পরিবহন শ্রমিক নেতা আবু সরকারকে নিয়ে ফের অস্থির সিলেট। আর এই অস্থিরতার ছাপ এসে লেগেছে শ্রমিক লীগের রাজনীতিতে। চলছে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার। এতে করে আলোচনায় এসেছেন শ্রমিক লীগের সিলেট জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এজাজুল হক এজাজও। এই অবস্থায় গতকাল মহানগর শ্রমিক লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে শ্রমিক লীগ নেতা জাকারিয়া আহমদকে। ঘটনার সূত্রপাত গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি রাতে। সিলেটের সুবহানীঘাট এলাকা। পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রিত একটি এলাকা। ওই এলাকার কাঁচা বাজারকে কেন্দ্র করে রয়েছে ট্রাক-পিআক ভ্যানের পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটি। এই সমিতির প্রভাবশালী নেতা সিলেটের আবু সরকার। ট্রাক শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতির সূত্র ধরে আবু সরকার সিলেটে বারবার বিতর্কিত হয়েছেন। তার কারণেই এখন দ্বি-খণ্ডিত ওই কমিটি। ওই দিন রাতে আবু সরকারের খুব কাছের দুই শ্রমিককে মদসহ গ্রেপ্তার করে মহানগর পুলিশ। এরপর আবু সরকার তাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ তার কথা শুনেনি। আইনমত কাজ করে। এতে ক্ষুব্ধ হন আবু সরকারসহ তার নিয়ন্ত্রণে থাকা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। তারা রাত থেকেই তাণ্ডব শুরু করেন সিলেটে। রাস্তা অবরোধ, জ্বালাও পোড়াও শুরু করে। কিন্তু তাদের এই আন্দোলনের সঙ্গে কোনো ভাবেই সম্পৃক্ততা ছিল না পরিবহন শ্রমিকদের বড় অংশটি। এরপরও অনেকটা জোরপূর্বক ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে ধর্মঘট পালন করা হয় সিলেটে। বেলা দুইটার দিকে মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে এক সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে ধর্মঘটের ইতি ঘটে। ওই বৈঠকে উপস্থিত থেকে সমঝোতায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি যখন বৈঠক শেষ করে নগরীর সুবহানীঘাট এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন আবু সরকারের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা তার গাড়িতে হামলা চালায়। তারা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়ে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ সময় তাদের হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান শফিকুর রহমান। এই হামলার ঘটনায় সিলেটজুড়ে প্রতিবাদ বইছে। কারণ- সিলেটে এর আগে কোনো রাজনীতিবিদের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেনি। এই হামলার নেতৃত্বে আবু সরকার নিজেই ছিলেন বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন জানিয়েছেন। এ ঘটনার পর পুলিশ আবু সরকারসহ হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫ হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হলেও আবু সরকার ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এদিকে- ঘটনার পর আবু সরকারসহ ২০ শ্রমিককে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে জেলা ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন। ঘটনার দিন রাতেই শ্রমিক সংগঠনের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। জেলা ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. দিলু মিয়া জানিয়েছেন- আবু সরকার ছাড়াও মুজিবুর রহমান মুজিব, মো. আমীর উদ্দিন, মো. আনোয়ার খান পাঠান, মো. সোহেল আহমদ, আব্দুস শহিদ, নাজিম উদ্দিন, আবদুল মতিন, আমিনুল ইসলাম শাহিন, আবদুল হামিদ, আবু ছায়েম, সাব্বির আহমদ পাখি, মো. সালেক মিয়া, সাব্বির আহমদ, শফিক আহমদ, ফয়ছল মিয়া, মো. জাহাঙ্গীর মিয়া, মো. কালা মিয়া, মো. শফিক মিয়া ও মো. আবুল মিয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদিকে- শফিকুর রহমান চৌধুরীর গাড়ি বহরে হামলার ঘটনার পর সিলেটের পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নও ইতিমধ্যে তারা সভা করে এই ঘটনার জন্য শ্রমীক লীগের সিলেট জেলার সভাপতি এজাজুল হক এজাজ ও আবু সরকারকে দায়ী করেছেন। তারা এ ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- পরিবহন শ্রমিক নেতা ও মহানগর শ্রমীক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাকারিয়া আহমদ। এছাড়া শফিকুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে ঘটনার দিন এসএমপি কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন জাকারিয়া আহমদ। কিন্তু শফিকুর রহমান চৌধুরীর গাড়িতে হামলার জন্য জাকারিয়া আহমদকে দায়ী করে তাকে শ্রমীক লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শ্রমিক লীগের সভাপতি এজাজুল হক এজাজ স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। ওই পত্রে বলা হয়েছে- ‘শফিক চৌধুরীর গাড়িতে হামলার ঘটনায় যেসব শ্রমিক নেতার ইন্ধন রয়েছে তার মধ্যে জাকারিয়াও ছিলেন। তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ জাকারিয়া আহমদ জানিয়েছেন- ‘শফিকুর রহমান চৌধুরীর গাড়িতে হামলার সঙ্গে এজাজুল হক এজাজের হাত রয়েছে। তিনি বলেন এ ঘটনার জন্য আমি সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত থাকার পরও আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন আমি তার বহিষ্বারের দাবি জানাচ্ছি।’ শ্রমিকলীগ সূত্র জানিয়েছে- আবু সরকার শ্রমীকলীগের কেউ নয়। কিন্তু জেলা ও মহানগর শ্রমীকলীগের শীর্ষ দুই-এক নেতা খুবই আস্থাভাজন সে। এ কারণে নতুন করে ট্রাক শ্রমিক লীগ গঠনের প্রক্রিয়া চলছিল আবু সরকারকে নিয়ে।