ধর্ষণ যেখানে নিত্য ঘটনা

0
100
Print Friendly, PDF & Email

সোমালিল্যান্ডে অহরহ ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন নারীরা। এর ফলে ঘটছে গর্ভপাত। তীব্র খরার কারণে হাজার হাজার মানুষ পূর্ব সোমালিল্যান্ড থেকে দেশটিতে হারগেসিয়ার ম্যাক্সামড মুজে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিচ্ছে। সেখানেই ঘটছে এ ঘটনা। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এতে ২৩ বছর বয়সী হোদান আহমেদান বলেছেন, দু’দিন আগে চারজন পুরুষ গিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে। এরপরই তারা তাকে ধর্ষণ করতে শুরু করে। তার ভাষায়, ওই শিবিরের বেশির ভাগ নারী, যুবতী ও কন্যাশিশু নরপিশাচদের হাতে ধর্ষিত হয়েছেন। ওই এলাকায় এমন ঘটনা চোখ খুললেই দেখা যায়। সেখানে নেই পুলিশের উপস্থিতি। নেই পর্যান্ত আলো। নেই পয়ঃনিষ্কাশনের সুবিধা। নারীদের সংখ্যা সেখানে বেশি। তাই প্রতিনিয়ত এসব নারী ধর্ষিত হচ্ছেন। হোদান আহমেদান বলেছেন, সেখানকার মাটি এতটাই শক্ত যে একটি টয়লেট বানানোর জন্য তারা মাটি খুঁড়তে পারেন না। এর অর্থ হলো প্রকৃতির ডাকে তাদেরকে বাইরে যেতে হয়। সেখানে কোনো প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা নেই। তাই যখন রাতের অন্ধকার নামে তখনই নারীরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বের হন। কিন্তু এ সময়ে বাইরে অনেক গ্যাং থাকে। তারা বিপদজনক। এমনই এক পরিস্থিতিতে ধর্ষিত হয়েছেন হোদান আহমেদান। ওই শিবিরের সবচেয়ে বয়সী সাহরা হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের ওপর এমন ঘটনা ঘটছে। সব সময়ই এমন ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, সোমালিল্যান্ড হলো এমন একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত রাজ্য, যার রয়েছে সায়ত্তশাসন। এটি সোমালিয়া থেকে বেরিয়ে সৃষ্ট একটি রাজ্য। জলবায়ুর ভয়াবহ পরিবর্তন এল নিনোর কারণে সোমালিল্যান্ডে সৃষ্টি হয়েছে প্রচন্ড খরা। এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে হাজার হাজার পরিবার। সেখানে বাতাস দুর্বল। রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ধেয়ে আসা উষ্ণ জলীয় বাষ্প। এসবই সেখানকার জনজীবনকে দুর্বিষহ করে দিয়েছে। আমেরিকান মেটেওরোলজিক্যাল সোসাইটিতে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, জলবায়ুর এই পরিবর্তন আরও কঠিন রূপ ধারণ করবে। সোমালিল্যান্ডের রাজধানী হারগেসিয়া। জলবায়ুর পরিবর্তনে অতিষ্ঠ মানুষের প্রধান আকর্ষণ হয়ে পড়েছে সেই হারগেশিয়া। শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘ হাই কমিশনারের তথ্যমতে, কমপক্ষে ৮৫ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ সেখানে ঠাই নিয়েছে। কিন্তু সেখানে জীবন যতটুকু স্বাচ্ছন্দময় হবে বলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন শরণার্থীরা পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ। বিশেষ করে নারী শরণার্থীদের অবস্থা আরও শোচনীয়। পুরুষরা ছোটখাট কাজ খুঁজে নিলেও নারীরা রয়েছেন বিপন্ন। তীব্র খরা, যৌন নির্যাতন, পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবÑ এসবই যেন খরার অভিশাপ হিসেবে নেমে এসেছে তাদের ওপর। তিন সন্তানের মা আমিনা আবদুল হোসেন বলেন, আমি দু’মাস আগে হারগেষিয়ায় এসেছি। খরায় আমার সব পশু মারা গেছে। পানির সঙ্কট আমাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে। এখানে আসার আগে আমার একটি সন্তান প্রসব হয়। কিন্তু পানি না থাকায় সেই শিশুটিকে হারাই আমি। আমি ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। বন্ধ হচ্ছিল না রক্তপাত। শিবিরে আশ্রয় নেয়া অনেক নারী বলেছেন, খরার কারণে তাদের গর্ভপাত হয়েছে। গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল চেঞ্জের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বৃষ্টিপাতের অভাব, অত্যধিক গরমের কারণে সেখানে জন্মহার কমে গেছে।

শেয়ার করুন