জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে জাতীয় সম্প্রচার আইন পাসের জন্য তোলা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মন্ত্রী এ কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিএনপির নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব নির্বাচন ভণ্ডুল ও অস্বাভাবিক সরকার গঠনের ক্ষেত্র তৈরির চক্রান্ত। একটি নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে আরেকটি নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সময় অনির্বাচিত নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব কার্যত নির্বাচনকে ভণ্ডুল করা, অস্বাভাবিক সরকার গঠনের ক্ষেত্র তৈরির চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই না। মূলত খালেদা জিয়া ও বিএনপি মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে দরকষাকষির ক্ষেত্র তৈরি করছে। হাসানুল হক ইনু বলেন, আমরা নির্বাচন নিয়ে অবশ্যই কথা বলবো। তবে নির্বাচন বর্জনের হুমকি এবং দরকষাকষি পাত্তা দেবো না। তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বর্জনের হুমকি, গণতন্ত্রকে জিম্মি করার হুমকি এবং সাধারণ মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করার হুমকি যেটা সহ্য করা হবে না। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এত সমালোচনার পরও জামায়াত ও জঙ্গিদের সঙ্গে বিএনপি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করছে। নির্বাচনের অজুহাতে জঙ্গি দমনের যুদ্ধে একচুলও ছাড় দেয়া হবে না। বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নির্বাচনের আগে জামায়াত-জঙ্গি সম্পৃক্ততা ছাড়বে কিনা।
তথ্যপ্রযুক্তি আইন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, সাইবার ও সম্প্রচার নীতিমালা আইন মানবাধিকারকে সমুন্নত রেখে তৈরি করা হয়েছে। এরপরও যদি এই আইনের কোনো ধারা সাংঘর্ষিক হয় সেটা বাতিল করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে কিছু সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন, বিচারাধীন আছেন। এই আইনের আওতায় যাদের আনা হয়েছে অধিকাংশ ব্যাপারে আমি নিজে হস্তক্ষেপ করেছি। তবে যত হাজার সাংবাদিক এ পেশায় আছেন সেই বিবেচনায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে আপনারা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে সম্প্রচার আইন উত্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে সম্প্রচার কমিশন গঠন হবে। এই কমিশন ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের ছাড়পত্রও বাতিল করতে পারবে। এটা আধা বিচারিক শক্তিশালী সংস্থা হবে। সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড গঠনের জন্য প্রাথমিক কাজ শেষ করা হয়েছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন এই বোর্ডের প্রধান হিসেবে একজন বিচারপতির নাম চাওয়া হয়েছে আইনমন্ত্রীর কাছে। এটা হলেই বোর্ড গঠন হবে। এবারে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমকে ওয়েজবোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার আইনগত নিষ্পত্তি না হওয়াকে ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, অতীতের সামরিক শাসন, সাম্প্রদায়িকতার জঞ্জাল পরিষ্কার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিস্থাপন করে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের কাজ সরকারের ওপর বর্তানোর কারণে কিছু আইন ঢেলে সাজাতে হয়েছে। আইনের দ্বারা একটি ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের পরিচালনা করার প্রয়োজন ছিল। তবে নীতিমালা এবং আইন তৈরির ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ পদ্ধতি অবলম্বন করে সাংবাদিক কর্মীদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হয়েছে। ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানীর পরিচালনায় মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশাও বক্তব্য রাখেন।