চিকিৎসকদের অনভ্যাসে মিলছে না বাংলায় রোগীর ব্যবস্থাপত্র

0
152
Print Friendly, PDF & Email

দেশের বেশিরভাগ মানুষ ইংরেজি না বুঝলেও অধিকাংশ চিকিত্সকই রোগীদের ব্যবস্থাপত্র ইংরেজিতে লেখেন। এতে ইংরেজি না জানা মানুষ বিশেষ করে যে মায়েরা সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতায় সেবা করেন, ওষুধ খাওয়ান তারা চিকিত্সকের ব্যবস্থাপত্র বুঝতে পারেন না। ব্যবস্থাপত্র বুঝতে তাদের অন্য কারও সহায়তা নিতে হয়। এটা তাদের জন্য মানসিকভাবে কষ্টদায়ক। তার চেয়ে বড় বিষয় ইংরেজিতে লেখা ব্যবস্থাপত্রের পরামর্শ ভালোভাবে বুঝতে না পারলে ভুল সেবায় রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।  
চিকিত্সকদের মতে, চিকিত্সাশাস্ত্রে পড়াশোনা ইংরেজি ভাষায় হওয়ার কারণেই তারা ইংরেজিতেই অভ্যস্ত। সেই অভ্যাস থেকেই তারা ব্যবস্থাপত্রও ইংরেজিতে লেখেন। তাই বাংলা ভাষা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ব্যবস্থাপত্র বাংলায় লিখতে চিকিত্সকদের অভ্যস্ত করতে বাংলায় চিকিত্সাশাস্ত্র পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করতে হবে।
স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান সকালের খবরকে বলেন, রোগীদের ব্যবস্থাপত্র বাংলায় লিখতে কোনো বাধা নেই। এটা একটা অভ্যাসের বিষয়। কিন্তু চিকিত্সকরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে অভ্যস্ত। তাছাড়া ইংরেজিতে থাকা ওষুধের নাম বাংলায় লিখলে একই ওষুধের নাম একেকজন চিকিত্সক একেক বানানে লিখবেন। এতে ফার্মাসিস্টরা ও ওষুধ বিক্রেতারা বিভ্রান্ত হবেন এবং রোগীদের ভুল ওষুধ দেওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তবে রোগীদের স্বার্থে তাদের নাম, বয়স, নির্দেশনা ও ওষুধের ব্যবহারবিধি ইত্যাদি বাংলায় লেখা যেতে পারে।
নিজের চিকিত্সক পিতা বাংলায় রোগীদের ব্যবস্থাপত্র লিখতেন জানিয়ে তিনি বলেন, এখন অনেক চিকিত্সক বাংলায় ব্যবস্থাপত্র লিখতে উত্সাহিত হচ্ছেন। এই চিকিত্সকদের চিহ্নিত করে ইতিবাচকভাবে তাদের উপস্থাপন করলে অন্যরাও এ বিষয়ে উত্সাহিত হবেন। এখানে সরকারিভাবে বাধ্যবাধকতা আনা ঠিক হবে না।  
একই কথা জানিয়ে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক এবং ক্যানসার ইপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ইংরেজিতে ব্যবস্থাপত্র লেখার প্রথা চলে আসছে। কারণ চিকিত্সাশাস্ত্রের বই, শিক্ষাক্রম সবই ইংরেজিতে। তবে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে ওষুধের নাম ছাড়া উপদেশ ও পরামর্শসহ সবকিছু বাংলায় লেখা উচিত। তবে এটা সরকার থেকে চাপিয়ে দিলে বেশি দিন টিকবে না। বরং বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা নিয়ে ব্যবস্থাপত্র লিখতে চিকিত্সকদের উত্সাহিত করতে হবে।
তিনি নিজে বাংলায় ব্যবস্থাপত্র লেখেন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে এখন ইংরেজি মিশে গেছে। যেখানে একটি বাংলা গানের অনুষ্ঠানেও ইংরেজি ভাষা মিলিয়ে উপস্থাপন করা হয় সেখানে শুধু একটি দিকে বাংলা ভাষার ব্যবহার আশা করা ঠিক হবে না। তাই ভাষার মর্যাদা রক্ষায় শুধু চিকিত্সকদের ব্যবস্থাপত্রে নয়, সব কাজের ক্ষেত্রেই বাংলা চালু করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিত্ ঘোষ সকালের খবরকে বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ইংরেজি বোঝে না। এ দেশের মানুষ বাংলায় কথা বলেন। কিন্তু চিকিত্সকরা ইংরেজিতে পড়াশোনা করেন এবং পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন। তাই বাংলায় ব্যবস্থাপত্র লেখার বিষয়টি মানসিকভাবেই তাদের মধ্যে নেই। তাছাড়া ওষুধের প্যাকেটের ভেতর যে নির্দেশনা থাকে সেটিও ইংরেজিতেই বেশি দেখা যায়। তাই চিকিত্সাশাস্ত্র যদি বাংলায় হয় তাহলে চিকিত্সকরাও অচিরেই বাংলায় ব্যবস্থাপত্র লিখতে অভ্যস্ত হবেন।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রার ডা. মো. জাহেদুল হক বাসুনিয়া সকালের খবরকে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা রোগীর জন্য সহজবোধ্য করে চিকিত্সকদের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের নাম স্পষ্ট করে বড় হরফে এবং ব্যবহারবিধি বোধগম্য করে লেখার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। কিন্তু বাংলায় ব্যবস্থাপত্র লেখা চিকিত্সকদের জন্য কঠিন। তাছাড়া ওষুধের নাম বাংলায় লিখলে সমস্যা দেখা দেবে। তবে ওষুধের সেবনবিধি, পরামর্শ বাংলায় লিখলে রোগী ও তার স্বজনদের জন্য সুবিধা হবে।

শেয়ার করুন