মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রতি তরুণদের এখন যে ভালোবাসার অভাব, এর জন্য তরুণদের চেয়ে
বয়সীরাই বেশি দায়ী। আমরা আসলে নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেম, ভাষাপ্রেম
শেখাতে পারিনি।
আমার জন্ম পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে। শৈশবের একটা বড় অংশ কেটেছে সেখানে। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের পূর্বমুহূর্তে ১৯৫০ সালে আমাদের ঢাকায় চলে আসা। শিশু বয়স হলেও ঠিকমতো না বুঝলেও তখন ভাষা আন্দোলনের উত্তাপ টের পেয়েছিলাম। ভাষা আন্দোলন তাই আমার মনে একটি বড় ছাপ ফেলেছে। শ্যামপুরের দিকে ছিল আমাদের বাসা। ভর্তি হয়েছিলাম সে সময়ের সেরা স্কুলে। ঢাকায় এসে ভর্তি হই ষষ্ঠ শ্রেণিতে। মনে আছে, ভাষা আন্দোলনের দিন আমাদের স্কুলের বাইরে খুব হইচই হচ্ছিল। সেদিন কোনো ক্লাস হয়নি আমাদের। স্কুল থেকে একটি ভাষার মিছিল বেরিয়েছিল, আমরাও মনের আনন্দে সেই মিছিলে যোগ দিয়েছিলাম।
আমাদের ছোটবেলায় একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন ছিল খুব আনন্দের ব্যাপার। যদিও দিনটি বেদনার, কিন্তু যেহেতু একুশে ফেব্রুয়ারিতে মিছিল বের হতো, মিছিলে সবার সঙ্গে দেখা ও আড্ডা হতো, ফলে একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের উত্সবের দিনে পরিণত হয়েছিল। প্রতি একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভোর ৪টায় মিছিল হতো। আমরা সেই ভোরে পাড়ার অন্যদের সঙ্গে মিছিলে ছুটে যেতাম খালি পায়ে। একুশে ফেব্রুয়ারির উত্সব আসলে এক রকম বিজয় উত্সব, যেহেতু ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে আমাদের স্বাধীনতারও সূত্রপাত হয়েছিল।
এখন চারদিকে যা হালচাল দেখছি, একুশের মোহ আর নেই আমার। যে চেতনা থেকে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল, সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে বলতে গেলে নানা বাজে কথা বলতে হবে।
মানুষের দেশপ্রেম ও মাতৃভাষার প্রতি এখন টান নেই, এটা খুব দুঃখজনক। এর জন্য আমরা বয়সীরাই দায়ী। আমরা নতুন প্রজন্মকে শেখাতে পারিনি। দেশপ্রেম, মাটি ও ভাষার প্রতি তরুণদের টান তৈরি করতে পারিনি আমরা। দেশপ্রেম ও ভাষা নিয়ে আমাদের ভালোবাসার ঘাটতি রয়েছে। দেশের প্রতি, মাটির প্রতি, মাতৃভাষার প্রতি নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি করাই এখন আমাদের কর্তব্য-এছাড়া একুশের চেতনা ধরে রাখা যাবে না।