী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য। সেনাবাহিনীর আনুকূল্য নিয়ে পিটিআই ২৫ জুলাইয়ের জাতীয় নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যেতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।

ডনের খবরে বলা হয়, সিনেটে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা শেরি রেহমান নির্বাচনে কয়েকটি নিষিদ্ধ সংগঠনের অংশগ্রহণের সমালোচনাও করেছেন। তাঁর মতে, এর মাধ্যমে মূলধারার রাজনীতিতে চরমপন্থার প্রবেশ ঘটবে।

শেরি রেহমান বলেন, ‘উদার হওয়ার খেসারত কি আমাদের দিতে হবে? এই ধরনের লোকজন (চরমপন্থী) পার্লামেন্টে ঢুকে পড়লে আমরা নিশ্বাস নিতে পারব না।’

শেরি রেহমান আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। নারী ও অমুসলিমদের ওপর হামলা হলে বিশ্বের কাছে আমরা কী জবাব দেব?’ পিপিপির চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি চরমপন্থীদের হামলার ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

সাবেক সিনেট চেয়ারম্যান ও পিপিপির আরেক আইনপ্রণেতা রাজা রাব্বানি নির্বাচন কমিশনের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি নির্বাচন-পূর্ববর্তী জালিয়াতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিশ্চুপ থাকাকে ‘অপরাধমূলক নীরবতা’ বলে মন্তব্য করেন। সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ারও সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কী কারণ থাকতে পারে? আমাদের সেই কারণ জানানো উচিত নির্বাচন কমিশনের।’

পিটিআইয়ের সিনেটর মোহসিন আজিজ অবশ্য সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানান। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সমালোচনা করা এখন একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এভাবে পাকিস্তানের শত্রুদের এজেন্ডা অনুসরণ না করতে তিনি অন্য দলগুলোর রাজনীতিকদের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, পিটিআই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়।

শেয়ার করুন