সর্বশেষ কমিশন সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে ঋণাত্মক ইকুইটির বিও হিসাবে লেনদেন চালু রাখার নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নির্দেশনাপত্রে একই সঙ্গে ঋণাত্মক ইকুইটির হালনাগাদ তথ্য মাসিক ভিত্তিতে স্টক এক্সচেঞ্জকে জমা দেয়ার কথাও বলা হয়েছে, যার আলোকে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়ন্ত্রক সংস্থায় একটি সারমর্ম প্রতিবেদন জমা দেবে।
কমিশন চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনাপত্রে রোববার বিএসইসি বলে, বিনিয়োগকারী ও শেয়ারবাজারের স্বার্থে মার্জিন রুলস ১৯৯৯-এর ব্যাপারে এ নির্দেশনা দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে কমিশন। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ধারা ২০এ-তে প্রদত্ত ক্ষমতার বদলে কমিশন মার্জিন রুলস ১৯৯৯-এর বিধি ৩-এর উপবিধি ৫ আগামী ছয় মাসের জন্য স্থগিত করছে, যেখানে বলা হয়েছে মার্জিন ঋণধারীর বিও হিসাবের ইকুইটি তার ডেবিট ব্যালান্সের ১৫০ শতাংশের নিচে থাকলে সে বিওতে লেনদেন চালু রাখা যাবে না। এর অর্থ আগামী ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ঋণাত্মক ইকুইটির বিও হিসাবগুলোয় লেনদেন চালু রাখার সুযোগ আছে।
এদিকে ঋণাত্মক ইকুইটির সার্বিক চিত্র অনুধাবনের জন্য, মার্জিন ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রতি মাসের শেষ তারিখে তাদের ঋণাত্মক ইকুইটির উপাত্ত স্টক এক্সচেঞ্জকে জানানোর বাধ্যবাধকতার কথাও নির্দেশনাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আলোকে স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কমিশনকে একটি সারমর্ম প্রতিবেদন জমা দেবে।
বিএসইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে নিয়মিত ঋণাত্মক ইকুইটির হালনাগাদ তথ্য পাওয়া গেলে পুঁজিবাজারে মোট ঋণাত্মক ইকুইটির পরিমাণ, এককভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণাত্মক ইকুইটির পরিমাণ এবং মোট ঋণাত্মক ইকুইটির বিও হিসাবের প্রকৃত তথ্য উঠে আসবে। অস্থায়ী সমাধান হিসেবে বারবার ঋণাত্মক ইকুইটির বিও হিসাবে কেনাবেচা চালু রাখার সময়সীমা না বাড়িয়ে একটি স্থায়ী সমাধানে যেতে চাইছে কমিশন।
পুঁজিবাজারের দুষ্ট ক্ষত হিসেবে পরিচিত ঋণাত্মক ইকুইটির কারণে একাধিকবার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর ঋণাত্মক ইকুইটির বিও হিসেবে লেনদেনের সময়সীমা শেষ হলে এর মেয়াদ বাড়ানোকে কেন্দ্র করে বাজারে কিছুটা অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। স্টক এক্সচেঞ্জের সুপারিশক্রমে গেল সপ্তাহে শেষ পর্যন্ত ঋণাত্মক ইকুইটির বিওতে লেনদেনের সুযোগ আরো ৬ মাসের জন্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এজন্য মার্জিন রুলসের সংশ্লিষ্ট ধারা স্থগিতাদেশের মেয়াদ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানোর কথা ঘোষণা করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের বাজার ধসের পর মার্জিন ঋণধারী বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওর সম্পদমূল্য অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। ঋণাত্মক ইকুইটির বিও হিসাবের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে সেগুলোতে লেনদেন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ চায় ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। পরবর্তীতে স্টক এক্সচেঞ্জও এ বিষয়ে সুপারিশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল মার্জিন রুলস, ১৯৯৯-এর ধারা ৩(৫)-এর কার্যকারিতা এক বছরের জন্য স্থগিত করে বিএসইসি। এর পর প্রতি বছর স্থগিতাদেশের মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণাত্মক ইকুইটির বিও হিসাবগুলোকে লেনদেনে সক্রিয় রাখা হয়। এ দফায় নির্দেশনা জারির পর আরো ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ল।