জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের নাটকে রামপালের প্রসঙ্গ আসায় উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম মাঝপথে উঠে চলে গেছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক কর্মী জানান, সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন আবৃত্তি, গান ও নাটক পরিবেশন করে।
ওই অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের পরিবেশনায় পথনাটক ‘চক্রব্যূহ’ মঞ্চস্থ হয়। নাটকের সংলাপে দেশে চলমান গুম, খুন, ধর্ষণ, জঙ্গি হামলা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতারোধের প্রসঙ্গের পাশাপাশি সুন্দরবনের কাছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রসঙ্গটিও আসে।
আর পথনাটকের দৃশ্যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রসঙ্গে সংলাপ বলার পর প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে চলে যান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সাংস্কৃতিককর্মী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রামপাল প্রসঙ্গে সংলাপ বলায় প্রথমে উপাচার্যের স্বামী আকতার হোসেন প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে চেয়ার থেকে উঠে পড়েন। এরপর উপাচার্য ফারজানা ইসলামও উঠে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।’
ওই কর্মী আরো বলেন, ‘শুরু থেকেই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাটি উপভোগ করছিলেন উপাচার্যসহ প্রশাসনের অন্য কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু হঠাৎ তাঁদের এভাবে উঠে পড়ায় বিস্মিত হয়েছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা।’
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দীর মুক্তমঞ্চে নাটকটি পরিবেশন করে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক শিক্ষকও ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে থিয়েটারের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ কামরুল আহছান জানান, উপাচার্য ক্ষিপ্ত হয়েছেন এটা সত্যি। তবে এ ব্যাপারে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে বা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘এটা তেমন কোনো বিষয় নয়। ওরা নাটকে বিভিন্ন ক্রিটিক্যাল বিষয় নিয়ে কথা বলেছে। এটা নাটকে যে কেউ বলতেই পারে। উপাচার্য এ কারণে চলে যাননি।’
বশির আহমেদ আরো বলেন, ‘ভিসি ম্যামের পায়ে ব্যথা, তাকে আবার রাতে ফুল দেওয়ার জন্য আসতে হবে। এ জন্য তিনি বাসায় চলে গেছেন। উনি তো বেশ কিছুক্ষণ অনুষ্ঠান দেখেছেন।’
নাটকটির নির্দেশক নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘নাটকের আগে উপাচার্য আমাকে বলেছেন তিনি পুরো নাটকটি দেখে যাবেন। আমি তখন একটি দৃশ্যে অভিনয় করছিলাম।
পরে নাটক শেষ হওয়ার পর জানতে পারলাম রামপালের বিরুদ্ধে ডায়ালগ বলায় উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকরা অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যান।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে উপাচার্যের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।