প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর পেছাচ্ছে তিস্তায়

0
180
Print Friendly, PDF & Email

তিস্তা বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের মতৈক্য না হওয়ার কারণেই পিছিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তিস্তা চুক্তি নিয়ে জটিলতা শিগগিরই কেটে যাবার আশা করলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা চুক্তিতে নারাজ তা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন দিল্লিকে। ভারত সরকারের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দেশটির বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফর আরো কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে। এ ছাড়া তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোনো ধরনের নির্দেশনা নেই যৌথ নদী কমিশনেও। সব মিলিয়ে তিস্তার কারণেই যে পিছিয়ে যাচ্ছে ভারত সফর এমনটাই জানাচ্ছে ক‚টনৈতিক সূত্রগুলো।

ক‚টনৈতিক সূত্রে আরো জানা গেছে, আসন্ন ভারত সফর নিয়ে আলোচনা হলেও প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিতে এখন পর্যন্ত বিষয়টি যুক্ত হয়নি। এরমধ্যে ১ ফেব্রুয়ারি তিন দিনের সফরে ঢাকা আসছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আব্বাস। তার সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সূচি আছে। সূত্র আরো জানায়, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধ থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর অন্তত তিনটি বিদেশ সফর আছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তাবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন, মার্চের প্রথম সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় ভারত মহাসাগরীয় জোট আইওরার প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সেখানে দিল্লি সফরের কোনো সূচি নেই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে পূর্বশর্তের কারণে ভারতের প্রশাসন খুব একটা গা করেনি। বাংলাদেশের প্রধান ইস্যুটি খুব বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেনি তাদের কাছে। কিন্তু তিস্তা ইস্যুটি পাশে রেখে আলোচনায় বসতে আগ্রহী নয় বাংলাদেশ সরকার। এ কারণে এখনো প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করা যায়নি। বিভিন্ন ক‚টনৈতিক সূত্র প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর পেছানোর বিষয় উল্লেখ করেছে। সেগুলোর মধ্যে আছে, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ভারতের উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, মণিপুর, গোয়াসহ মোট পাঁচটি প্রদেশে নির্বাচন। সে সময় নির্বাচন নিয়ে দেশটির সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যস্ততা অনেক বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় বিদেশের কোনো সরকার প্রধানের সফরের দিন নির্ধারণ করা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য সফরের ক্ষেত্রেও এমনটি হতে পারে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের প্রাণের দাবি তিস্তার পানি চুক্তি। কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টনে নয়াদিল্লির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সমঝোতার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নয়াদিল্লি কিছুটা রাজি হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতিবাচক অবস্থানের কারণে চুক্তিটি সম্পাদন হচ্ছে না। মূলত তার আপত্তির কারণেই তিস্তা চুক্তি আটকে আছে। তবে, দিল্লি তিস্তা চুক্তি ইস্যুতে ঢাকার সঙ্গে সমঝোতায় আসতে সম্মত আছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আড়াই বছরপূর্তি উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এম জে আকবর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা আছে। আমরা এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ ঐকমত্যের চেষ্টা চালাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের মতৈক্যে থাকলেও শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। এ ছাড়াও ফেব্রুয়ারি ও মার্চে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার কারণে সফর পিছিয়ে নিচ্ছে ভারত। দুই পক্ষ সময়ের জটিলতা ও স্থানীয় নির্বাচনকে প্রধান কারণ হিসেবে বললেও ডিসেম্বরের মতো এখনো তিস্তা নিয়ে অনিশ্চয়তাই সফর পেছানোতে বড় প্রভাবক হয়ে থাকছে বলেই মনে করছে সূত্রগুলো।

এর আগে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের কথা থাকলেও সে সময় তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার মৃত্যু এবং চলমান সংকটের কারণে সফর স্থগিত করা হয় বলে পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়েছিল। সেখানে আরো বলা হয়, সেই সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে পড়ায় কার্যত সব থেমে যায়। কিন্তু এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের কথা ছিল। তবে কিন্তু দিনক্ষণ নির্ধারণ করতে না পারায় সফরটি পিছিয়ে যায়।

এর আগে ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের গোয়ায় গেলে সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তির ব্যাপারে জোর দেন। বৈঠকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে জটিলতা শিগগিরই কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন মোদি।

শেয়ার করুন