সংকটাপন্ন এলাকায় শিল্পে ছাড়পত্র পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিক অধিদপ্তর

0
149
Print Friendly, PDF & Email

সুন্দরবনের আশপাশে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত অঞ্চল প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়েছে। আইন বলছে, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি হতে পারে, এমন সব ধরনের কার্যক্রমই এ এলাকায় নিষিদ্ধ। অথচ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ওই এলাকার মধ্যেই গড়ে উঠেছে প্রায় ১৮৬টি শিল্প-কারখানা ও প্রকল্প। আরো আশ্চর্যের বিষয়, বিদ্যমান শিল্প-কারখানার পরিবেশগত ছাড়পত্র নবায়নের সুপারিশ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এমনকি নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পক্ষেও মত দিয়েছে তারা। এ নিয়ে গতকাল বণিক বার্তায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র নবায়নের পক্ষে যুক্তি হলো, এটা না হলে এগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানের বাইরে পরিচালিত হবে। এতে পরিবেশদূষণের আশঙ্কা বেশি থাকবে। তাই বিদ্যমান শিল্পপ্রতিষ্ঠান যথাযথ শর্ত প্রতিপালন করছে কিনা, তা যাচাই করে ছাড়পত্র নবায়ন করতে হবে। সুন্দরবন সংরক্ষণে অতিরিক্ত শর্তারোপ করে হলেও অব্যাহত রাখতে হবে ছাড়পত্র নবায়ন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, বিদ্যমান এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কিনা, তা কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বিষয়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। এসব কল-কারখানার কার্যক্রমে মাটি, পানি ও বায়ুদূষণ হয় কিনা, তা নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করছে তারা। এখন প্রশ্ন হলো, এ গবেষণা কে করবে? পরিবেশ অধিদপ্তরকেই তো এ গবেষণা করা উচিত। পরিবেশের স্বার্থের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব তো তাদেরই। এদিকে আবার বিদ্যমান শিল্পের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতির বিষয়ে কোনো তথ্য না জানাতে পারলেও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনের সুপারিশ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অথচ এ সুপারিশ করার আগে তাদের তো এ নিয়ে সুন্দরবনসহ পরিবেশের ক্ষতি নিয়ে গবেষণা করা উচিত ছিল। ভবিষ্যতে মংলা বন্দর শিল্প এলাকায় মাটি, পানি, বায়ু ও শব্দদূষণ করে না, এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়ার সুপারিশ করেছে অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের যুক্তি, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কর্মসংস্থান না থাকলে এসব মানুষ সুন্দরবনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। তবে মনে রাখতে হবে, ভারি শিল্প-কারখানা সুন্দরবনের ক্ষতি করবে। সুতরাং এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেয়া উচিত, যেগুলোয় পরিবেশদূষণ হয় না। পরিবেশ অধিদপ্তর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পরিবেশগত দিকগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে পরিবেশসম্মতভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং সুন্দরবনের পরিবেশবান্ধব শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য দ্রুত নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করেছে। আমরা প্রত্যাশা করব, সরকার এ সুপারিশ আমলে নেবে। পরিবেশসম্মতভাবে কারখানা পরিচালনার প্রতি জোর দিতে হবে। বিদ্যমান শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, সেদিকে নজর দেয়া উচিত। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে সুন্দরবনের ক্ষতি কম করার। এজন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে কঠোর হতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, শিল্পপতিরাও এ বিষয়ে সচেতন হবেন।

পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে এখন গোটা বিশ্ব সোচ্চার পরিবেশ রক্ষায়। আমাদের উল্টো হাঁটা উচিত হবে না। পরিবেশ রক্ষা করে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা করতে হবে। সুন্দরবন তথা পরিবেশের ক্ষতি করে উন্নয়ন আসলে তা টেকসই হবে না। বিদ্যমান শিল্প-কারখানার পরিবেশগত ছাড়পত্র নবায়নের সুপারিশ ও নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনে পরিবেশকেই অগ্রাধিকার দেবে পরিবেশ অধিদপ্তর— এটাই প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন