স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন কাজে নজরদারি বাড়ছে

0
420
Print Friendly, PDF & Email

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে তাদের কাজ সরাসরি তদারক করতে জেলা পর্যায়ে স্থানীয় সরকার উপপরিচালকের (ডিডিএলজি) পদ উন্নীতকরণ করা হচ্ছে; বাড়ছে কাজের পরিধিও। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগের এমন একটি প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই কর্মকর্তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির বিভিন্ন উন্নয়নকাজে নজরদারি করবেন। কোনো জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তারা তা তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ে জানাবেন। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে জনপ্রতিনিধিদের উন্নয়নকাজে কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা আসবে।

সূত্র জানায়, ডিডিএলজি পদটি স্থানীয় সরকার পরিচালক (ডিএলজি) পদে উন্নীতকরণ করা হচ্ছে। তাদের জন্য আলাদা কার্যালয় থাকবে। তবে তারা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অধীনে থাকবেন না, সরাসরি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবেন। সরকারের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ডিএলজি পদে পদায়ন করা হবে। আর বিভাগীয় পর্যায়ে বিদ্যমান ডিএলজি পদকে উন্নীত করে অতিরিক্ত মহাপরিচালক করা হচ্ছে। এ পদে সরকারের অতিরিক্ত সচিবদের পদায়ন করা হবে।

জানা যায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তেও পরিচালকদের ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে কোনো জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে সরাসরি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার ওপর তার তদন্তের ভার পড়ে। এতে অভিযোগ নিষ্পত্তি হতে দেরি হয়; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কাজকর্মেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এখন থেকে দুর্নীতির অভিযোগ পরিচালকরাই তদন্ত করবেন। তাদের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, স্থানীয় সরকার পরিচালকরা, বিশেষ করে উপজেলা পরিষদের কাজকর্ম কঠোরভাবে নজরদারি করবেন। কারণ, স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম মনিটর করতে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা রয়েছেন। কিন্তু উপজেলা পরিষদের কাজকর্ম সরাসরি মন্ত্রণালয় থেকে মনিটর করা হয়। এতে অনেক কিছু আড়ালেই থেকে যায়। তাই এ প্রতিষ্ঠানের কাজকর্মে গতি ও স্বচ্ছতা আনতে ডিএলজি পদও শক্তিশালী করা হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকারের কয়েকটি স্তর রয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ অন্যতম। এসব স্তরের কর্মকা সরাসরি মন্ত্রণালয় থেকে তত্ত্বাবধান করা হয়। জেলা পর্যায়ে ডিডিএলজি পদ থাকলেও এখন তা নিষ্ক্রিয়। উপসচিব পদপর্যাদার কর্মকর্তাদের পদটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়; কিন্তু তারা ডিসির অধীনে কাজ করেন। ফলে ওই কর্মকর্তারা স্থানীয় সরকারের কাজের চেয়ে ডিসি কার্যালয়ের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও এ পদে কর্মকর্তাদের পদায়ন দিতে গড়িমসি করে থাকে। আবার পদায়ন করা হলেও জেলা পর্যায়ে থাকা এ পদের কর্মকর্তাদের কাজ করতে অনীহা দেখা যায়। বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ গঠনের পর পরিষদের কাজকর্ম মনিটর করার মতো মাঠপর্যায়ে কোনো কর্মকর্তা নেই। উপজেলা পরিষদের অনেক অভিযোগ সরাসরি মন্ত্রণালয়ে আসে। অভিযোগ তদন্তে মন্ত্রণালয়ের ধীরগতির কারণে অনেকেই পার পেয়ে যান। এ ছাড়া তাদের হাতে ন্যস্ত দপ্তরগুলোর কাজকর্ম আদৌ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না, তা মনিটরের কেউ না থাকায় কাজকর্ম প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাচ্ছে। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই ডিডিএলজি পদটি ডিএলজি পদে উন্নীত করে যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এ পদায়নে কর্মকর্তা চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

একটি সূত্র জানায়, শিগগিরই ডিএলজি পদে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। তাদের জন্য আলাদা কার্যালয় করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকারের ‘লোকাল গভর্নমেন্ট সাপোর্ট প্রকল্প (এলজিএসপি)’ থেকে তাদের গাড়িও দেওয়া হবে। নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সিটি করপোরেশন বাদে অন্যান্য স্তরের কর্মকর্তাদের কাজ তদারক করবেন। আর সিটি করপোরেশনের কর্মকা সরাসরি মন্ত্রণালয় থেকে মনিটর করা হবে।

শেয়ার করুন