আবহাওয়ায় অস্বাভাবিকতা বজ্রপাত বৃদ্ধির আশঙ্কা

0
162
Print Friendly, PDF & Email

বর্ষাকাল শুরু হতে না হতেই গত ১৫ দিনে সারা দেশে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় দশজন। আগামী কয়েক মাসে বজ্রপাতজনিত দুর্ঘটনার মাত্রা আরো ব্যাপক হতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে এরই মধ্যে সেসব আলামত পাওয়া যাচ্ছে। চলতি সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন জেলায় আকস্মিক টর্নেডোসহ অস্বাভাবিক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের শিলা পড়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ ফারুখ বজ্রপাতের ব্যাপারে নয়া দিগন্তকে বলেন, সাধারণত মার্চ পর্যন্ত আবহাওয়া তেমন গরম হয়ে ওঠে না। এপ্রিলের শুরুতে আবহাওয়া গরম হতে থাকে, মাসের মধ্যবর্তী সময়ে উত্তাপ ছড়ায়। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অন্য রকম বলে মনে হচ্ছে। মার্চের মাঝামাঝিতেই আবহাওয়ায় উত্তাপ দেখা যায়। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এবার বজ্রপাত পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। বাড়বে ঝড়-বৃষ্টির পরিমাণও।

এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদফতরের বজ্রপাত বিশেষজ্ঞ মো: রাশেদুজ্জামান নয়া দিগন্তকে জানান, চলতি বছরে মার্চের ১২, ১৩ ও ১৪ তারিখে তাপমাত্রা বাড়তে দেখা গেছে। তিনি জানান, এপ্রিলের মাঝামাঝিতে তাপমাত্রা আরো বাড়বে। তিনি জানান, সাধারণত মার্চের শেষ দিকে বজ্রপাত শুরু হয়। এপ্রিলের শেষ বিকেলে আর ভোররাতে কালবৈশাখী, টর্নেডোসহ বজ্রপাতের আধিক্য দেখা যায়। তিনি জানান, এ সময়ে রাজশাহী, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও সিলেটের দিক থেকে বজ্রপাত বেশি হয়। এবার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই যেমন শীত পড়েছিল, তেমনি বিদায়ও নেয় তাড়াতাড়ি। অনুরূপ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে এ অঞ্চলে গরম পড়তে শুরু করে। আর এ জন্য আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা- শীতের মতো এ বছর রেকর্ড গরম পড়তে পারে। তেমনি প্রকট আকার ধারণ করতে পারে ঝড়-ঝঞ্ঝা।
গত বছর বজ্রপাতে ২০০ জন নিহত

অধ্যাপক ড. এম এ ফারুখ তার ব্যক্তিগত গবেষণায় দেখেছেন গত বছর সারা দেশে ২০০ জনের প্রাণ কেড়েছে বজ্রপাত। আর আহত হয়েছে ৪৭ জন। অপর দিকে গত বছর শ্রীমঙ্গল ও সিলেটে বজ্রপাতের তাণ্ডব পরিলক্ষিত হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বজ্রপাত নতুন কোনো বিষয় নয়। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বজ্রপাতের ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অধিকহারে বজ্রপাত হয়ে থাকে। তিনি জানান, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে শ্রীমঙ্গল, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকাকে অধিক বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

বজ্রপাতের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অস্থিতিশীল মেঘে বিদ্যমান ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনকালে বজ্রের সৃষ্টি হয়, যা প্রচুর ঝলকানি দিয়ে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে। অতি উচ্চ মাত্রার এই বিদ্যুৎ সঞ্চালনকালে সামনে উপস্থিত যেকোনো প্রাণীর মৃত্যু অতি সাধারণ ব্যাপার। তাই বজ্রপাতের সময় উন্মুক্ত বা খোলা জায়গায় চলাচলের পরিবর্তে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করা প্রয়োজন। একই সাথে বাড়িঘরে বজ্রপাত নিরোধক আর্থিং-ব্যবস্থা রাখাও জরুরি। এ জন্য টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালালে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। মফস্বল এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও স্কুল কলেজেও প্রচারণার কর্মসূচি নেয়া যেতে পারে। এ ছাড়া বজ্রপাত যাতে না হয় সে জন্য তালগাছসহ ব্যাপকভাবে বৃক্ষ রোপণ করা প্রয়োজন, যা সরকারি উদ্যোগে হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত।

শেয়ার করুন