রোজ বোগারস জন্ম ইতালিতে এবং দুই বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসেন। তাই তিনি তার নিজেকে একজন ইতালীয় নাগরিকের পরিচয়ের চেয়ে একজন অস্ট্রেলীয় পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করেন।
রোজ বোগারস বর্তমানে মেলবোর্নের মিনারেত কলেজের ছাত্র ও পরিবার কল্যাণ সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এবং তার জার্মান স্বামী দু’জনেই ইসলাম ধর্মান্তরিত হয়েছেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে ইসলাম নিয়ে তারা বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং অনেক মুসলিমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
একজন মুসলিম হওয়ার কারণে তাকে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ‘অস্ট্রেলিয়া প্লাস’কে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি নিজের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন-
প্রশ্ন : যখন ছোট ছিলেন তখন কখনো কী ভেবেছিলেন যে আপনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হবেন?
উত্তর : আসলে ধর্মীয় বিশ্বাস আমাদের পরিবারের মধ্যে প্রধান কোনো বিষয় ছিল না। আমরা গির্জায় যেতাম, ক্রিসমাস ও ইস্টার সানডে উদযাপন করতাম। এটি আমাদের পরিবারে প্রধান কোনো বিষয় ছিল না। কিন্তু একটি ইতালিয়ান পরিবারে বেড়ে ওঠা নিয়ে এখনো আমাদের কিছু নির্দেশিকা রয়েছে।
প্রশ্ন : কেন আপনি ইসলাম অধ্যয়নের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠলেন?
উত্তর : ইসলামে মানবাধিকারের কথা বলা হয়েছে। আমরা মানুষ হিসেবে একে অপরের সঙ্গে যে মিথস্ক্রিয়া করে থাকি, সেসম্পর্কে ইসলামে বলা হয়েছে। ইসলাম রাষ্ট্রীয় আইন, বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে এর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ তা নিয়ে আলোচনা করে। ইসলাম সম্পর্কে গবেষণার পর আমার কাছে মনে হয়েছে, এটা আমার জন্য অনেক বড় কিছু। এটা আমাকে নির্দেশনা দেয়।
প্রশ্ন : আপনি অমুসলিমদের কাছে ইসলামের পরিচয় তুলে ধরতে অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ডের সক্রিয় রয়েছেন। কখনো কী ক্লান্ত মনে হয়?
উত্তর : হ্যাঁ, অনেক সময় সত্যিই ক্লান্ত হয়ে যাই। যেসব লোক আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে তারাও আমাকে একইভাবে বলেছে:‘আপনি কি এর ন্যায্যতা প্রমাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না? অন্যায় যারা করছে আপনি কী তাদের একজন নন?’
আমি মনে করি যে এমন কিছু মানুষ সবসময় থাকতে হবে যারা সত্যের প্রচার করবে।মানুষকে ভালো কাজের দিকে আহ্বান করবে। আমাদের কিছু বিস্ময়কর মানুষ আছেন যারা চমৎকার সব কাজ করছেন। শিক্ষার জন্য তারা গ্রামাঞ্চলে ছুটে বেড়াচ্ছেন। আসলে ভালভাবে বোঝার উপায় হচ্ছে মুসলমানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তাদের সঙ্গে কথা বলা। আপনি আপনার দাঁত ওঠানোর জন্য নিশ্চয় একজন গাইনির ডাক্তারের কাছে যান না, আপনি এজন্য একজন দন্ত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে থাকেন।
প্রশ্ন : আপনি কী মনে করেন যে ইসলামের নামে অপরাধ বন্ধ হবে বা হওয়া উচিৎ?
উত্তর : প্রায় প্রত্যেকটি মুর্হতেই গণমাধ্যমে আমি নেতিবাচক কিছু শুনতে পাই। আমি তখন আল্লাহকে বলি,‘হে আল্লাহ, দয়া করে আপনি এদেরকে মুসলমান হিসেবে স্বীকার করবেন না’।
ইসলামের নামে অপরাধ সত্যিই নিন্দনীয়। অপরাধ করে আপনি কিভাবে ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করার সাহস দেখান বা কিভাবে আপনি আল্লাহর নাম বলার সাহস পান? কেন আপনি আল্লাহু আকবার বলছেন? আপনি কি এর অর্থ বোঝেন? আপনি কী জানেন আপনি কি করছেন? আপনি কি জানেন যে একজনকে হত্যা করার অর্থ হচ্ছে আপনি সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করছেন?
প্রশ্ন : গণমাধ্যমের খবরে সন্ত্রাসের নামে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক কথা বলা হয়ে থাকে এবং এটি যখন আপনার স্কুলে শিক্ষার্থীরা শুনকে পায়, তখন আপনি তাদের কী বলেন?
উত্তর : আমার কাছে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আসে এবং বলে, ‘মিডিয়ার খবরে আমি অসুস্থ এবং ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু আমরা যে এটা পছন্দ করি না তা বুঝানোর জন্য ছাত্র হিসেবে আমরা কী করতে পারি?’
সুতরাং বলতে পারেন এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার জন্য আমাদের বেশ কিছু উদ্যমী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তারা সংহতি দিবস পালনের জন্য বাইরে গিয়েছেন এবং জনগণের সঙ্গে কথা বলেছেন। বৃহত্তর ডান্ডেনং শহরে তারা একটি কর্মশালার আয়োজন করেছিল; যেখানে অল্পবয়সী মেয়েরা মানুষদের বলত, ‘ইসলাম সম্পর্কে আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন’ এবং সেখানে তাদের ছোট একটি বুথ ছিল। এই বুথ থেকে তারা অনেকটা প্রচারপত্রের মতো করে মানুষকে বলেছে, ‘আমরা এক আল্লাহতে বিশ্বাস করি, আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, আল্লাহ সৌন্দর্যকে ভালবাসেন’।
এটা মানুষকে কৌতুহলী করে এবং তারা প্রশ্ন করতে শুরু করে যে, এর অর্থ কি। সুতরাং, এটি একটি সংলাপ তৈরি করে।
প্রশ্ন : যখন মানুষ মনে করে যে ইসলামের মূল্যবোধ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তখন আপনি তাদের কী বলেন?
উত্তর : এটা খুবই দুঃখের, কারণ প্রতিটি ইসলামিক মূল্যবোধই হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান মূল্যবোধ। ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার মূল্যবোধের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। একমাত্র ভিন্ন যে বিষয়টি তা হচ্ছে আমরা অ্যালকোহল বা মদ পান করি না। আমি ছোট থেকেই এখানে বড় হয়েছি, আমি ভিন্ন কিছু দেখি না। আপনি জানেন, আমি অস্ট্রেলীয়দের মতোই আমার কর পরিশোধ করি এবং আমি গরিবদের সাহায্য করার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন : জীবনের জন্য আপনি কি কৃতজ্ঞ?
উত্তর : আমি মনে করি কৃতজ্ঞ হওয়ার অর্থ হচ্ছে নিজেকে জাগ্রত করা এবং আমার জীবন আছে তাই আমি আমার চারপাশের সৌন্দর্যকে দেখতে পারছি এবং আমার যা আছে মানুষের কাছে তা নেই। আল্লাহ আমাকে চমৎকার একজন স্বামী, সুন্দর সন্তান দেয়ার মাধ্যমে আমাকে তার এই সৌন্দর্য দান করেছেন এবং যখন আমার জীবনে কিছু চ্যালেঞ্জ আসে, তখন তা মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি।