নির্বাচন : বিএনপির চার এজেন্ডা

0
408
Print Friendly, PDF & Email

কারাবন্দী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। দলটির যৌথসভায় এ আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি না পেলেও বিভাগীয়পর্যায়ের সমাবেশগুলোতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ জমায়েতের।

দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, এসব সমাবেশে বিএনপি খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী রেখে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়টি যেমন তুলে ধরবে, একই সাথে সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনেরও দাবি জানানো হবে।

দলের সার্বিক রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে গত রোববার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে যৌথসভা করেছে বিএনপি। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। তিন ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনই ছিল মূল এজেন্ডা। বৈঠকের শুরুতেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মোবাইলের মাধ্যমে বক্তৃতা করেন। তার বক্তব্যে সর্বাধিক গুরুত্ব পায় দলের মধ্যকার একতা। কোনো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। তারেক রহমানের বক্তব্যের সূত্র ধরে সাংগঠনিক সম্পাদক, উপদেষ্টা ও ভাইস চেয়ারম্যানরাও একই বক্তব্য দেন। মূলতবি করা ওই বৈঠকটি সপ্তাহখানেকের মধ্যে আবারো অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

দলটির নেতারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বিএনপি নির্বাচনকেন্দ্রিক দাবিতে ফের সোচ্চার হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে চারটি শর্ত এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। এক. খালেদা জিয়াকে করাবন্দী রেখে নির্বাচন নয়, দুই. নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, তিন. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে ও চার. নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেছেন, সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তাদের আন্দোলন বহু দিন ধরেই চলে আসছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দী হওয়ার পর সেই আন্দোলনের সাথে তার মুক্তি আন্দোলন যোগ হয়েছে। দলীয় প্রধানের মুক্তিই তাদের প্রধান এজেন্ডা। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। সরকার যতই নীলনকশা প্রণয়ন করুক না কেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি আর হবে না।

ড. মোশাররফ জানান, দলের যৌথ সভায় শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নেত্রীর মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি ও সংসদ ভেঙে নির্বাচনের দাবিতে তাদের আন্দোলন চলবে।
প্রায় দুই মাস ধরে কারাবন্দী রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তার মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে বিএনপি। এপ্রিল মাস জুড়েই কর্মসূচি রয়েছে দলটির। আজ সারা দেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে। এ ছাড়া আগামী ১৫ এপ্রিল রাজশাহী, ৭ এপ্রিল বরিশাল এবং ১০ এপ্রিল সিলেটে জনসভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। জানা গেছে, এসব সমাবেশ সফল করতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বাচনী সমাবেশ শুরু করায় বিএনপিও এসব সমাবেশে সর্বোচ্চ জমায়েত ঘটাতে চায়। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির পাশাপাশি নির্বাচনী দাবিগুলোও এসব সমাবেশে প্রাধান্য দেবেন সিনিয়র নেতারা।

জানা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ড সিনিয়র নেতাদের এমনকি নির্বাচন করতে ইচ্ছুক নেতাদের তৃণমূলে গিয়ে জনমত গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। কেন্দ্রগঠিত ৩৬টি টিমকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিটি কর্মসূচি ও সাংগঠনিক কার্যক্রম মনিটর করছেন।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিকে নিয়ে বিভ্রান্তির অপপ্রচারে আরো বেশি সজাগ ভূমিকা পালন করছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। সিনিয়র নেতারা বলেছেন, বিএনপির ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা আগেও ছিল। খালেদা জিয়ার কারাবন্দীর পর সেই চেষ্টা আরো বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সেদিকে তারা সজাগ দৃষ্টি রাখছেন।
তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা যাতে বিভ্রান্ত না হন সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নেতারা বলছেন, বিএনপির ঐক্যে ন্যূনতম চিড় ধরানোও সম্ভব নয় বরং তারা এখন আগামী দিনের বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতিই নিচ্ছেন।

শেয়ার করুন