মিষ্টির বাজারে অরাজকতা

0
128
Print Friendly, PDF & Email

মিষ্টি ও দুগ্ধজাত পণ্য বাজারজাত করার কোনো নিয়মনীতি না থাকায় বাজারে মিষ্টির মূল্যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো মূল্যে মিষ্টি বিক্রি করছেন। একই উপাদান দিয়ে তৈরি মিষ্টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। নামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে মিষ্টির মূল্যও কম-বেশি হচ্ছে। ফলে মিষ্টির ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। যে হারে ব্যবসায়ীরা মিষ্টির দাম বাড়াচ্ছেন সেই হারে এর কাঁচামালের দাম বাড়েনি। নরমাল দোকানে যে মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে, বনফুল, মধুবন, ফুলকলি ব্র্যান্ডের দোকানে সেসব মিষ্টি বিক্রি করা হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বিক্রয়কর্মী মো. মানিক হোসেন জানান, রসগোল্লা ২২০ টাকা, লালমোহন ২২০ টাকা, কালোজাম ২২০ টাকা, মালাইকারি ৪৫০ টাকা, কাঁচাগোল্লা ৪০০ টাকা, পাতাচমচম ৪৫০ টাকা, ল্যান্সা সাদা ও লাল ৩৫০ টাকা, ক্রিম টোস্ট
 ৪৫০ টাকা, ক্ষির টোস্ট ৪৫০ টাকা, স্পেশাল চমচম ৩৫০ টাকা, পেস্ট্রি চমচম ৭২০ টাকা, ক্রিমজাম ৪৫০ টাকা, জেলিপেরা ৪৫০ টাকা, টপি ৩৮০ টাকা, সন্দেশ ৪৫০ টাকা, রসকদম ৪০০ টাকা, বালুসাই ২৪০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি করছেন। তার ঠিক পাশেই ভাগ্যকূল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের এক বিক্রয়কর্মী জানান, আমরা তো পাশের দোকানের চেয়ে কিছু কম টাকায় বিক্রি করি। কারণ, এখন তো প্রতিযোগিতার মার্কেট। টিকে থাকতে হলে একটু কমবেশি করে বিক্রি করতে হবে। অন্য দোকানের চেয়ে অন্তত ২০ থেকে ৫০ টাকা কমে বিক্রি না করলে আমাদের দোকানে ক্রেতারা আসবেন না। বনফুলের খিলগাঁও ব্রাঞ্চের ম্যানেজার হাবিব জানান, ঢাকায় আমাদের দাম একটু বেশি নিতে হয়। কারণ, এখানে দোকান ভাড়া বেশি। কর্মচারীদের বাসা ভাড়া, খাওয়ার খরচ যখন বাড়ে তখন মালিকরা মিষ্টির দামও বাড়ায়। সিলেট চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জায়গায় বনফুলের মিষ্টির দাম অন্তত ২০ থেকে ৩০ টাকা ব্যবধানে বিক্রি করা হয়। তবে ঢাকায় আমাদের মানের মিষ্টি  অন্য জায়গায় আরো বেশি দামে বিক্রি হয়। তিনি বলেন, আমরা রসগোল্লা, লালমোহন ও কালোজাম ২৫০ টাকা, বালুসাই ২৬০ টাকা, ক্রিমজাম ৩৮০ টাকা, জেলিপেরা ৩৬০ টাকা, কাঁচাগোল্লা ৪৫০ টাকা, ক্ষির টোস্ট ৪৫০ টাকা, ট্রপি ৩৬০ টাকা, চমচম ৩৭০ টাকা, কাটারিভোগ ৪৩০ টাকা, মতি লাড্ডু ২৫০ টাকায় বিক্রি করি। একই নামের ও দামের মিষ্টি ফুলকলিতে বিক্রি হচ্ছে আরো কম দামে। এখানে রসগোল্লা, লালমোহন, কালোজাম ২৪০ টাকা, ক্রিমজাম ৩৫০ টাকা, ক্রিম চমচম ৪৩০ টাকা, মতি লাড্ডু ২৪০ টাকা, কাঁচাগোল্লা ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার মধুবনে কাঁচাগোল্লা ৪৯০ টাকা, চমচম ৪০০ টাকা, বালুসাই ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন মিষ্টির শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, একই মানের মিষ্টি স্থানভেদে ও ব্র্যান্ডভেদে ভিন্ন মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। নগরীর মূল সড়কের পাশে থাকে দোকানে মিষ্টির দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। আবার বিভিন্ন পাড়ার ভিতরে একই মানের মিষ্টির মূল্য অন্তত ২০-৩০ টাকা কম নেয়া হয়। একাধিক বিক্রয় কর্মীর সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, মেইন রোডের পাশে দোকান নিতে হলে অগ্রিম অনেক টাকা জমা দিতে হয়। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন বেশি দিতে হয়। এমনকি কর্মচারীও বেশি রাখতে হয়। সব মিলিয়ে একটু বেশি দামে বিক্রি না করলে সব খরচ মিটিয়ে লাভ করা সম্ভব না বলে দাবি করেন এসব বিক্রয়কর্মী।
এদিকে মিষ্টি উৎপাদনের কাঁচামাল চিনি, দুধ, ময়দাসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যে গত কয়েক বছরে আশঙ্কাজনক কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মেসার্স সালাম ডেইরি ফার্ম অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টের স্বত্বাধিকারী আলহাজ আবদুস সালাম বলেন, যারা বেশি বেশি প্রচার করে তারা মিষ্টির দামও বেশি নেয়। অনেকেই গুঁড়াদুধ দিয়ে মিষ্টি তৈরি করেন। কিন্তু আমি আমার নিজস্ব ডেইরি ফার্মের তরল দুধ দিয়ে তৈরি মিষ্টি অনেক কমে বিক্রি করি। এই মিষ্টি অনেক ভালো মানের। তারপরও প্রচার না থাকায় অন্যদের চেয়ে কম বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মিষ্টি উৎপাদনকারী সমিতির সভাপতি ও মুসলিম সুইটসের মালিক মোহাম্মদ আলী বলেন, কোয়ালিটি যাদের ভালো তারাই বেশি মূল্যে মিষ্টি বিক্রি করছে। তবে ঢাকায় খরচ বেশি হয় বলে দামও বেশি নেয়া হয়।

শেয়ার করুন