সংসদে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ জানালেন কাদের

0
153
Print Friendly, PDF & Email

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত মোট যানবাহন ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬২০টি। যার মধ্যে ২২ লাখ ৬ হাজার ১৫৫টি মোটরসাইকেল। ড্রাইভিং লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভার রয়েছেন ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮১৬ জন। অর্থাৎ মন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী গাড়ির তুলনায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভার প্রায় অর্ধেক।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এম আবদুল লতিফের (চট্টগ্রাম-১১) প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, দেশে পর্যাপ্ত ড্রাইভিং স্কুল ও ইন্সট্রাক্টর না থাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ গাড়িচালক তৈরি হচ্ছে না। এ লক্ষ্যে বিআরটিএ যথাযথ পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর ও ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল রেজিস্ট্রেশন প্রদান করছে।

মন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ১২৩টি ড্রাইভিং স্কুলকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। এসব স্কুলের মাধ্যমে দক্ষ ড্রাইভার তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য দক্ষ ও মানবিক গুণ সম্পন্ন পেশাদার গাড়ি চালক সৃষ্টির লক্ষ্যে পেশাজীবী গাড়িচালকদের স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ সময় তিনি ড্রাইভারদের দক্ষতা বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা সংসদে তুলে ধরেন।

বেপরোয়া পথচারীও দুর্ঘটনার কারণ
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে জনকল্যাণ সমিতি মনগড়া রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা শুধু রাস্তার জন্যই হয়, ব্যাপারটা এমন নয়। এখানে রাস্তায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যাপার আছে, সচেতনতারও ব্যাপার আছে। শুধু বেপরোয়া ড্রাইভার দায়ী নয়, শুধু রাস্তাও দায়ী না। বেপরোয়া পথচারীরাও অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনার কারণ।

নিজের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি কিছুক্ষণ আগে যখন রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। আমি দুটি পয়েন্টে দেখতে পেলাম যে, হঠাৎ করে এক ঝাঁক তরুণ রাস্তায় নেমেছে। গাড়ি তো চলছে, চলমান গাড়ি। সে সময় যদি কেউ গাড়ির তলায় পিষ্ট হয়, কাকে দায়ী করবেন? তারপর দেখলাম একটা মেয়ে রাস্তা পার হচ্ছে মোবাইলে কথা বলতে বলতে।

চলমান গাড়ি অনেক কষ্টে থামাতে হলো। সে অবস্থায় চলমান গাড়ি যদি তাকে চাপা দেয়, সেটার জন্য কে দায়ী হবে? আপনি যাচ্ছেন, গাড়িতে চড়ে, দিক বিজয়ী আলেকজান্ডার অনেক সময় ড্রাইভার হয়ে যায়! তিনি বলেন, অনেক সময় যাত্রীরা আনন্দে বাসের জানালা দিয়ে হাতটাকে প্রসারিত করেন। তখন আরেকটা গাড়ি এসে আপনার হাতটা নিয়ে গেল, এখানে কে দায়ী? এখানে শুধু বেপরোয়া ড্রাইভার দায়ী নয়, শুধু রাস্তাও দায়ী না। বেপরোয়া পথচারীও অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে জনকল্যাণ সমিতির রিপোর্টকে ভুয়া আখ্যায়িত করে মন্ত্রী বলেন, এনডিটিভি অনলাইনে দেখলাম ভারতে প্রতি ঘণ্টায় ১৭ জনের মৃত্যু হয় সড়ক দুর্ঘটনায়। সড়ক দুর্ঘনায় আমাদের দেশ এশিয়া মহাদেশের মধ্যে এগিয়ে এটা সত্য নয়। ভুয়া একটা জনকল্যাণ সমিতি বাংলাদেশে আছে। যাদের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে এমন একটা লোক এই সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়। সময়ে সময়ে মতলবি মহল তাকে আশ্রয় দেয়, প্রশ্রয় দেয় এবং আমি দেখি সমাজের বিশিষ্টজনও ওই লোকটির সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, সদ্য শেষ হওয়া ঈদে পুলিশ এবং সংবাদপত্রে রিপোর্টে যেখানে ৪২+৪২ অর্থাৎ ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে তারা মনগড়া তথ্য দাঁড় করিয়েছে যে ৩৩৯ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এগুলো মনগড়া রিপোর্ট, তথ্য। আমাদের এখানে ১০ হাজার লোকের মৃত্যু গত ২০ বছরে রেকর্ড হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও একটা রিপোর্ট আছে। এই বছরে যেটা রেকর্ড, সেটাও ৫ হাজারের বেশি নয়। মনগড়া রিপোর্ট দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা মোটেই উচিত না। তাই এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকা দরকার।

শেয়ার করুন