আখেরে কী সিদ্ধান্ত নেবেন খালেদা জিয়া

0
102
Print Friendly, PDF & Email

বড় দুঃসময় পার করছেন খালেদা জিয়া। এতো দীর্ঘ দুঃসময় তার রাজনৈতিক জীবনে আগে কখনো আসেনি। ভয়ঙ্কর এক দুঃসহ ঘটনার পটভূমিতে বেগম জিয়া রাজনীতিতে এসেছিলেন। হাল ধরেছিলেন দলের। এরপর ক্রমশ রাজপথের রাজনীতিতে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন তিনি। আত্মবিশ্বাস দিয়ে জয় করেছেন নানা সীমাবদ্ধতা। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে চমকে দেন সবাইকে । পরে ২০০১ সালে আবারো জয় পান।
তবে ওয়ান-ইলেভেন খালেদা জিয়ার জন্য যে বিপর্যয় ডেকে নিয়ে এসেছিল আজো তিনি তা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ব্যক্তি এবং রাজনীতি দুই জীবনেই এক দশকের বেশি সময় ধরে দুঃসময় কাটাচ্ছেন তিনি। কবে তার দিন বদলাবে তাও পরিষ্কার নয়। রাজনীতি দিনকে দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে খালেদা জিয়ার জন্য। সামনের দিনগুলো তার কেমন কাটবে- সে প্রশ্নও প্রায়শই উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। কোথায় গন্তব্য তাঁর। আগামী নির্বাচনে কি তিনি অংশ নিবেন। অথবা অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন। কোন্‌ দিকে যাবে বাংলাদেশের রাজনীতি।
বিএনপি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এখনো দু’টি মতই প্রবল। কেউ চান যে কোনো উপায়ে সমঝোতার পথে যান খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য এর কোনো বিকল্প তারা দেখছেন না। অন্যদিকে, আরেকটি মত হচ্ছে, সমঝোতার রাজনীতি আখেরে খালেদা জিয়ার জন্য কোন লাভ বয়ে আনবে না। আর পুরো বিষয়টিই হবে অসম্মানজনক।
গত কয়েকদিন ধরে খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতা, তার উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মত নিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন গঠন, আগামী নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার এইসব ব্যাপারেই মতামত চাওয়া হয়। প্রধানত, দু’টি মতামত আসে। ১. সংগঠন গোছানো ২. ক্রমান্বয়ে আন্দোলনে যাওয়া। তবে হঠাৎই সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় চলে এসেছে খালেদা জিয়ার দু’টি মামলা। জিয়া অরফানেজ এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা। নিম্ন আদালতে মামলা দু’টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে। তিন দিন আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেয়া একটি বক্তব্য নিয়ে চাপান উতোর চলছে রাজনীতির অঙ্গনে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠালে নির্বাচন হবে না। মির্জা ফখরুল এ বক্তব্য কেন দিলেন তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। তবে ক্ষমতাসীনরা পরদিন থেকেই কড়া ভাসায় জবাব দিয়ে আসছেন মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের। দু’টি বিষয় স্পষ্ট করেছেন সরকারি নীতি-নির্ধারকরা। ১. নির্বাচন ঠেকানোর ক্ষমতা বিএনপি’র নেই। ২. অপরাধ প্রমাণ হলে সাজা খালেদা জিয়াকে পেতেই হবে।
দলের চেয়ারপারসনের মামলা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে বিএনপিতে। জরুরি অবস্থার সময় খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সে সময় বিএনপিতে ভাঙন তৈরি হয়েছিল। যদিও সে ভাঙন শেষ পর্যন্ত টেকেনি। কিন্তু সে আঘাত বিএনপিকে অনেকটাই দুর্বল করে দিয়েছিলো। নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি করেছিল অবিশ্বাস। এবারও যদি খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হন তবে বিএনপিতে কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয় তা নিয়ে দলটির ভেতরে নানা দুশ্চিন্তা রয়েছে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক দুই পরিস্থিতিই এখন বিএনপি’র প্রতিকূলে। সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি দলটি। দলীয় চেয়ারপারসনের আশপাশে যারা রয়েছেন তাদের কারো কারো বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। অতীতে বারবার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অথবা ব্যবস্থা নিতে পারেননি বিএনপি’র হাইকমান্ড।
এখন রাজনীতিতে বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে- খালেদা জিয়ার দু’টি মামলা কী সহসাই নিষ্পত্তি হতে চলেছে। এসব মামলায় রায় যদি বিরুদ্ধে যায় বিএনপি চেয়ারপারসন কী গ্রেপ্তার হবেন? এক্ষেত্রে তিনি কী আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন। নানা আলোচনা। পরিস্থিতি কোন্‌দিকে গড়াবে বলা মুশকিল। যদি খালেদা জিয়া অনুপস্থিত থাকেন সেক্ষেত্রে বিএনপিতে বিকল্প নেতৃত্ব নিয়ে এক ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কয়েকজন নেতার নাম এরই মধ্যে আলোচনায় রয়েছে। তবে সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত হবে আগামী নির্বাচন নিয়েই। ২০১৯ সালের নির্বাচনে কোন ফর্মুলায় কিভাবে অংশ নেবে বিএনপি। নাকি আরেকটি বর্জনের পথেই এগুবে দলটি। যেখানেই থাকুন না কেন, আখেরে সে সিদ্ধান্ত খালেদা জিয়াকেই নিতে হবে।

শেয়ার করুন