বৃহস্পতিবার অনির্ধারিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমালোচকদের একহাত নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তবে তার রোষানলে বেশি পুড়েছেন ওই সাংবাদিকরা! অভিযোগের সুরে তিনি বলেছেন, আগের প্রশাসন তার জন্য বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি রেখে গেছে। পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে তার প্রচার শিবিরের লোকজন যোগাযোগের মধ্যে ছিল- এমন সংবাদ প্রতিবেদনকে ‘ভুয়া সংবাদ’ (ফেক নিউজ) বলে উড়িয়ে দেন। সিএনএনের খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের এ সংবাদ সম্মেলন তার লেভেলকেও অতিক্রম করেছে।
খবরে বলা হয়, সংবাদ সম্মেলন চলাকালে উপস্থিত ছিলেন তার শিবিরের লোকজন, যারা ক্ষণে ক্ষণে তার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে উল্লাস প্রকাশ করেছে। ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন সব কথা বলেছেন, যা আমেরিকার আধুনিক রাজনৈতিক ইতিহাসে খুবই ব্যতিক্রম। তার কথায়, রাগ যেন ঠিকরে বের হচ্ছিল। প্রকাশ্যে কোনো প্রেসিডেন্ট খুব কমই এমনটা দেখিয়েছেন। আর মাত্র ৪ সপ্তাহ ক্ষমতায় থাকা কারও বেলায় এমনটা প্রায় নজিরবিহীন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক মিডিয়ার চেয়ে বেশি অসৎ মিডিয়া আর দেখিনি।’ এরপরই তিনি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে গণমাধ্যমে লিক হতে থাকা খবরাখবর নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। প্রসঙ্গত, এমনই একটি তথ্য ফাঁসের ফলে ক’দিন আগে পদত্যাগ করতে হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনকে। কিন্তু তিনি সব খবরকে ফেক হিসেবে উড়িয়ে দেয়ায় এ নিয়ে তাকে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। তিনি বলেন, ‘লিক যে হচ্ছে, তা সত্য। এসব লিক পুরোপুরি সত্য। কিন্তু সংবাদ মিথ্যা। কারণ, খবরের বেশিরভাগই মিথ্যা।’ কোনো প্রেসিডেন্টের সংবাদ সম্মেলনের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করলে এটি ব্যতিক্রমী নিঃসন্দেহে। কিন্তু ট্রাম্প ছিলেন তার চিরচেনারূপেই। তিনি জনমত জরিপে নিজের সমর্থনের কথা গর্ব নিয়ে বলেছেন, হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী জয়ের কথা বলেছেন। এমনকি ক্যাবল নিউজের রেটিং ও প্যানেল ডিসকাশন নিয়েও কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি আমার বার্তা সোজা মানুষের কাছে পৌঁছাতে। আপনারা জানেন, আমাদের প্রশাসন সরকার ও অর্থনীতিতে পূর্বের প্রশাসনের রেখে যাওয়া অনেক সমস্যা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। সত্য বলতে গেলে, আমি এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি পেয়েছি। এটা বেশ বিশৃঙ্খল। ঘরে বাইরে, একেবারে বিশৃঙ্খল।’
মূলত, এ ধরনের কথাবার্তাই ট্রাম্পকে নির্বাচনে জয় পেতে সাহায্য করেছে। ওয়াশিংটনের পলিটিক্যাল এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে তিনি সোজাসাপ্টা এ ধরনের কথা বলেছেন। ফলে অনেক ভোটার এতে কাবু হয়েছে। কিন্তু অন্য ভোটারদের উদ্বেগ কমানোর কোনো চেষ্টা তার আচরণে দেখা যায়নি। ট্রাম্প এমনকি সংবাদ সম্মেলনেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, কিভাবে তার এই ব্যতিক্রমী সংবাদ সম্মেলন গণমাধ্যমে উঠে আসবে। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল, তারা বলবেন: ডনাল্ড ট্রাম্প গণমাধ্যমের সামনে গলাবাজি করেছেন, চিৎকার চেঁচামেচি করেছেন। কিন্তু আমি চেঁচাচ্ছি না। আমি স্রেফ আপনাদের বলছি। আপনারা জানেন, আপনারা হলেন অসৎ লোক। কিন্তু আমি চেঁচাচ্ছি না। আমি এটা পছন্দ করি। এসব করে আমি ভালো সময় কাটাই।’
বক্তৃতার শুরুর দিকে ট্রাম্প শ্রমমন্ত্রী পদে তার নতুন মনোনীত ব্যক্তির নাম ঘোষণা করেন। আগের মনোনীত ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণে অনীহা দেখানোয় নতুন আরেকজনকে মনোনীত করেছেন তিনি। এরপর তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি আমেরিকান জনগণকে জানাতে যে কী পরিমাণ অগ্রগতি আমরা এই ৪ সপ্তাহে করেছি। আমরা অসাধারণ অগ্রগতি করেছি। আমি মনে করি না এমন কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, এর আগে যিনি এই স্বল্প সময়ে এত কিছু করেছেন, যতটা আমরা করেছি।’ কিন্তু তার হোয়াইট হাউসে রীতিমতো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, এমন সংবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘এই প্রশাসন চলছে ঠিকভাবে, ঠিকঠাক করা একটি মেশিনের মতো।’