সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর মিডিয়া মুখপাত্র আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) স্ট্যাটাস জটিলতা নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে আইএসপিআরকে আরো আধুনিক করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি প্রতিষ্ঠানটির নানা সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে তা নিরসনের সুপারিশ করেছে। অন্যদিকে পরিদপ্তরকে আরো শক্তিশালী ও আধুনিকায়ন করতে বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছে আইএসপিআর। সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইএসপিআর’র স্ট্যাটাস নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এর ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হয়েছে, ১৯৮২ সালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের সচিবালয় থেকে জারি করা সামরিক আইন পর্ষদের প্রতিবেদন আইএসপিআরকে একটি সংযুক্ত দপ্তর বা অ্যাটাচ ডিপার্টমেন্ট হিসেবে দেখানো হয়েছে। পক্ষান্তরে প্রতিরক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা বিভিন্ন পুস্তিকায় এটিকে আন্তঃবাহিনী সংস্থা হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবার নামকরণেও ‘আন্তঃবাহিনী’ শব্দটি সংযোজিত আছে। প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিকভাবে আইএসপিআর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন হলেও দপ্তরটির সব কাজ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও বাহিনী দপ্তরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যদি এটি আন্তঃবাহিনী সংস্থা হয়, তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৯৮৮ সালে জারি করা পত্রানুযায়ী আন্তঃবাহিনী সংস্থার সব প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের অধীনে হওয়া প্রয়োজন। তবে যে স্ট্যাটাসই থাকুক না কেন, এই বিষয়গুলো আরো স্পষ্টীকরণ করা প্রয়োজন। এদিকে আইএসপিআর’র পক্ষ থেকে বেশকিছু প্রস্তাবনা সংসদীয় কমিটির কাছে তুলে ধরা হয়েছে। কমিটি এসব প্রস্তাবনাকে যৌক্তিক বলে জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইএসপিআর এর পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান মানবজমিনকে বলেন, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আইএসপিআর’র স্ট্যাটাস জটিলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমাদের নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেছি। কমিটির সদস্যরা আমাদের সঙ্গে সহমত জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কমিটির সভাপতি সুবিদ আলী ভূঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, আইএসপিআর’কে ঢেলে সাজানো, দপ্তরটির পরিধি কিংবা সক্ষমতা বৃদ্ধির যে প্রস্তাব পেয়েছি, তা অবশ্যই যৌক্তিক। আমরা সংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করেছি, তাদের প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে প্রস্তাবনাটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে কমিটির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হবে। এদিকে আইএসপিআর’র পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সাম্প্রতিক গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইএসপিআর পরিদপ্তরকে যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৯৭২ সাল থেকে আইএসপিআর প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানের কোন স্থায়ী অফিস ভবন নেই। এ পর্যন্ত তিনবার এর ঠিকানা পরিবর্তন হয়। ১৯৭২ সালে ছিলো পুরনো হাইকোর্ট ভবনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস ভবনের সঙ্গে ছোট একটি অংশে। ১৯৯৩ সালে স্থানান্তর করে শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত গণভবন কমপ্লেক্সে এবং ২০০৪ সালে পুরনো লগ এরিয়া সদর দপ্তরের দোতলায় অস্থায়ীভাবে স্থানান্তর হয়। যা এখনো অবধি চলছে। কিন্তু কার্যক্রমে পরিধি অনুযায়ী দলিল-দস্তাবেজ সংরক্ষণের জায়গা নেই এ অফিসে। সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে, আইএসপিআর সার্বক্ষণিকভাবে দায়িত্বরত থাকে। সপ্তাহে ২দিন সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যান্য সরকারি ছুটি, এমনকি ঈদের ছুটির সময়ও অফিস খোলা রাখতে হয়। তাছাড়া ৯টা-৫টার বাইরে এমনকি গভীর রাতেও জনসংযোগ ও প্রয়োজনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তাদের সঙ্গে দেখা করতে হয় এবং দাপ্তরিক ও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে বলা হয়েছে, জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইএসপিআর’র জন্য বিশেষ ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। প্রস্তাবনায় জানানো হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম, ঘটনা ও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা সম্পর্কে তথ্য পেতে ও যাবতীয় সমন্বয়ের জন্য আইএসপিআর পরিদপ্তরে তিন বাহিনীর একজন করে অফিসার প্রতিনিধি থাকা প্রয়োজন। এজন্য সাংগঠনিক কাঠামোতে নতুন পদ সৃষ্টি করে নিয়মিতভাবে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন। প্রস্তাবনায় আছে, আইএসপিআর পরিদপ্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কর্মতৎপরতা বাড়াতে তিন বাহিনী কর্তৃক তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সরকারি বাসা বরাদ্দ দেয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সে প্রেক্ষিতে তিন বাহিনী সদর দপ্তরকে একটি নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে। এতে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান ও উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন মিডিয়া জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য কর্মকর্তাদের দেশে ও বিদেশে জনসংযোগ ও মিডিয়া রিলেশন্স সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা আবশ্যক। এছাড়া পরিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামো ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট টেকনিশিয়ান ও ডার্করুম সহকারীর মোট তিনটি পদ রয়েছে। বর্তমানে এগুলোর কার্যকারিতা নেই। ফলে পদ পরিবর্তন করে ফটোগ্রাফার করা প্রয়োজন।