এক-এগারোর সময় ব্যক্তি ও বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে আদায় করা ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ফেরত দিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা পৃথক আপিল খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
রিট আবেদনকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কৌঁসুলি আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট টাকা ফেরত দিতে রায় দিয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আপিলগুলো খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। ফলে টাকা ফেরতে হাইকোর্টের রায় বহাল রইল। তবে কত দিনের মধ্যে তা দিতে হবে, সেটা আপিল বিভাগের রায় পেলে জানা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, এতগুলো টাকা সরকার কীভাবে দেবে এটা চিন্তার বিষয়। রিভিউ হবে কিনা সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ১১টি আপিল খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এই রায় ইতিহাসে নিশ্চয়ই পুনর্বিবেচিত হবে। আইন এখানে থেমে থাকবে না।
সাবেক সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে অগ্রিম আয়কর হিসেবে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করা হয়। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংরক্ষিত সরকারি কোষাগারে ওই টাকা জমা দেওয়া হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওই জরিমানার টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-কোম্পানি হাইকোর্টে পৃথক ১১টি রিট আবেদন করে। ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে রিট আবেদনকারী ব্যক্তি ও কোম্পানিকে ওই অর্থ ৯০ দিনের ভেতর ফেরত দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়। আইনজীবী সূত্র জানায়, ওই অর্থের পরিমাণ ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক লিভ টু আপিল করে (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে)। এর ওপর শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ২ আগস্ট আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক পৃথক আপিল করে।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, এস. আলম স্টিলস লিমিটেডকে ৬০ কোটি টাকা, দ্য কনসোলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি লিমিটেড এবং বারাউরা টি কোম্পানি লিমিটেডকে ২৩৭ কোটি ৬৫ লাখ ৪০ হাজার ২ টাকা ১৭ পয়সা, মেঘনা সিমেন্ট মিলকে ৫২ কোটি, বসুন্ধরা পেপার মিলকে ১৫ কোটি, ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডকে ৯০ লাখ, ইউনিক সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজকে ৭০ লাখ, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসকে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ, ইউনিক ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মো. নূর আলীকে ৬৫ লাখ, বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডকে ৭ কোটি ১০ লাখ, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডকে ৩৫ কোটি এবং ইস্ট ওয়েস্ট প্রোপার্টি লিমিটেড ডেভেলপমেন্টকে ১৮৯ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক ১১টি রিট আবেদন করে।