নির্বাচন যতটা ঘনিয়ে আসছে, অনিশ্চয়তা ততটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্বাচন সম্পর্কে জনগণের আগ্রহ এবং উদ্বেগ ততই ঘনীভূত হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে এ দেশের মানুষের উপলব্ধি মাঝে মধ্যেই উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করে। নির্বাচনটি যদি হয় স্বতঃস্ফূর্ত তাহলে সাধারণ মানুষ আনন্দে আকুল হয়ে ওঠে। আর যদি নির্বাচনটি হয় জালিয়াতির তাহলে মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মনে মনে হলেও। শক্তির মহড়ার কারণে তাদের ক্ষোভ প্রকাশের উপায় থাকে না। কিন্তু ‘উত্তর’ দেয়ার জন্য উপায় খুঁজতে থাকে তারা। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে অনেক এলাকার জনগণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচন প্রকৌশলকে কৌশলে মোকাবেলা করেছে। মুখে নৌকার জয়গান গেয়ে, বুকে নৌকার প্রতীক এঁটে, ধানের শীষে ভোট দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের ফন্দি-ফিকিরের কথা যতই শোনা যাচ্ছে, জনগণের পক্ষ থেকে জবাব দেয়ার কলাকৌশল ততই শাণিত হচ্ছে।
সংবিধান অনুযায়ী, আগামী অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আওয়ামী লীগ প্রণীত অভিনব নির্বাচনী আইনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন হওয়ার কথা। অথচ সব বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এ বিধিব্যবস্থা বাতিলের কথা বলা হচ্ছে। তবুও সরকারের তরফ থেকে কোনো রা নেই। তারা হয়তো ‘কানে দিয়েছে তুলো, চোখে দিয়েছে ঠুলি।’ ভেবেছে, তারা যদি শুনতে চায় তাহলে তাদেরই বিপদ। ক্ষমতা চিরস্থায়ীকরণের পথে এটি একটি আইনগত রক্ষাকবচ। তারা জেনে শুনেই ব্যবস্থাটি বহাল রেখেছেন। ধরে নেয়া যাক, কোনো জরুরি কারণে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয় তাহলে তারা ওই সংসদের মেয়াদ এ অবস্থায় বাড়িয়ে নিতে পারবেন। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি যখন বাকশাল কায়েম করা হয়, তখন চতুর্থ সংশোধনী অনুযায়ী ওই তারিখ থেকে সংসদের মেয়াদ আরো পাঁচ বছর বাড়িয়ে নেয়া হয়েছিল। সেবারে পারলে এবারে পারবে না কেন?
এভাবে সংসদের মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে পারলে তারা নির্বাচনের ঝুঁকি নেবেন কেন? সংসদের মেয়াদ বাড়িয়ে নিলে বিদেশে সরকারের বৈধতা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। নির্বাচন সম্পর্কে, ক্ষমতাসীন দল ক্রমেই হতাশ ও কৌশলী হয়ে উঠছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। নির্বাচনে বিজয়ের জন্য যেসব কার্যব্যবস্থা তারা গ্রহণ করেছেন, তা বরং বুমেরাং হয়ে তাদের জনপ্রিয়তায় ধস নামাচ্ছে। খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়েও নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না তারা। তাই শোনা যাচ্ছে, তাকে চিকিৎসার নামে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা আঁটা হচ্ছে। জনমত বলছে, বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি ক্রমেই আরো সহানুভূতিশীল হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষ। পরিত্যক্ত একটি ভবনের নির্জন কুঠরিতে তাকে যেভাবে দিন দিন বাস্তবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে তাতে কোনো বিবেকবান মানুষ ব্যাকুল না হয়ে পারে না। নির্বাচন সম্পর্কে অভিজ্ঞজনেরা বলেন, বাইরের খালেদা জিয়ার চেয়ে ভেতরের খালেদা জিয়া অনেক বেশি শক্তিশালী। উদাহরণ হিসেবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনের কথা বলা যেতে পারে। সেখানে যখন বেগম জিয়ার কষ্টের কথা বলে নেতারা ভোট চাইছেন, তখন দেখেছি ছলছল করে উঠছে গণমানুষের চোখ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ক্ষেত্রেও একই কথা। তার দশ বছরের জেল এবং লন্ডন প্রবাস- সবই যে ‘পলিটিক্স’ একজন বোকাও তা বোঝে। এ দেশের রাজনীতির বাস্তবতাই এরকম যে, যারা সম্মোহনী নেতৃত্বের উত্তরাধিকার বহন করে তাদের সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক বিষয় গ্রহণ করতে চায় না সাধারণ মানুষ। ২০০৭ সালে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস যখন ‘তৃতীয় মাত্রা’র রাজনীতি নিয়ে অগ্রসর হন তখন তার মতো মহৎ মানুষকেও গ্রহণ করেনি দেশবাসী। ‘১/১১’-এর কুশীলবদের মাইনাস টু থিওরি ব্যর্থ হয়েছে ওই বাস্তবতার কারণেই। এখন তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য জোর তদবির চলছে এবং এর ফলে নতুন করে সাধারণ মানুষ তার সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠছে। জনগণ বুঝতে পারছে তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিশ্চয়ই বড় ফ্যাক্টর। তা না হলে তাকে নিয়ে ক্ষমতাসীন মহলের এত হইচই কেন? পর্যবেক্ষক মহল দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করেন, আগামী নির্বাচনে যাতে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান অংশগ্রহণ করতে না পারেন সে জন্য বহু কলাকৌশল আঁটা হয়েছে।
সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে দেশে এবং বিদেশে যে বৈধতা পাওয়া যাবে না- সেটা শাসকগোষ্ঠী অনুধাবন করছে। তাই তাদের প্রথম কৌশল হচ্ছে, ২০১৪ সালের প্রহসনমূলক নির্বাচনের মতো বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। আগের সুরে সুর মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’দিন আগেও বলেছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, না করা কোনো দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সরকার চাইলেই তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য বাধ্য করতে পারে না। দ্বিতীয় কৌশল হচ্ছে, বিএনপিকে বিভক্ত করা। বেগম জিয়াকে জেলে নেয়ার পর কিন্তু এই কৌশল অকার্যকর হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে যা করা সম্ভব ছিল, অস্বাভাবিক সময়ে সেটা করা দুরূহ। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এমন কোনো নেতা নেই যাকে নিগ্রহ করা হয়নি। পার্টির এই ঘোর বিপদের সময়ে বিশ^াসঘাতকতার তকমা কেউই নিতে চাইবেন না।
ক্ষমতাসীনদের ধারণা ছিল, বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে পুরলে দলে নেতৃত্বের সঙ্কট সৃষ্টি হবে। গণমাধ্যম পরিতুষ্টির সাথে উল্লেখ করছে, বিএনপিতে কার্যকর ‘কালেক্টিভ লিডারশিপ’ বা যৌথ নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়েছে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বিএনপি এখন বেশি শক্তিশালী। ক্ষমতাসীনদের তৃতীয় কৌশল ছিল খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের মাধ্যমে একটি অরাজক ও বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি করা। বেগম জিয়া নেতাকর্মীদের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মানুষ বুকে পাথর বেঁধে তাই ক্ষোভকে সংহত করেছে। ছোটখাটো ঘটনা ব্যতীত তেমন কোনো সহিংসতা ঘটেনি। সুতরাং সহিংসতার দায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাথায় রাখার সুযোগ ঘটেনি। যেখানে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের কারণে প্রশাসন উদার হওয়ার কথা, এখন সেখানে একাধিক গণগ্রেফতার ঘটেছে। এখনো সরকার তারা তালে আছে, বিরোধীদের উত্ত্যক্ত করার মাধ্যমে বেতাল করে তোলা হবে। অবশ্য বিএনপির নেতারা সতর্কতার সাথে ক্রমেই আন্দোলনকে বেগবান করে তুলছেন। চতুর্থত, আন্দোলন যদি সহিংস আকার ধারণ করে তাতে আগের তিন মাসের মতো সরকার সে আগুনে ঘি দেবে আর আগের মতোই দায়ী করা হবে বিএনপিকে। নির্বাচনের পরিবেশ ক্ষুণœ হয়েছে বা নির্বাচন করার মতো অবস্থা নেই- এই অজুহাত তুলে নির্বাচন স্থগিত করে দেয়া অসম্ভব নয়।
এটা পানির মতো পরিষ্কার, যে নির্বাচনে বিএনপি জিতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হঠিয়ে দেবে, সে নির্বাচন আওয়ামী লীগ করবে না। এখনই চার দিকে যে আঁচ পাওয়া যাচ্ছে, তা ক্ষমতাসীনদের জন্য শুভ নয়। প্রয়োজনে তারা জেদের ভাত বিশেষ প্রাণীকে খাওয়াবেন তবুও শত্রুকে সুযোগ দেবেন না। সুতরাং সে ক্ষেত্রে ‘তৃতীয় পক্ষ’কে ১/১১ স্টাইলে আবারো দায়িত্ব নেয়ার জন্য ডাকাও বিচিত্র নয়। অথবা তারা ‘অনিবার্যতাবশত’ দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে। পঞ্চমত, এই শেষ কৌশলের আগে গণভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার মেয়াদকে অন্তত ২০২১ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার চেষ্টা চলতে পারে। গণভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাকে বৈধ করার উদাহরণ এ দেশেই রয়েছে। বিরোধী দলগুলোর সামনে সে উদাহরণ তুলে ধরা হবে। তা ছাড়া ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। ক্ষমতাসীনদের বড় খায়েশ ক্ষমতায় থেকে এ উৎসব পালনের। এ ছাড়া ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী পালিত হবে। তাদের এটাও একটি সাধ, ক্ষমতায় থেকে এটা উদযাপনের।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশের হস্তক্ষেপের প্রবণতা অনেক পুরনো। পাকিস্তান আমলে পাতলা খান লেনে যদি কোনো পটকা ফুটত তখন রাজনীতিবিদেরা একে মার্কিন সিআইএ অথবা রুশ কেজিবির কাজ মনে করতেন। ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সেনানিবাসে অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থানের যে ঘনঘটা চলছিল, তাতে বিবিসির তৎকালীন দিল্লি সংবাদদাতা মার্ক টালি মন্তব্য করেছিলেন, ‘বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলি এত দ্রুত ঘটছে যে, বিদেশী শক্তিসমূহকে সব ঘটনার সাথে তাল রেখে সমন্বয় সাধনে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ অথচ বাংলাদেশের লোকেরা, ওই সব ঘটনাকে বৈদেশিক চক্রান্ত বলে বিশ^াস করে আসছে। ২০১৪ সালের অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পর বৈদেশিক শক্তিগুলো অবশেষে নির্বাচনটি সাংবিধানিক অনিবার্যতা’ হিসেবে মেনে নেয়। সরকার বড় শক্তিগুলোকে নিশ্চিত করেছিল, কিছু সময় পরে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীকালে সরকার এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলেও অবশেষে কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং রাজনৈতিক প্রতারণার কাছে অন্য সব বিদেশী শক্তি পরাজয় শিকার করেছে। সে কারণে এবার অনুরূপ নির্বাচন করা সরকারের জন্য একরকম অসম্ভব হয়ে পড়বে। ওই সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি ন্যক্কারজনকভাবে ভারতের কংগ্রেস সরকারের প্রত্যক্ষ সমর্থনের কথা নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে। নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের অকূটনৈতিক আচরণ, এরশাদীয় নাটক এবং পারিপাশির্^ক সমর্থন আওয়ামী লীগ সরকারকে সাহস যুগিয়েছে। এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তখন দিল্লির ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। এর সাধারণ ও স্বাভাবিক মিত্র আওয়ামী লীগ। পরে বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ায় বিপাকে পড়ে যায় আওয়ামী লীগ।
কংগ্রেসের প্রীতি ভুলতে খানিকটা সময় লাগে। তবে ভারতের জাতীয় স্বার্থে বিজেপি আওয়ামী লীগকে কাজে লাগিয়েছে। এখনো বিজেপির সাথে কংগ্রেসের মাত্রায় সখ্য গড়তে পারেনি আওয়ামী লীগ। শোনা যায়, বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারত সরকারের মাঝে দুটো মত আছে। শাসক বিজেপি অতটা আস্থায় নিতে পারছে না আওয়ামী লীগকে। তার কারণ, আওয়ামী লীগের বিজয় দ্বারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস ভারতের ২০১৯ সালের নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে। সুতরাং ভারত বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব চায়, কোনো দল বা গোষ্ঠীর নয়- এ ধরনের কথা শোনা যায়। সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগের ‘হাইব্রিড, প্রতিনিধি দলের ভারত গমন। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এ ধরনের সফর জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। ভারতের পত্রপত্রিকা এবং কূটনৈতিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে যেসব খবর ছাপা হয়েছে তা থেকে বোঝা যায়, ফলাফল শূন্য। তবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই সফরকে ‘ফলপ্রসূ এবং নির্বাচনী আলোচনাবহির্ভূত সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলছেন। তবুও জনমনের সন্দেহ ও অবিশ^াসের ছায়া কাটেনি। বাংলাদেশ অচিরেই এর যথার্থতা বুঝতে পারবে। ভারতের আমলাতন্ত্র রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্কের চেয়ে সরকারি সম্পর্ককে শ্রেয় মনে করে। বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে এমনও বলা হচ্ছে বিজেপি নিরপেক্ষ থাকতে চাইলেও সাউথ ব্লক ক্ষমতাসীনদের পক্ষেই থাকতে চায়। ভারত এখনো একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আশা করে বলে তাদের কর্তা ব্যক্তিরা বলে বেড়াচ্ছেন। তাহলে ভারতের অবস্থান কী অটুট রয়েছে?
এবার আসা যাক চীনের প্রশ্নে। সাধারণত চীন অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে চীনাদের মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। চীনা রাষ্ট্রদূত খোলাখুলিভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন। ঢাকায় চীনা কূটনীতিকেরা স্পষ্ট ভাষায় বিএনপির অংশগ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার চীনা অর্থনৈতিক স্বার্থ পরিপূরণে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফর-পরবর্তী চুক্তিগুলোর বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার তেমন আন্তরিকতা দেখায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। সুতরাং চীনের সমর্থন কোন দিকে থাকবে, তা সহজেই বোঝা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের ভিত্তি সবসময়ই জাতীয় স্বার্থ। হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে বিএনপি হয়তো অধিক সুবিধা পেত। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় সম্পর্কটি শুধু আমলাতন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে এই আমলাতন্ত্র গতানুগতিকভাবে ক্ষমতাসীনদের বিপরীত মেরুতে রয়েছে। অন্যান্য শক্তিধর জাতি বিশেষত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্তব্য প্রায়ই ক্ষমতাসীনদের বিব্রত করে থাকে। অতএব বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সমুজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাটি যেমন গণতন্ত্রকামী মানুষকে উৎসাহিত করছে, তেমনি ক্ষমতাসীন দলের জন্য হতাশার কারণ রয়েছে। আর সে কারণেই তারা নির্বাচন নিয়ে দুশ্চিন্তায়। সামগ্রিকভাবে প্রকাশিত জনমত, এজেন্সি রিপোর্ট এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিবেদন তাদের পক্ষে নয় বলে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। কয়েক মাস আগে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ যে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখিয়েছে, তাতে এখন ভাটা পড়েছে। নির্বাচন কমিশন দেশ ও বিদেশের চাপে যথাসময়ে নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণার জন্য সরকারের ওপর চাপ দিয়ে যাচ্ছে বলে পর্যবেক্ষক মহল সূত্রে প্রকাশ। অবশ্য জনগণ নির্বাচনকে পরিবর্তনের একটি সুযোগ মনে করছে। জনগণ, সরকার ও নির্বাচন কমিশন- এই ত্রিপক্ষীয় চাপে অবশেষে নির্বাচনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়, তা এখন দেখার বিষয়।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়