মামলা করতে গতকাল সোমবারও থানায় থানায় ঘুরেছেন অপহৃত বিক্রয়কর্মী মো. হাসানের মা হালিমা খাতুন। সাত দিন ধরে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মামলা করতে পারছেন না। তাঁর দাবি, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় পুলিশ এড়িয়ে চলছে। গত ৭ জানুয়ারি মিরপুর থেকে নিখোঁজ হন বিক্রয়কর্মী হাসান।
গতকাল সোমবার রূপনগর থানায় হালিমা খাতুনের মামলা করার চেষ্টার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এই প্রতিবেদক। হালিমা বলেন, তাঁর ছেলে মো. হাসান অপহরণের সময় ‘ডিবির উপপরিদর্শক’ আনসার আলী উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের ‘সোর্স’ শাহ আলম মোল্লা ছেলের ছবি, ভিডিও দেখানোর কথা বলে তাঁর কাছ থেকে টাকাপয়সা নিয়েছেন। এই দুজনের বিরুদ্ধে তিনি মামলা দিতে চান।
জানতে চাইলে উপপরিদর্শক আনসার আলী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কাউন্টার টেররিজমে আছেন। হাসানকে অপহরণের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘পুলিশ কি কখনো অপহরণ করে?’
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে হালিমা প্রথমে রূপনগর থানায় মামলা করতে যান। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ শহীদ আলম থানায় ছিলেন না। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা হালিমাকে বলেন, ঘটনাটি কাফরুল থানার ভেতর পড়েছে। কাজেই কাফরুলে মামলা করতে হবে। এরপর তিনি কাফরুল থানায় যান।
হালিমার সঙ্গে এই প্রতিবেদক কাফরুল থানায় ঘণ্টা দু-এক অবস্থান করেন। সে সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেনের কক্ষ বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। থানায় বসে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি প্রয়োজনে থানার বাইরে আছেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যে গাড়িটি ব্যবহার করেন, সেটি থানাতেই ছিল। বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছিল, ওসির কক্ষের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) নিয়মিত বিরতিতে চালু ও বন্ধ হচ্ছে।
কক্ষের বাইরে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্য মো. মানিক মিয়া বলেন, তিনি মাত্র কয়েক মিনিট আগে এসেছেন। ‘ওসি স্যার’ কোথায় তা তিনি বলতে পারবেন না।
ওসির খোঁজে লম্বা সময় অপেক্ষা করার পর হালিমা বেগম ‘ডিউটি অফিসারের’ কক্ষে যান। সেখানে ঢোকার পর ডিউটি অফিসার ও টেলিফোন অপারেটর হালিমাকে চিনতে পারেন। জানতে চান, বড় স্যাররা কী বলেছেন। হালিমা জবাব দেন প্রয়োজন হলে ‘ওসি সাহেব’ ডাকবেন বলে জানিয়েছিলেন। তিনি আর ডাকেননি। তাই আবারও মামলা করতে এসেছেন। টেলিফোন অপারেটর আবদুল বাতেন তাঁকে বসতে বলে একটি নম্বরে ফোন করেন। তারপর বলেন, ‘স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।’ হালিমার ফোন আর ধরেননি ওসি।
হালিমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই নিয়ে সাত দিন একইভাবে চলতেছে। আমি আসি আর ফেরত যাই। থানার তিন স্যারের কেউই থাকে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, থানায় ওসি ছাড়া আরও দুজন পরিদর্শক আছেন। তাঁদের একজন পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল হোসাইন ও অন্যজন পরিদর্শক (অপারেশনস) মো. আসলামউদ্দীন।
পরিদর্শক ছাড়া মামলা নেওয়া যাবে না এমন কোনো বিধান আছে কি না জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য ওসির উপস্থিতিতে মামলা হোক সেটা কাঙ্ক্ষিত। তাহলে মামলা করার সময়ই ওসি অবগত থাকেন। তিনি না থাকলে মামলা করা যাবে না বিষয়টা এমন না।’
হালিমা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামী মো. সেলিম হোসেন নিজেই পল্লবী থানায় পুলিশের টেম্পো চালান। কিন্তু এখন পুলিশের লোকজন তাঁদের আর চিনছে না।
মো. হাসান মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর-সংলগ্ন শাহ আলী মার্কেটের সুমন ফ্যাশনসের বিক্রয়কর্মী। গত ৭ জানুয়ারি মাগরিবের নামাজ পড়ে দোকানে ফিরে যাওয়ার সময় চার-পাঁচজনের একটি দল তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে স্বজনেরা কাফরুল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরে মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নিশ্চিত হন হাসানকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই দলের একজনকে মার্কেটের দোকানিরা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আনসার আলী বলে শনাক্ত করেন। ওই ফুটেজ মো. হাসানের পরিবার কাফরুল থানায় জমাও দেয়।