উজ্জীবিত বিএনপি

0
103
Print Friendly, PDF & Email

প্রায় আড়াই বছর পর প্রকাশ্যে সমাবেশ করে উজ্জীবিত বিএনপি। শুক্রবার (২০ জুলাই) নয়া পল্টনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও তার মুক্তির দাবিতে সমাবেশটিতে অংশ নেন অনেক নেতাকর্মী। তারা বলছেন, ‘অনেকদিন পর এমন সমাবেশ আয়োজন প্রমাণ করেছে আগামী নির্বাচনে বিএনপিই আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ। দলের জনসমর্থন এখনও অনেক বেশি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপিতে ভাটার টান চলছে বলেও যে সমালোচনা হয়েছে, এর একটি মোক্ষম জবাব সমাবেশের মধ্য দিয়ে এসেছে বলে মনে করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি আগামী তিন সিটি নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলেও ধারণা করছেন তারা।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপি যে একটি জনসম্পৃক্ত দল, তা প্রমাণিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও যে খালেদা জিয়ার ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে, তা প্রমাণিত হলো একদিন আগে মৌখিকভাবে অনুমতির পর জনসভায় এত লোকের জনসমাগম হওয়া। মানুষ জনসভায় উপস্থিত হয়ে সরকারকে একটি বার্তা দিয়েছে যে, বিএনপি এদেশের রাজনৈতিক দল। এই দলের জনসমর্থন রয়েছে এবং মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তারা মনে করেন, এটি রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা। তারা খালেদা জিয়ার কারামুক্তি চায়।’

মো. শাহজাহান আরও বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে যে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে, তা দেশের মানুষ যে পছন্দ করছে না, তা প্রমাণিত হয়েছে এই জনসভার মধ্যে দিয়ে। সরকার বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে দিতে চায় না, তার মূল কারণ হচ্ছে আমাদের জনসমর্থন নিয়ে তারা ভীত।’

বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমাবেশ আয়োজনে বাড়তি কোনও খরচই করতে হয়নি দলটিকে। বিশেষ করে মাইক ভাড়া ও অস্থায়ী মঞ্চ করতে ট্রাক ভাড়ার বাইরে অন্য কোনও ব্যয় করতে হয়নি দলের নেতাদের। সাধারণত, সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিত করতে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের ব্যয় হলেও এবার ভিন্নচিত্র ছিল। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি সিনিয়র নেতাদেরও আশান্বিত করেছে। তারা মনে করছেন, দীর্ঘদিন পর নেতাকর্মীরা যেভাবে চাঞ্চল্য নিয়ে সমাবেশে অংশ নিয়েছে, তাতে আগামী দিনে যেকোনও কর্মসূচি সফল করতে সাধারণ নেতাকর্মীদের ওপর আস্থা রাখা যায়।

বিএনপির মিডিয়া উইংসূত্র জানায়, শুক্রবার সমাবেশ সম্পর্কে লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খোঁজ নিয়েছেন ও জরুরি নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে অনলাইন গণমাধ্যম ও ফেসবুকের মাধ্যমে সমাবেশ সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তত্ত্বাবধানে ব্যস্ত ছিলেন তিনি, এমনটি দাবি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খানের।

দলটির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কারাগারে সমাবেশ সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন খালেদা জিয়াও। শনিবার তার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে স্বজনদের একজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুক্রবার সমাবেশ হওয়ার বিষয়টি জেনেছেন খালেদা জিয়া। আজকের দৈনিক থেকেও (২১ জুলাই) সমাবেশ ও নেতাদের বক্তব্য সম্পর্কে জেনেছেন তিনি।’

শুক্রবার (২০ জুলাই) বিএনপির সমাবেশে নেতাকর্মীরা

জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের লাভ-লোকসানের বিষয়টি আপেক্ষিক। এগুলো হচ্ছে একটি দলের চলমান আন্দোলনের একটি ধাপ। সেই ধাপের একটি অংশ আমরা পালন করেছি অনেক দিন পর প্রচণ্ড একটি প্রতিকূল সময়ের মধ্যে। তবে এর মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে এখনও বাংলাদেশের যেকোনও জায়গায় স্বল্প সময়ের আহ্বানে ব্যাপক সংখ্যক জনগণের নৈতিক ও শারীরিক উপস্থিতির সমর্থন পাওয়া যায়। এটা নতুন করে প্রমাণিত হয়েছে এই কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে।’

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আরও বলেন, ‘এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে সচল রাখার জন্য বিএনপি তার সব রকমের আগ্রহের কথা বারবার প্রকাশ করে যাচ্ছে। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। তবে কিছু দাবি রয়েছে। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনও ইতিবাচক সাড়া আসে, সেটা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য ভালো হবে। না হলে এই বিপরীতমুখী অবস্থানে চলার মধ্যে দিয়ে আবার বিভক্ত হবে দেশ।’

ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুক্রবার সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপির আবারও তার সাংগঠনিক সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। আগামী দিনে এই কার্যক্রম আরও এগিয়ে যাবে। নেতাকর্মীরা দলের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন।’

এই প্রসঙ্গে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, সমাবেশে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাম দলগুলোর জোটকে যে অভিনন্দন জানিয়েছেন, তা রাজনীতিতে নতুন মাত্রা তৈরি করবে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দূরত্ব থাকলেও রাজনৈতিক অভিসন্ধি এক হওয়ায় আগামী দিনে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, এমনটি দাবি চট্টগ্রাম বিভাগের এই নেতার।

শেয়ার করুন