‘ব্যাঙ্ক’ শব্দটার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। কারণ আমরা আনাদের টাকা পয়সা নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংকে জমা রাখি। এছাড়া আই ব্যাংক, ব্লাড ব্যাংকের কথাও জানি, সেটাও অবশ্য আরেক ধরনের ব্যাংক। কিন্তু আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব ক্রোক ব্যাংকের সঙ্গে।
ক্রোকোডাইল (কুমির) শব্দটাই সংক্ষেপে হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রোক। ৮.৮ একর জমির ওপর ২ হাজার সরীসৃপ থাকে এই ক্রোক ব্যাঙ্কে। কুমিরই তো আছে প্রায় ১৭টি প্রজাতির। নানা রকমের সরীসৃপের মধ্যে আছে গোসাপ, সাপ, ইগুয়ানা, কোমোডো ড্রাগন, গিরগিটিও। সংক্ষেপে ক্রোক ব্যাংক নামে পরিচিত হলেও পুরো নাম মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ব্যাংক ট্রাস্ট।
শুনে চিড়িয়াখানার মতো মনে হচ্ছে হয়ত। তবে চিড়িয়াখানার সঙ্গে এর পার্থক্য আছে। আর সেটি হল এটা নিছকই দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য তৈরি করা হয়নি। এর লক্ষ্য সরীসৃপদের সংরক্ষণ, তাদের পরিকল্পিত প্রজননের মাধ্যমে সংখ্যা বৃদ্ধি করে প্রকৃতির সন্তানদের প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া।
বিস্তারিতভাবে বললে, সত্তরের দশকে খুব বেড়ে যায় কুমিরের চোরাচালান। সে জন্য ভারতে কুমির শিকার চলেছিল ব্যাপক ভাবে। এর ফলে কুমিরের সংখ্যা বিপজ্জনক হারে কমতে থাকে। এই সরীসৃপটির বিলুপ্তির আশঙ্কা তৈরি হয়। কুমির রক্ষায় ১৯৭৩ সালে প্রথম ভাবনা জাগে সংরক্ষণের। ১৯৭৬ সালের আগস্টে সরীসৃপদের জেনেটিক ব্যাঙ্ক হিসেবে চেন্নাই থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গড়ে উঠল ক্রোক ব্যাংক।
ভারতীয় কুমিরদের এই আবাসস্থল তৈরি করেন রোমুলাস হুইটেকার ও জাই হুইটেকার। এই দম্পতি ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও রাষ্ট্রপুঞ্জের সহযোগিতায় কুমির সংরক্ষণ কেন্দ্রটি তৈরি করেন তামিলনাড়ুর ভাদানেম্মালি এলাকায়। প্রতি বছর বহু পর্যটক এই কেন্দ্রটি দেখতে আসেন। এই সংখ্যা ৪ লক্ষ ছুঁই ছুঁই। বেশি ভিড় হয় জানুয়ারিতে। শুধু কুমির নয়, ঘড়িয়াল থেকে কচ্ছপ, নানা প্রজাতির সরীসৃপের দেখা মেলে এখানে।
এই ব্যাংকে জন্ম নেওয়ার পর হাজার হাজার কুমিরকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে এই সরীসৃপের বিলুপ্তির আশঙ্কা দূর করা গিয়েছে। শুধু কুমির নয়, বিলুপ্তপ্রায় সরীসৃপের বিভিন্ন প্রজাতি, পাহাড়ি অজগর বা কিং কোবরার প্রজনন হচ্ছে রোমু ও জাই প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রে। বিরাট এলাকা জুড়ে সবুজের ছড়াছড়ি, তার মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা ধরনের জলচর প্রাণীরা, দেখতে আপনাদেরও ভাল লাগবে বৈকি।