এমপি লিটন হত্যায় ১৬৪ ধারায় কাদের খানের জবানবন্দি

0
734
Print Friendly, PDF & Email

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ডা. কর্নেল (অব) আবদুল কাদের খান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গতকাল শনিবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে ১০ দিনের রিমান্ড চলাকালে চতুর্থ দিনে তাকে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য গাইবান্ধার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালতের বিচারক মো. জয়নুল আবেদিন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার জবানবন্দি গ্রহণ অব্যাহত ছিল। কখন তা শেষ হবে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জানা গেছে, আদালতে তোলার পর পরই জবানবন্দি দেওয়া শুরু করেন কাদের খান। এ সময় তাকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‘এ’ সার্কেল) রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তুলে হেলমেট এবং বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে কাদের খানকে পুলিশ সুপার অফিস থেকে আদালতে নিয়ে যায়। আগে থেকেই আদালত চত্বরে এবং পুলিশ সুপার অফিসে কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছিল। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল জজকোর্ট ভবনের সব গেট। কোনো সাংবাদিককে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকি পুলিশ সুপার অফিসেও কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি। ফলে জবানবন্দি সংক্রান্ত কোনো তথ্যই জানা সম্ভব হয়নি।

নব্য জেএমবি নামে প্রতিমা ভাঙচুরে সম্পৃক্ত : সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে নব্য জেএমবির নামে একাধিক মন্দিরে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা কাদের খানের নির্দেশ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সংঘটিত হয়েছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ ৯ অক্টোবর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুরের কামারপাড়া সড়কসংলগ্ন কালীমন্দিরে রক্ষিত কালী প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ এ অভিযোগে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটি ইউনিয়নের ম-লেরহাট থেকে চারজনকে নব্য জেএমবি সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার করে। তারা হচ্ছেÑ আব্দুল কাদের খানের ভাতিজা সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটি ইউনিয়নের খানপাড়া পশ্চিম ছাপড়হাটী গ্রামের ইউসুফ খানের ছেলে ফয়সাল খান ফাগুন (১৭) এবং কাদের খানের সুন্দরগঞ্জের পশ্চিম ছাপড়হাটি খানপাড়া গ্রামের বাড়িতে কর্মরত আব্দুল ওয়াহাবের ছেলে নজরুল ইসলাম খান (৩৫), আব্দুল হামিদ মিয়ার ছেলে আশিকুল ইসলাম (১৬) ও আদর আলীর ছেলে শহিদ মিয়া (১২)। তারা মোটরসাইকেলে এসে মন্দিরের কালীপ্রতিমা ভেঙে সেখানে নব্য জেএমবি কর্তৃক দায় স্বীকারসংক্রান্ত হাতে লেখা একটি চিঠি রেখে পালিয়ে যায়। সে সময় পুলিশের কাছে প্রদত্ত স্বীকারোক্তিতে তারা বলেছে, এর আগে ৮ অক্টোবর রাতে মোটরসাইকেলযোগে গিয়ে পশ্চিম ছাপড়হাটি ডুরামারি গ্রামে নরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণের বাড়ির কালীমন্দিরে আগুন দেয় তারা। এ ছাড়া ২২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে সাদুল্যাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব কেশালী ডাঙ্গা সর্বজনীন মন্দিরেরও মূর্তি ভাঙচুর করে। একই দিনে আরেকটি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু তার আগেই তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ভাঙচুর করার পর প্রতিটি মন্দিরেই নব্য জেএমবির নামে হাতে লেখা চিঠি ফেলে আসে তারা। পুলিশের কাছে তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে তারা জানায়, সুন্দরগঞ্জ জেএমবি প্রভাবিত এলাকা তা প্রমাণ করতেই কাদের খান সুপরিকল্পিতভাবে তার নিজের ভাতিজা ফয়সাল খান ফাগুনসহ নিজস্ব কাজের লোকদের ব্যবহার করেন। মন্দির ভাঙচুরে সম্পৃক্ত গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা ইতোমধ্যে জামিনে ছাড়া পেয়েছে বলে জানা গেছে।

আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের ভোটের নিশ্চয়তা : লিটন হত্যা মামলার তদন্তের বরাত দিয়ে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কাদের খান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ছাড়াও বিএনপি-জামায়াতের ভোট পাবেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে আশাবাদী ছিলেন। সে কারণেই তিনি মরিয়া হয়ে এমপি লিটনকে তার পথের কাঁটা মনে করে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তদুপরি বিগত নির্বাচনে তার পরাজয় এবং তার সময়কালে সংঘটিত বিভিন্ন অনিয়মদুর্নীতির তদন্ত বিষয়ে তিনি মূলত এমপি লিটনকে দায়ী করেন। সে জন্য বিগত এক বছর আগে থেকেই এমপি লিটন কিলিং মিশনের পরিকল্পনা করেন। ৩০ ডিসেম্বর এমপি লিটনকে তার বাড়িতে খুন করার মূল পরিকল্পনা ছিল। কেননা ৩১ ডিসেম্বর এমপি লিটনের ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিমানের টিকিট না পাওয়ার কারণে তিনি ওই দিন ঢাকা যেতে পারেননি। ফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক চন্দন সরকার এবং তার অন্য অনুসারিদের কাছে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে ৩১ ডিসেম্বর এমপি লিটনকে তার বাড়িতে হত্যা করতে সক্ষম হয়।

শেয়ার করুন