সুন্দরী সোহেলের ‘অসুন্দর’ জগৎ

0
139
Print Friendly, PDF & Email

রাজধানীর মহাখালী এলাকার একই মহল্লায় বাড়ি দু’জনের। সেই সূত্রে সখ্য ও ঘনিষ্ঠতা বাল্যকাল থেকেই। একসঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। বড় হয়েও চলাফেরা করেছেন একই সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে ইউসুফ সরদার সোহেল ওরফে সুন্দরী সোহেল বনানী থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মনোনীত হন এবং তার হাত ধরেই ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনটির স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন কাজী রাশেদ। মহাখালী এলাকার বিভিন্ন দেয়ালে এখনও টিকে আছে সোহেল-রাশেদের পোস্টার। নানা অপকর্মের দায়ে সমালোচিত সোহেলের ‘ডান হাত’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন রাশেদ। গত রোববার তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হয়েছে মহাখালী বন ভবনের উল্টো পাশে অবস্থিত সোহেলের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের পেছন থেকে।

শুরু থেকেই নিহতের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে আসছেন, সুন্দরী সোহেলই রাশেদকে খুন করেছেন। প্রাথমিক তদন্ত শেষে তেমনটাই ধারণা করছেন পুলিশের কর্মকর্তারাও। সংশ্নিষ্টরা জানান, সোহেলের অফিসে গুলি করে হত্যার পর চার ব্যক্তি রাশেদের লাশ বাইরে ফেলে গেছে। সোহেলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি ওই চারজন যুবলীগের স্থানীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। তারাও একই সঙ্গে চলাফেরা করতেন। কিন্তু রাশেদ হত্যার ঘটনায় মামলা হওয়ার পর প্রধান আসামি সোহেল এবং সন্দেহভাজন ওই চারজন গা ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ তাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে।

কিন্তু কী কারণে নিজের ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে খুন করবেন সোহেল? এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদের স্বজনরা বলেন, বনানী থানা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত। রাশেদ তাই সোহেলের সঙ্গ ছাড়তে চেয়েছিল। রাশেদের বাবা আবুল হোসেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির গাড়িচালক। বয়সজনিত কারণে তাকে অবসরে যেতে বলা হয়েছে। বাবার চাকরি রাশেদকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। রাশেদ চাকরি করতে রাজিও হয়েছেন। কিন্তু তাদের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হয়েছেন সোহেল।

রাশেদের বাবা আবুল হোসেন সমকালকে বলেন, সোহেল আমার ছেলেকে ছাড়তে চায়নি। তার সঙ্গ ছাড়লে রাশেদকে খুন করবে বলেও হুমকি দেয়। রাশেদ চাকরিতে যোগ দিতে রাজি হওয়ায় সোহেল নিজের অফিসে নিয়ে তাকে গুলি করে মেরেছে।

রাশেদ হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে সোহেলকে প্রধান আসামি করে রোববার সন্ধ্যায় বনানী থানায় মামলা করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সোহেলের সহযোগী হাসু হাওলাদার, দীপু ও ফিরোজ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বনানী থানার এসআই ফরিদুল ইসলাম জানান, গতকাল পর্যন্ত আসামিরা গ্রেফতার হয়নি। সোহেলের শরীরে গুলিবিদ্ধ হওয়ার সাতটি চিহ্ন রয়েছে বলে জানান তিনি। স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বনানী ও মহাখালী এলাকার বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন সোহেল ও তার ক্যাডার বাহিনী। বিভিন্ন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পর্যন্ত তাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ। কথায় কথায় অস্ত্র বের করা সোহেলের স্বভাব। ২০১৬ সালে ভাড়া চাওয়ায় লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে এক রিকশাচালককে গুলি করেন তিনি। এরপর গ্রেফতার হন। এর আগে ২০১৩ সালে মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে গোলাগুলির ঘটনায় দায়ের হওয়া এক মামলার আসামি হন তিনি। গত বছর মহাখালীতে ঠিকাদার দিদার হোসেন সজীবকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের মধ্যে একজনকে চিহ্নিত করা হয়। আক্রান্ত ঠিকাদার অভিযোগ করেন, বিরোধের জের ধরে সোহেল এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহাখালীর হকার্স মার্কেট ও ফুটপাতের দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলে সোহেলের সহযোগীরা। মহাখালী এলাকার সাততলা ও কড়াইল বস্তিতে গ্যাস-বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ দিয়েছে সোহেলের লোকজন। বাসিন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, একটি গ্যাসের চুলার জন্য মাসে ৫০০ টাকা ও একটি বিদ্যুৎবাতির জন্য ২০০ টাকা হারে আদায় করা হয়। এ ছাড়া সোহেলের সহযোগীরা আমতলী, টিভিগেট, নাখালপাড়াসহ অন্যান্য এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা করে। স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টেন্ডারবাজির অভিযোগও রয়েছে সোহেলের বিরুদ্ধে। সোহেল সরকারদলীয় একজন শীর্ষ নেতার নাম ভাঙিয়ে চলেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দারা। সোহেল লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করেন সার্বক্ষণিক। কীভাবে সোহেল অস্ত্রের লাইসেন্স পেলেন তা নিয়ে আছে নানা প্রশ্নও।

শেয়ার করুন