শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি বারাকা পাওয়ারের শেয়ারের দামে হঠাৎ করেই আবার বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা দিয়েছে। আর আর্থিক খাতের কোম্পানি লংকাবাংলা ফিন্যান্সের শেয়ারের দামেও দেখা যাচ্ছে দ্রুতগতির দৌড়।
গত দুদিনে বারাকা পাওয়ারের প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩ টাকা ৬০ পয়সা এবং লংকাবাংলার প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪ টাকার বেশি বেড়েছে। লংকাবাংলার শেয়ারের হঠাৎ দাম বাড়ার পেছনে লভ্যাংশ ঘোষণার প্রভাব থাকলেও বারাকা পাওয়ারের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনেও ছিল উল্লিখিত কোম্পানি দুটির আধিপত্য। এর মধ্যে ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল বারাকা পাওয়ার আর দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল লংকাবাংলা। আবার মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে গতকাল শীর্ষে ছিল লংকাবাংলা আর সপ্তম অবস্থানে ছিল বারাকা পাওয়ার।
লংকাবাংলার প্রতিটি শেয়ারের দাম গতকাল দিন শেষে পৌনে ৮ শতাংশ বা ৪ টাকা ১০ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ টাকায়। গত চার দিনে এ শেয়ারটির দাম বেড়েছে প্রায় ৭ টাকা। ১২ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৫০ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ারের একটানা মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পক্ষ থেকে চিঠিও দেওয়া হয়। তার জবাবে ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার মতো অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য তাদের জানা নেই।
এমন পরিস্থিতিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভা থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। সেই খবর ১৪ ফেব্রুয়ারি স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হলে কোম্পানিটির মূল্যবৃদ্ধির পালে আরও হাওয়া লাগে। সেই হাওয়ার বেগে গতকাল দিন শেষে এটির শেয়ারের দাম গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
চলতি মাসের শুরু থেকে বারাকা পাওয়ারের শেয়ারের দামে যেন বিদ্যুৎগতি ভর করেছে। ২ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৪২ টাকা ৪০ পয়সায়। গতকাল দিন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ টাকা ৪০ পয়সায়। অর্থাৎ ১০ কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭ টাকা। এর মধ্যে গতকাল এক দিনেই প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ২ টাকা বা সোয়া ৪ শতাংশ বেড়েছে।
ঢাকার বাজারে গতকাল বারাকা পাওয়ার ও লংকাবাংলার সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১২৭ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় ১২ শতাংশ। এর মধ্যে বারাকা পাওয়ারের একক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬৯ কোটি আর লংকাবাংলার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫৮ কোটি টাকা।
এদিকে সূচক ও লেনদেনের ঊর্ধ্বগতি দিয়েই দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সপ্তাহের লেনদেন শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৯১ পয়েন্টে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি ২১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩০৯ পয়েন্টে।
ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৯ কোটি টাকা বেশি। সিএসইতে এদিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা বেশি।
মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি গতকাল বাজারকে ইতিবাচক ধারায় ধরে রেখেছে। এদিন ঢাকার বাজারে খাতভিত্তিক লেনদেনে আধিপত্য ছিল প্রকৌশল খাতের। ডিএসইর মোট লেনদেনের সাড়ে ১৫ শতাংশই ছিল প্রকৌশল খাতের। আর মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষে ছিল আর্থিক খাত। এ খাতের লেনদেন হওয়া প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের দাম গড়ে প্রায় ২ শতাংশ করে বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল লেনদেনে আর্থিক খাতের ২৩ কোম্পানির মধ্যে ১৯টিরই দাম বেড়েছে।