স্বাধীনতার পর ৪৭ বছরের অভিযাত্রায় যে সাফল্য বাংলাদেশ অর্জন করেছে, আগামী দিনে তাকে আরও এগিয়ে নিতে নতুন প্রজন্মকে তৈরি হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেই সঙ্গে আজকের শিশু কিশোর তরুণরা যেন কোনোভাবেই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বা মাদকে আসক্ত না হয়, সে বিষয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সতর্ক থাকার তাগিদ এসেছে সরকারপ্রধানের কাছ থেকে।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
ঊনিশ একাত্তর সালে স্বাধীন দেশ হিসেবে যে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ, নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এবার তার ৪৭ বছর পূর্তি উদযাপনে এসেছে নতুন অনুসঙ্গ।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে রয়েছে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ আর উন্ন দেশের কাতারে পৌঁছানোর স্বপ্ন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতার লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। জাতি এই স্বাধীনতা দিয়ে গেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে নিয়ে আসা। ইতোমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে পেরেছি।”
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হাজার হাজার শিশু কিশোরের সামনে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বীরত্বের ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কারও কাছে হাত পেতে নয়, কারও কাছে মাথা নত করে নয়, বাঙালি মর্যাদর সঙ্গে বিশ্বে চলবে, কারণ এ জাতি মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি।
“আর বিজয়ী জাতি হিসেবে আমি আমাদের ছোট্ট সোনামনিদের বলব, সব সময় নিজেদেরকে সেইভাবে চিন্তা করবে যে তোমরা বিজয়ী জাতির উত্তরসূরি। তোমরাই এ দেশকে গড়ে তুলবে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সকলে একটা বিষয় লক্ষ্য রাখবেন, আপনাদের শিশুরা যেন কোনোভাবেই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বা মাদকে আসক্ত না হয়। তারা যেন মন দিয়ে লেখপড়া শেখে, মানুষের মত মানুষ হয়।”
আর এ দেশের আগামী দিনের কাণ্ডারীদের লেখপাপড়া শিখে ‘মানুষের মত মানুষ’ হতে, বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে, শিক্ষকদের কথা মেনে চলতে বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, “এই দেশকে গভীরভাবে ভালোবাসবে। এই দেশকে গড়ে তুলবে তোমরা আগামী দিনে। আমরা যেখানে রেখে যাব, আগামী দিনে তোমরাই সেখান থেকে দেশকে আর উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ২০২১ সালে বাংলাদশে যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে, এ দেশ তখন হবে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ।
“২০২০ সালে আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধূ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী আমরা পালন করব। আর ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। সেই দেশ আমরা ইনশাল্লাহ গড়ে তুলব।”
সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজে সবার সহযেগিতা চান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী সকাল ৮টায় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এসময় শুদ্ধস্বরে জাতীয় সংগীত গাওয়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দলগুলোর সদস্যর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে।
তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে উপস্থিত মন্ত্রিসভার সদস্য, মাঠে থাকা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী ও সংগঠানের সদস্য এবং গ্যালারিতে থাকা হাজার হাজার দর্শক ও অভিভাবক জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান।
এবারই প্রথম স্বাধীনতা দিবসের সকালে সারাদেশে ও বিদেশে একযোগে একই সময়ে শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়।
জাতীয় সংগীতের পর সমাবেশে অংশ নেওয়া শিক্ষর্থীরা জাতীয় পতাকার প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে। প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সমাবেশের উদ্বোধন করেন এবং কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শেষে কুচকাওয়াজ থেকে সালাম গ্রহণ করেন। পরে শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত গাওয়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত গাওয়া এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধিকতর কার্যকর করার জন্য চলতি বছরে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা পর্যায়ে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তঃশ্রেণী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শুরু করে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে এই প্রতিযোগিতা হয়।
সারা দেশের দেড় কোটি শিশু গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ দলগত এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রাথমিক, মাধ্যামিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ১১টি দলের ১১০ জন শিক্ষর্থী চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হয়।
প্রথম স্থান অর্জনকারী দলের প্রত্যেক সদস্যকে একটি করে স্বর্ণপদক, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী দলের প্রত্যেক সদস্যকে একটি করে রৌপ্য পদক এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলের প্রত্যেককে বৌঞ্জ পদক দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে।
প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম হয় ঢাকার মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল ও কলেজ, দ্বিতীয় হয় খুলনা বিভাগের সরকারি করনেশন বালিকা বিদ্যালয় এবং যুগ্মভাবে তৃতীয় হয় চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবান সদরের মেঘলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ জেলা স্কুল।
মাধ্যমিকে প্রথম হয় ময়মনসিংহ জেলা স্কুল, দ্বিতীয় হয় সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের সরকারি এস সি সরকারি বালিকা বিদ্যালয় এবং যুগ্মভাবে তৃতীয় হয় রাজশাহী বিভাগ থেকে পাবনার স্কোয়ার স্কুল ও কলেজ ও ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ।
উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে ময়মনসিংহের শহীদ নজরুল ইসলাম কলেজ, দ্বিতীয় হয়েছে চট্টগ্রামের কাপাসগোলা সিটি মহিলা কলেজ এবং তৃতীয় হয়েছে ঢাকা বিভাগের বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজ।
পরে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শারীরিক কসরত ও ডিসপ্লে দেখেন।