সুইডেনের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, সমরাস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতে সব দেশের ওপরে রয়েছে ভারত।
স্টকহোমের ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদেন জানানো হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে পৃথিবীতে মোট অস্ত্র আমদানির মধ্যে ভারত একাই কিনেছে ১৩ শতাংশ।
তালিকায় এর পর আছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও আলজেরিয়া।
ভারত যে ধরনের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন, তাতে এই বিপুল অস্ত্র কেনাকে যৌক্তিক বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা । তবে অনেকেই আবার এই যুক্তির সঙ্গে একমত নন।
বেশির ভাগ উপসাগরীয় দেশ তাদের দেশের ভেতরে বা বাইরে কোনও না কোনও যুদ্ধে লিপ্ত – তাই তাদের অস্ত্র আমদানির পরিমাণ যে গত পাঁচ বছরে বেড়েছে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু সরাসরি কোনও যুদ্ধে না-নেমেও ভারত কি ভাবে বিশ্বের অস্ত্র আমদানিতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে, এবং তালিকায় দুনম্বর সৌদি আরবের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি অস্ত্র আমদানি করেছে?
ছবির কপিরাইট RAVEENDRAN
Image caption ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে সামরিক শক্তির প্রদর্শনী
ভারতেও অনেককে বিস্মিত করেছে এ পরিসংখ্যান। বামপন্থী নেত্রী ও অ্যাক্টিভিস্ট বৃন্দা কারাটের মতে ভারতের এই পদক্ষেপ রীতিমতো নিন্দনীয়।
তিনি বলছেন, “এ থেকে পরিষ্কার হয় যে এই অস্ত্র কেনাকেটা ভারতের অর্থনীতি ও ভারতের জনগণের ওপর কত বড় বোঝা তৈরি করছে! অথচ দেশের ভেতরে যখন বড় বড় প্রয়োজনগুলোর কথা হয়, তখন বলা হয় আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে রিসোর্স নেই, অর্থবল নেই।”
“কেন আমরা আমাদের প্রতিরক্ষার প্রয়োজন দেশজ প্রযুক্তির মাধ্যমে মেটাতে পারছি না? মহাকাশে এতগুলো স্যাটেলাইট পাঠাতে পারি, কিন্তু অস্ত্র বানাতে পারি না! আসলে এই কেনাকেটার মধ্যে বিপুল দুর্নীতিও আছে, সেটাও একটা ভাববার বিষয়!”
তবে ভারতের বর্তমান ও বিগত সরকারগুলো ক্রমাগত বলে আসছে সীমান্তে প্রহরারত সেনাদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র তুলে দিতে সরকার কোনও কার্পণ্য করবে না।
ছবির কপিরাইট ROBERTO SCHMIDT
Image caption ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিয়ম করে প্রায় প্রতিটি জনসভায় বলে থাকেন, ভারত তার শত্রুদের কাঁদিয়ে ছাড়বে – দুশমনরা ভারতের সেনাবাহিনীর শক্তির পরিচয় পাবে।
এই রণহুঙ্কার ধরে রাখতে গেলে অস্ত্র কেনাকেটা বন্ধ করা চলবে না, এটাই ভারতে সামরিক বিশেষজ্ঞদের রায়। স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট মারুফ রাজা বিবিসিকে বলছিলেন :
“যেহেতু অস্ত্র কেনার জন্য ভারতের আর্থিক সঙ্গতি আছে – এবং দেশের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও মাওবাদী বিদ্রোহীরা থেকে শুরু করে সীমান্তে পাকিস্তান বা চীনের মতো প্রতিবেশীরা আছে – তাই কূটনৈতিক ও স্ট্র্যাটেজিক দৃষ্টিতে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই কেনাকেটার পক্ষে যুক্তি দিতেই পারেন।
“মজার ব্যাপার হল, ভারতের সামরিক অস্ত্র কেনাকেটায় প্রচুর দুর্নীতি আছে, তারপরও বাজারটা বিশাল বলে বড় বড় অস্ত্রনির্মাতারা সেই অনিশ্চয়তাও মেনে নিতে তৈরি” – বলেন মারুফ রাজা।
ছবির কপিরাইট Uriel Sinai
Image caption ভারতের সামরিক বাহিনী এখন সরাসরি কোন যুদ্ধে জড়িত নয়
ভারতের স্ট্র্যাটেজিক নিরাপত্তার দিকটা অস্বীকার করছেন না বৃন্দা কারাটও – তবে তার মতে শুধু বিদেশ থেকে অস্ত্র কেনাই তার একমাত্র সমাধান হতে পারে না, কূটনৈতিক পথে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নেও ভারতের জোর দেওয়া উচিত।
বৃন্দা কারাটের কথায়, “আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চয় দরকার, কিন্তু তার পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কও একটা বিরাট ব্যাপার। সেই সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা কি সঠিক পথে আছি? না কি আমরা এ ক্ষেত্রে অন্য কোনও দেশের স্বার্থে তাদের মিত্রশক্তির মতো কাজ করছি? তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক খেলার ঘুঁটি হিসেবে আমরা কি নিজেদের ব্যবহৃত হতে দিচ্ছি?”
ফলে ভারতের এই বিপুল অস্ত্র কেনাকেটার পক্ষে ও বিপক্ষে – যুক্তি আছে দুদিকেই।
তবে দিল্লিতে এখন যারা ক্ষমতাসীন, সেই বিজেপি সরকার এর মধ্যেই ঘোষণা করেছে দেশের সামরিক সরঞ্জামের আধুনিকীকরণের অন্তত ২৫ হাজার কোটি ডলার তারা খরচ করবে, কেনা হবে যুদ্ধবিমান-আধুনিক কামান বা সাবমেরিন সব কিছুই।
সুতরাং ধরেই নেওয়া যায় আগামী পাঁচ বছরেও ভারতের অস্ত্র কেনাকেটার গ্রাফ শুধু ঊর্ধ্বমুখীই থাকবে – এবং তালিকার প্রথম স্থান থেকে তারা চট করে সরবে না।