ফুল দিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদিতে উঠে খালেদা জিয়া শহীদ দিবসের মর্যাদা নষ্ট করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বুধবার বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক নীলিমা জাহান। কবিতা আবৃত্তি করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্তরে পাকিস্তানের প্রতি প্রেম থাকার কারণে খালেদা জিয়া শহীদ মিনারের মূল বেদিতে উঠে পড়েছিলেন। কারণ, এরা জানে না কোথায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে হয়। যারা মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং মানুষ পোড়ানো; এটাই যাদের কাজ- তাদের কাছ থেকে কী সংস্কৃতির আশা করবেন, কী সাহিত্যের আশা করবেন, কী ভাষার আশা করবেন? এরা আমাদের সংস্কৃতি, ভাষা ও সাহিত্যের মর্যাদা বুঝবে কীভাবে? তাছাড়া এদের মনে পেয়ারে পাকিস্তান।
তিনি বলেন, আমরা যেখানে ফুল দিয়েছি। যেখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ফুল দিয়েছেন। আমি ফুল দিয়েছি। মাননীয় স্পিকার ফুল দিয়েছেন। সেখানে বিএনপি নেত্রী যে বেদিতে সবাই ফুল দেয়, সেই বেদিতে তিনি উঠে পড়লেন। তাহলে তিনি ফুলটা দিবেন কোথায়? নিজের পায়ে দিবেন নাকি?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে তিনি বেলা ১১টার দিকে ফুল দিতে যেতেন। আর ফুল দিয়ে যখন ফিরে আসতেন তখন তার নেতাকর্মীরা বেদি থেকে ফুলের পাপড়ি কুড়িয়ে তার মাথায় ছিটিয়ে দিতেন। পরে পত্রপত্রিকায় লেখালেখির পর সেটি বন্ধ হয়েছে। আর এবার যে অপকর্মটা তিনি করে আসলেন তাতে ২১শে ফেব্রুয়ারি, শহীদ দিবসের মর্যাদাটাই নষ্ট করে আসলেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে এবং আমার পরিবারকে হেয় করার জন্য পদ্মা সেতু প্রকল্পে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কানাডার আদালতের রায়ে আজকে তা প্রমাণ হয়েছে। আমি শুধু এটুকু বলবো, দেশের মানুষের মান মর্যাদা ক্ষুণ্ন্ন হোক- এমন কোনো কাজ আমার বা আমার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে হবে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমার দলের নেতাকর্মী যারা আছেন তারাও যেন সততার সঙ্গে যার যার দায়িত্ব পালন করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যেতে পারেন। ৫১ মিনিটের দীর্ঘ বক্তব্যের শুরুতে মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আদায়ের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এই অধিকার আদায়ে শহীদ হওয়া জাতির সূর্যসন্তানদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
জাতির ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস জানতে নতুন প্রজন্মকে তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ইতিহাস ও অতীত জানতে হবে। যে ছেলে ইতিহাস-অতীত জানতে পারে না, সে সত্যিকার অর্থে বাঙালি হতে পারে না। ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিটি সংগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতির যে অর্জন, তার প্রত্যেকটির পেছনে আওয়ামী লীগের অবদান রয়েছে।