অযত্ন-অবহেলায় স্বামীর ভিটায় পড়ে আছেন সেই বৃদ্ধ মা – ছবি : নয়া দিগন্ত
শ্রবণপ্রতিবন্ধী বৃদ্ধ আঃ করিম শিকদার একসময় জীবনের সবটুকু শ্রম দিয়ে পরিবারের ঘানি টেনেছেন। সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তায় করেছেন কঠোর পরিশ্রম। নিজেরা খেয়ে না খেয়ে সন্তানের মুখে তুলে দিয়েছেন খাবার। কিসে হবে সন্তানের কল্যাণ সে চিন্তায় রাতকে দিন, আর দিনকে করছেন রাত।
আর স্ত্রী শাহাতন নেছা (শাহু) সার্বক্ষণিক তার সহযাত্রী হিসেবে পাশে ছিলেন। এই দম্পত্তির রয়েছে পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে। সবাই যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বৃদ্ধ দম্পত্তিদের দেখার সময় বা সুযোগ যেন কারোই নেই।
সন্তানের অবহেলার শিকার হয়ে পরপারের অপেক্ষায় বৃদ্ধ আঃ করিম শিকদারের ঠাঁই হয়েছে বড় মেয়ের বাসায়। আর মা শাহাতন নেছা (শাহু) অযত্ন ও অবহেলায় প্যারালাইজড হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় পড়ে আছেন স্বামীর ভিটায়।
এই মর্মস্পর্শী ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের উত্তর খাগছাড়া গ্রামে।
বার্ধক্য, রোগাক্রান্ত আঃ করিম শিকদার ও তার স্ত্রী শাহাতন নেছার (শাহু) বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এখন শুধুই নিঃসঙ্গতা। বয়সের ভারে ন্যূজ্ব ৭৫ বছরের শাহাতন নেছা (শাহু) এখন শুধুই মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। আর জীবনের শেষ সময়ে স্বামীকেও পাশে পাচ্ছেন না তিনি।
নিজের সম্পর্কে এই বৃদ্ধা বলেন, ‘স্বামীর স্বল্প আয়ে চলত সংসার। ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে সংসারে। সেই সন্তানদের কোলে পিঠে লালন-পালন করে বড় করেছেন। প্রিয় সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় করেছেন কঠোর পরিশ্রম। নিজেরা খেয়ে না খেয়ে সন্তানের মুখে তুলে দিয়েছেন খাবার। কিসে হবে সন্তানের কল্যাণ সে চিন্তায় রাতকে দিন, আর দিনকে করছেন রাত। স্বামী আঃ করিম শিকদার বৃদ্ধ, শারীরিকভাবে অচল ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। সন্তানরা এখন আমাদের অবহেলা করে থাকে। আমাদেরকে বোঝা মনে করে থাকে।
আর্থিকভাবে দুর্বল ও বেকার ছেলে বাদল শিকদার ছাড়া তাদের পাশে নেই অন্য কোনো সন্তান। এই দম্পত্তির এক ছেলে সৌদিপ্রবাসী শহিদ শিকদার আর অপর ছেলে কাতারপ্রবাসী অহিদুল শিকদার।
সৌদিপ্রবাসী শহীদ শিকদারের স্ত্রী রাশিদা বেগম শাহাতন নেছাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই পঁচাত্তর বছরের এই বৃদ্ধাকে স্বামীর ভিটায় ছোট্ট একটি ঘরে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
নিজের দুঃখের কথা বলতেই বারবার কান্নায় মুর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। সন্তানদের স্ত্রীদের অযত্ন ও অবহেলায় না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তার।
ছেলে বাদল শিকদার বলেন, মা দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইসড হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। নিজের পায়ে হাঁটাচলা করতেও পারেন না। এখন চলাফেরা করতে হয় অন্যের সাহায্যে নিয়ে। আমি তার ছেলে কী করে মাকে প্রস্রাব, পায়খানা করাই। আমি অর্থ উপার্জন করতে না পারায় আমার বউসহ অন্য (সৌদিপ্রবাসী শহীদ শিকদার এবং কাতারপ্রবাসী অহিদুল শিকদার) ভাইদের বউরাও মায়ের সেবা যত্ন করছে না। বরং আমি বললে, তারা আমাকে মারপিট করার ও নারী নির্যাতন মামলা দেয়ার হুমকি দিচ্ছে।
মেয়ে নুর নাহার বেগম বলেন, ‘স্বামী-সন্তান নিয়ে আলাদ সংসার আমার, সব সামাল দিয়ে প্রতিদিনই মাকে দেখে আসছি। ভাই-ভাবীদের অযত্ন ও চরম অবহেলায় বাবা এখন বড় বোনের বাড়িতে থাকেন। মা প্যারালাইসড তাই কেউ তার পাশে নেই। মা’র সেবা করার জন্য ভাবীদের টাকা দিতে চাই তবুও তারা আমার মা’র সেবা-যত্ন করবে না। একমাত্র ভাই বাদল শিকদার সেই একটু মা’র দেখা-শোনা করেন।
স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি মোঃ মিজানুর রহমান শিকদার জানান, এরা আমার বংশের লোক। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কয়েক দফায় আঃ করিম শিকদারের ছেলে ও বউদের নিয়ে বসা হয়েছে। তাদেরকে বিষয়টি বুঝানো হয়েছে। কিন্তু তারা মানছেন না। বিষয়টি অমানবিক। তাই প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।