আট বছরেও শুরু হয়নি ঢাকা ওয়াসার দাসেরকান্দি পয়োশোধনাগার প্রকল্পের নির্মাণকাজ। এখন মাত্র প্রকল্পস্থলের মাটি পরীক্ষা হচ্ছে। ঢাকার জনস্বাস্থ্য ও জনস্বার্থের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর একটি বড় অংশের পয়োবর্জ্য পরিশোধন সম্ভব হবে। আর প্রকল্পটির বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাওয়ায় হাতিরঝিলের পানি দূষণমুক্ত রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকা ওয়াসা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, মার্চের শেষ দিকে প্রকল্পের উদ্বোধন করার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্রমতে, দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে আট বছর আগে নির্মাণকাজ শুরুর প্রস্তাব ছিল। তাতে প্রকল্পে খরচ হতো প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এখন খরচ হচ্ছে চার গুণেরও বেশি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে বুয়েটের পক্ষ থেকে দেশি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ৫০০ কোটি টাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব বলে বলা হয়েছিল। পরে ডিপিপি হয় ৪২৫ কোটি টাকায়, কিন্তু তা অনুসরণ করা হয়নি। বর্তমানে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকায়। শুরুতে কথা ছিল ১০০ একর জমিতে শোধনাগার হবে। কিন্তু সময়মতো জমি অধিগ্রহণ না করায় এখন ৬০ একরে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে।
আফতাবনগরের প্রান্তসীমায় প্রকল্প এলাকায় জেলা প্রশাসনের জমি অধিগ্রহণের পর সম্প্রতি ওয়াসা বুঝে নিয়েছে। অর্থের জোগান পেতে দেরি হওয়াও প্রকল্পের কাজ শুরুর ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল। গত বছরের ২৬ অক্টোবর চীনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ঋণচুক্তি সই হয়। এর আগে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন করে।
প্রকল্প পরিচালক ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মহসীন আলী মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসা জমি বুঝে পেয়েছে। এখন ঠিকাদার কোম্পানি নকশা অনুযায়ী প্রকল্প এলাকার মাটি পরীক্ষা করছে। পরীক্ষা শেষ হলে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরই প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে। নির্মাণ শুরুর ৩৬ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা।
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, শুরুতে যতই প্রকল্প ব্যয় ধরা হোক না কেন, এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বুয়েটের পরামর্শমতো তা কমিয়ে এখন ২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ সম্ভব হয়েছে। তবে প্রকল্প এলাকা ৬০ একরের মধ্যে রয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন লিটার পয়োবর্জ্য শোধন সম্ভব হবে। অন্যদিকে ঢাকার পয়োবর্জ্যের একটি মাত্র শোধনাগার পাগলা শোধনাগারে প্রতিদিন ১২০ মিলিয়ন লিটার শোধন সম্ভব। তবে পাগলা শোধনাগারের সেই ক্ষমতা অনেক কমেছে। গতকাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বনশ্রী আফতাবনগরের প্রান্তসীমা থেকে প্রায় ১ হাজার ফুট দূরে এই প্রকল্পের অবস্থান। কোনো ধরনের স্থাপনা নেই। অসমতল মাঠ আর মাঠ। সেখানে বেশির ভাগ অংশই বিল ছিল বলে আফতাবনগরের কয়েকজন বাসিন্দা জানান।
পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাসহ রাজধানীর কিছু অংশের পয়োবর্জ্য পরিশোধন সম্ভব হবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে। বর্তমানে হাতিরঝিলে দূষণ বেড়ে যাওয়ার জন্য প্রধানত দায়ী ঢাকা ওয়াসার দাসেরকান্দি পয়োশোধনাগার নির্মাণ না হওয়া। হাতিরঝিলের মূল নকশায়ও নির্ধারিত ছিল দাসেরকান্দিতে একটি শোধনাগার থাকবে। ২০০৯ সালে হাতিরঝিলের কাজ শুরুর আগেই দাসেরকান্দি শোধনাগার নির্মাণকাজ শুরুর কথা ছিল। সোইকো ইন্টারন্যাশনাল নামের এক সুইডিশ কোম্পানি আগেই দাসেরকান্দিতে এটা নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে রেখেছিল।